বঙ্গবন্ধু : আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস

মো. খোরশেদ আলম | শনিবার , ১৮ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

১৭ মার্চ জাতির পিতার ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে রাত ৮টায় টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ পরিবারের আদরের খোকা। তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির মুজিব ভাই ‘বঙ্গবন্ধু’। তার হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ৫৫ বছর বয়সে কিছু বিপথগামী সেনা কেড়ে নিয়েছিল সপরিবারে তাঁর প্রাণ। কিন্তু আজ দেশের প্রতিটি কোণায় উচ্চারিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। বঙ্গবন্ধু ফিরে এসো আবার স্বাধীন বাংলায়, তুমি নাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী কিংবা জন্ম বার্ষিকীতে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী প্রয়াত সন্ধ্যা মুখার্জির কণ্ঠের এই গানটি বাজানো হয় অবধারিতভাবে। আজও সারা দেশ হয়তো বা শোনা যাবে যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাইএই গানটির আকুতির মতোই সত্যিই যদি মারা না যেতেন বঙ্গবন্ধু তাহলে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য এক বাংলাদেশকে পেতাম। জনতার নেতা মুজিব না থাকলেও তার আদর্শ ও অনুপ্রেরণা আজও বাঙালি মননে গেঁথে আছে। শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় কৃতজ্ঞচিত্রে আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করবে বাঙালি। সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে পরবর্তী এক বছর মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। নেওয়া হয়েছে ব্যাপক আয়োজন, জনতার অবিসংবাদিত নেতার জন্মদিনের এই উপলক্ষ্যটা জনতার ঢল দিয়েই আয়োজন করার কথা থাকলেও বৈশ্বিক মহামারী করোনা কারণে সে আশা পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ১০ জানুয়ারি থেকেই জন্মশত বার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানিন্তন ফরিদপুর মহকুমার গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু ঠিক তখন ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক খুনী চক্র সপরিবারে হত্যা করেন তাঁকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অধ্যয়নকালে তৎকালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবার কারাভোগ করেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলন এবং ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিণত হন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস, তার কর্ম ও আদর্শ চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙালি জাতির নয়, তিনি বিশ্বে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত বঞ্চিত মানুষের স্বাধীনতার প্রতীক, মুক্তির দিশারী।

বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তী ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ’৪৭ এ দেশ বিভাগ ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ ছয় দফা আন্দোলন তাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুধয় হয় স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। বাঙালি তাদের এই নেতাকে স্মরণ করতে তাঁর জন্মদিন প্রতি বছর ১৭ মার্চ পালন করছে জাতীয় শিশু দিবস এবং এটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ হলেও করোনার কারণে সেই উপলক্ষ ধরে ‘মুজিববর্ষ’ পালন করেছে। এটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক স্পর্শকারী ও অভাবনীয় ঘটনা। একি সাথে ছিল দেশের স্বাধীনতা ও সুবর্ণ জয়ন্তীকাল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। এ হত্যার ফলে এদেশের উন্নয়নের গতিধারায় সামরিক যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে অর্থনীতির চাকা উল্টো পথে চলে। বাংলাদেশে অরাজকতা, দুঃশাসন, দুর্নীতি আর লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে স্বার্থান্বেষী মহল ১৯৮১ সালে ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। যার ফলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল দেশ অভুতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। আসুন দেশের সকল ভবিষৎ নেতৃত্ব শিশুদের কল্যাণে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। সবাই মিলে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধাদারিদ্রমুক্ত ও সুখী, সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক : সাবেক শ্রম সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅলৌকিক শক্তির হাত
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে