বাজারে, অলি-গলিতে ভিড়

কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন।। স্বাস্থ্যবিধি নেই, মাস্কও নেই অনেকের মুখে।। কর্মস্থলে যেতে শ্রমিকদের ভোগান্তি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে কোথাও দেখা গেছে ঢিলেঢালা ভাব, আবার কোথাও মানা হচ্ছে কঠোরভাবে। গতকাল শনিবার নগরীর মূল সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা থাকলেও ভিড় দেখা গেছে বাজার ও অলি-গলির দোকানগুলোয়। এতে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। অনেকে মাস্ক পরছেন না। আবার কেউ কেউ পরলেও যথাযথভাবে পরছেন না। সেই সঙ্গে গলিতে জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা তো নেই-ই। এসব গলিতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়নি।
দিনের প্রথম ভাগে মানুষ ঘর থেকে কম বের হলেও বিকালের দিকে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর অনেক অলি-গলির চিত্র দেখে বোঝার উপায় ছিল না কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতেও দেখা যায়নি বিধিনিষেধ ভেঙে রাস্তায় বের হওয়া অধিকাংশ মানুষকে।
এদিকে কঠোর লকডাউনেও পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কলকারখানা খোলা থাকায় কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়েন শ্রমিকরা। বেশিরভাগ কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা করেনি।
নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসি, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, কাস্টম মোড়, ইপিজেড, পতেঙ্গা, টাইগারপাস, কদমতলী, ফিশারিঘাট, নিউ মার্কেট এলাকার রাস্তাঘাটে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত যেন ভিন্ন এক জগৎ। সেখানে কঠোর লকডাউন, বিধিনিষেধ এসবের চিহ্নমাত্র নেই। বিকেল হলেই বাড়ছে জনসমাগম, অবাধে চলছে আনন্দ বিনোদন, খেলাধুলার জমজমাট আসর। নেই কোনো অভিযান, তদারকি।
মূল সড়ক অনেকটা ফাঁকা থাকলেও পাড়া-মহল্লার ছবি ছিল একেবারেই উল্টো। অলি-গলিতে জমেছিল চায়ের কাপের আড্ডা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কাঁচাবাজারে ছিল মানুষের ঠাসাঠাসি। মাছের বাজার করছিল গমগম। জনস্বার্থে কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। অনেক সচেতন ক্রেতা বাজারে মাস্ক পরে গেলেও তাদের অভিযোগ, বিক্রেতাদের বেশিরভাগই ছিলেন মাস্ক ছাড়া। বাজারে ক্রেতাদের অনেককেও মাস্ক ছাড়া গাদাগাদি করে ঘুরতে দেখা গেছে।
নগরীর মূল সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও চলতে দেখা গেছে রিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন। উৎসুক লোকজনের দেখা মিলছে। আবার কেউ অফিস, কেউ বাজারে, কেউবা হাসপাতালে যাচ্ছেন। এতে রাস্তাঘাটে জনসমাগম দেখা গেছে। কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হলেও অনেককে দেখা গেছে তা অমান্য করতে। যার ফলে লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা কঠোরভাবে মানা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বেশিরভাগ মানুষই অপ্রয়োজনে বের হচ্ছেন, কেউবা বের হয়েছেন ফাঁকা রাস্তা দেখতে। আবার অনেকে বাইক নিয়েও ফাঁকা রাস্তায় ঘুরতে বের হচ্ছেন। তবে প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তাদের আমরা বাধা দিচ্ছি না।
গতকাল নগরীর প্রবেশদ্বার সিটি গেট চেকপোস্টে যৌথ তল্লাশি অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ। অভিযানকালে সড়কে চলাচলকারী কিছু কিছু প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল ও রিকশা যাত্রীকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের আরো দায়িত্বশীল আচরণের নির্দেশ দেন।
তিনি আজাদীকে বলেন, কঠোর লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে যে সকল গার্মেন্টস, কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে ওইসব প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে গাড়ির ব্যবস্থা করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান ও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আমরা সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে চাই।
প্রসঙ্গত, সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে মাঠে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই দিন ভোর থেকেই বন্ধ করা হয়েছে নগরীর সব প্রবেশ পথ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি ও পথচারীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন তারা। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার ভোর থেকে মাঠে কাজ করছে।
সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ প্রতিপালনে ব্যর্থতার অভিযোগে জেলা প্রশাসনের ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গতকাল নগরজুড়ে ৪৫টি মামলায় ২৩ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। এদের মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিবেদিতা চাকমা নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় ৫টি মামলায় ১৮০০ টাকা, কাজির দেউড়ি এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হাসান ৭টি মামলায় ১০৫০ টাকা, খুলশী ও বায়েজিদ এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইনামুল হাসান ২টি মামলায় ১০০০ টাকা, পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদ ৪টি মামলায় ২৭০০ টাকা, সদরঘাট ও কোতোয়ালী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিব হোসেন ৫টি মামলায় ১৬০০ টাকা, পাহাড়তলী ও আকবরশাহ এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন ৬টি মামলায় ৩০০০ টাকা, চান্দগাঁও এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস ৭টি মামলায় ৭৮০০ টাকা, হালিশহর এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত ৫টি মামলায় ২৭০০ টাকা এবং ডবলমুরিং এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া হক ৪টি মামলায় ২১০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে এলো ৪৫ লাখ টিকা
পরবর্তী নিবন্ধস্কুল খুলে ছেলে মেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব