বর্জ্য অপসারণ যাচ্ছে বেসরকারি খাতে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

নগরের বর্জ্য অপসারণ যাচ্ছে বেসরকারি খাতে। প্রাথমিকভাবে পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বর্জ্য সংগ্রহ করলে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘সার্ভিস চার্জ’ পরিশোধ করতে হবে বর্জ্য সরবরাহকারীকে!
আইন অনুযায়ী, বর্জ্য অপসারণে বাধ্য চসিক। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় বাসা-বাড়ি থেকে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে। এ প্রকল্পে বর্জ্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে কোনো ফি নির্ধারণ করেনি চসিক। অবশ্য চসিক ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ যে পৌরকর আদায় করে তার মধ্যে ময়লা অপসারণ রেইট অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে ২৫টি ওয়ার্ড থেকে ৭ শতাংশ এবং ১৬টি ওয়ার্ড থেকে ৪ শতাংশ করে ময়লা অপসারণ রেইট আদায় করা হয়। ওই হিসেবে ময়লা অপসারণ খাতে ফি পরিশোধ করে নগরবাসী। এরপরও সার্ভিস চার্জ নামে নতুন করে ফি আদায়ের খবরে অসন্তোষ আছে নগরবাসীর।
বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পশ্চিম ষোলশহরের কিছু এলাকায় বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে। এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি। যাচাই-বাছাই চলছে।
বেসরকারি খাতে গেলে নগরবাসীর কাছ থেকে ফি আদায় করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি। ঢাকায় কিন্তু বেসরকারিভাবেই আদায় করা হয়। তবে ঢাকায় যেসব প্রতিষ্ঠান ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে তারা কত টাকায় আদায় করতে পারবে তা সিটি কর্পোরেশন নির্ধারণ করে দেয়নি। ফলে কোথাও কোথাও কোথাও বেশি আদায় করা হচ্ছে। সেজন্য আমরা ফি নির্ধারণ করে দিব। এক্ষেত্রে যেসব এলাকায় নিম্ন বিত্ত ও মধ্যবিত্ত বাস করে তাদের জন্য এক ধরনের হবে। আবার বাণিজ্যিক এলাকায় আরেক রকম হবে।
জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসে ‘চট্টগ্রাম ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রা: সার্ভিস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে বর্জ্য সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করে মেয়রের কাছে আবেদন করেন। এতে সম্মতি দেন মেয়র। সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভায় তা অনুমোদন পেয়েছে। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় সাধারণ সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
‘চট্টগ্রাম ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রা: সার্ভিস’ নামের প্রতিষ্ঠানটি তাদের আবেদনে উৎস স্থল থেকে অর্থাৎ বাসা, হোটেল, কারখানা, কমিউনিটি সেন্টার, নির্ধারিত ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে অক্ষতিকর বর্জ্য সংগ্রহ করে চসিকের এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব করে। এক্ষেত্রে বর্জ্য গার্ভেস ব্যাগে মুড়িয়ে নিজস্ব পরিবহন ও নিজস্ব লোকবলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে নেয়া হবে বলে জানায়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি বর্জ্য পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে প্রতি মাসে আবাসিক ফ্ল্যাট থেকে ১০০ টাকা এবং সেমি পাকা ভবন থেকে ৫০ টাকা আদায় করবে। এছাড়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা দোকান থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে আকার ভেদে দেড় হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং কমিউনিটি সেন্টারগুলো প্রতি ১০০ জনের অনুষ্ঠানে ২০০ টাকা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোটেল-মোটেল অক্ষতিকর বর্জ্য আকার ভেদে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা এবং নিমার্ণাধীন বা সংস্কারাধীন ভবন থেকে প্রতি টন নির্মাণ বর্জ্যের জন্য এক হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে আদায় করবে।
এ প্রসঙ্গে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পুরো এলাকা কিন্তু আমরা বেসরকারি খাতে দেব না। যেখানে ডোর টু ডোর কার্যক্রম পরিচালিত হয় না সেখানেই বেসরকারি খাতে দেয়া হবে। যেমন ষোলশহর ওয়ার্ডের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এলাকা ডোর টু ডোর কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে।
পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের এ কাউন্সিলর বলেন, আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন জায়গায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন করবে। আবার নাগরিকগণকে নিজ দায়িত্বে সেখানে আবর্জনা পৌঁছে দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নাগরিকদের সেই কাজটি করবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডোর টু ডোর সেবার মাধ্যমে বেশ কিছু এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ সিটি কর্পোরেশন করে থাকে। তা কিন্তু দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে দৈনিক একবার সংগ্রহ করা হয়। ফলে আবাসিক এলাকা ও শিল্প বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আবর্জনা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত-অনির্ধারিত বিনে বা রাস্তার ধারে ফেলে রাখে। তারা যখন ফেলে তার আগেই হয়তো আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা সংগ্রহ করে চলে আসে। ফলে দিনের দীর্ঘ সময় ওসব আবর্জনা পড়ে থেকে দুর্গন্ধ আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। বেসরকারি খাতে দেয়া হলে তারা বাসার সামনে পলিথিনযুক্ত বিন রাখবে। সেখানে যখন খুশি ময়লা রাখতে পারবেন গৃহস্থরা। নির্দিষ্ট সময়ে এসে তা নিয়ে যাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর তৃতীয় তফসীল এর ১ দশমিক ৪ থেকে ১ দশমিক ৭ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে আর্বজনা অপসারণ, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া আছে। এতে উল্লেখ আছে, ‘কর্পোরেশন তার নিয়ন্ত্রণাধীন সকল জনপথ, সাধারণ পায়খানা, প্রস্রাবখানা, নর্দমা, ইমারত ও জায়গা থেকে আর্বজনা সংগ্রহ ও অপসারণ করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কর্পোরেশন নগরবাসীর জন্য নির্দিষ্টস্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করবে এবং সাধারণ নোটিশের মাধ্যমে ওখানে ময়লা ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে’। এছাড়া আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে চসিককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্রোহীরা অনড়
পরবর্তী নিবন্ধ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে পর্যটককে ধর্ষণ