স্কুল খুলে ছেলে মেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব

প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর, স্বাস্থ্যবিধি পালনে উপেক্ষা দেখে হতাশা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি যারা তুলছেন, তাদের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নাকচ করে তিনি বলেছেন, টিকা দেওয়ার পরই খোলার চিন্তা করবে সরকার।
কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। মাঝে পরিস্থিতির উন্নতিতে গত মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা হলেও তা ভেস্তে গেছে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে। এখন প্রতিদিনই শতাধিক মৃত্যু ও ৮ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের মধ্যেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।
গতকাল শনিবার সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরও একই দাবি তোলার পর তার জবাব দেন সরকার প্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, এখানে স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে কথা উঠেছে। কিন্তু যাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বা সন্তানরা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যায়, সেই বাবা-মা কিন্তু চান না তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে। খবর বিডিনিউজের।
এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা মানেই শিশুদের ঝুঁকিতে ঠেলা দেওয়া মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা জেনে-শুনে লেখাপড়ার জন্য তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কিনা, আমার মাননীয় সংসদ উপনেতা (বিরোধী উপনেতা) সেটা একটু বিবেচনা করবেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যেন বন্ধ না থাকে সেজন্য সংসদ টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইনের মাধ্যমেও পাঠদানের কথা বলেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা দিয়ে পরেই আমরা কিন্তু সকল স্কুলগুলো খুলে দেব।
যত টিকা দরকার, কেনা হবে : মহামারীতে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে ‘যত টিকা দরকার তত টিকাই কেনা হবে’ বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী ভাষণে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।
টিকার সংকটে দেশে টিকাদানে ছন্দপতনের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর যখনই বিশ্বে টিকা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, সরকার তখন থেকেই টিকা সংগ্রহের জন্য সব দেশে যোগাযোগ শুরু করেছিল। পাশপাশি ভারত থেকে নগদ টাকা দিয়ে টিকা কেনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রকট আকার ধারণ করলে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে বাংলাদেশ তখন কিছুদিন সমস্যায় পড়ে। কিন্তু বর্তমানে টিকা এসে গেছে। যেমন ফাইজারের টিকা যেটা এসেছে, আমরা বলেছি যারা বিদেশে আমাদের শ্রমিক, যারা যাচ্ছেন, তাদের অগ্রধিকার থাকবে এই টিকা পাওয়ায়। আর গতকাল রাতে এবং আজকে খুব ভোরে মডার্না এবং সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে পৌঁছে গেছে। মডার্না থেকে ২.৮৫ মিলিয়ন চলে এসেছে আর সিনোফার্মের ২ মিলিয়ন এসে গেছে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এবং টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আরো টিকা আমরা নিয়ে আসব কিনে। যত লাগে আমরা কিনব। তার জন্য আলাদা বাজেটে টাকাই রাখা আছে। এর জন্য কোনো চিন্তা হবে না।
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, সমস্ত টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কিনছি অনেক টাকা দিয়ে। প্রথমে যেটা কিনেছিলাম সেটা কিন্তু এখন আমাদের অনেক দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তারপরও জনগণের জন্য, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে আমরা বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি নিয়েছি।
স্বাস্থ্যবিধি পালনে উপেক্ষা দেখে হতাশা : মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে মানুষের উদাসীনতা দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি আবারও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাহলেই মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
মানুষের বাড়ি যেতে চাওয়ার প্রবণতাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সংক্রমণ এড়াতে মহামারীকালে সবাইকে এক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাজারে, অলি-গলিতে ভিড়
পরবর্তী নিবন্ধউপজেলায় শনাক্তের হার দ্বিগুণের বেশি