ফেলনা মাছের আঁশেই স্বপ্নের গাঁথুনি

| বৃহস্পতিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বাজারে যেকোনো মাছ কেনার সময় কেটে নিয়ে আসেন অনেকেই। বিশেষ করে বড় মাছ হলে তো অবশ্যই কেটে আনতে হয়। আর মাছ কেনা বা কাটার সময় তার আঁশ ফেলে দেওয়া হয়। তবে মাছের সেই আঁশকে ফেলনা ভাবা হলেও আসলে তো ফেলনা নয়। রাজশাহীতে মাছের আঁশের কদর এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই মণ মাছের আঁশ কেনাবেচা হচ্ছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহী থেকে সরাসরি আঁশ রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই। যদি সুযোগ থাকতো তাহলে ভালো দাম পাওয়া যেতো। তাই সম্ভাবনাময় এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিকল্প পেশার মানুষ। আর আঁশের ব্যবসার প্রসারের জন্য সবার আগে সরকারি সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। খবর বাংলানিউজের।
মাছের আঁশের ব্যবসা রাজশাহীতে অনেকটাই নতুন। আগে এখানকার হাট-বাজারে মাছের আঁশের কদরই ছিল না। বাজারের মাছপট্টিতে জমা হওয়া আঁশগুলো ময়লা নর্দমায় ফেলে দেওয়া হতো। সময়ের বিবর্তনে এখন সেই আঁশেরই কদর তুঙ্গে। রাজশাহীর বাজারগুলোতে এখন ৪০ থেকে ৫০ জন ব্যবসায়ী মাছের আঁশ সংগ্রহ করছেন। সাধারণত একটি মাছ কাটার জন্য পাঁচ থেকে দশ টাকা করে মজুরি নেওয়া হয়। আর মণ হিসেবে ১ হাজর ৬শ টাকা থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা পড়ে।
এর পাশাপাশি তারা আলাদা করে মাছের আঁশ সংগ্রহ ও বিক্রির ব্যবসা করছেন। ফলে সরাসরি মাছ বিক্রি না করলেও বাজারে মাছ কেটে ও মাছের আঁশ কেনাবেচা করে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। মাছ বিক্রির পাশাপাশি এটি বিকল্প পেশা হিসেবেও এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহীতে। মাছের সঙ্গে আঁশ বিক্রি করে খুলেছে অতিরিক্ত আয়ের পথ। এই ফেলনা জিনিসটিও তাই সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মাছ ব্যবসায়ী শহিদুল আলম শহিদ বাংলানিউজকে বলেন, মাছের আঁশ সংগ্রহের পর তা ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বাজারজাতের উপযোগী করে তুলছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রথম পর্যায়ে এভাবে একসাথে ৩/৪ মণ মাছের আঁশ বস্তায় পুরে জমানো হয়। এরপর রাজধানী ঢাকা থেকে পাইকারী ক্রেতারা আঁশ কিনতে রাজশাহী আসেন। দরদাম করে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভে তাদের কাছে মাছের শুকনো ঝরঝরা আঁশগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। তবে বাজারে চাহিদা থাকলেও রাজশাহী থেকে মাছের আঁশ সরাসরি রপ্তানির সুযোগ নেই। তাই ব্যবসায়ীরা বিক্রিত মাছের আঁশের দাম পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
রাজশাহীর পাইকারি আঁশ বিক্রেতা সালেক হোসেন বলেন, মাছের আঁশের বড় রপ্তানির গন্তব্য হচ্ছে জাপান। কিন্তু সরাসরি জাপানে পাঠানো যায় না। জাপানি একটি বড় কোম্পানি চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় দুটি আলাদা কোম্পানি খুলেছে। ওখানে আগে পাঠানো হয়। মূল কোম্পানি পরে নিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন কারখানা গড়ে উঠেছে। রপ্তানির জন্য তৈরি করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে। তাদের সনদ পাওয়ার পরই রপ্তানির অনুমতি মেলে। বছরে দেশ থেকে ৮শ থেকে ১ হাজার টন আঁশ রপ্তানি হয় বলেও জানান সালেক হোসেন। বর্তমানে দেশে তিনটি কারখানা আছে। মোট রপ্তানি হয় আনুমানিক দেড় লাখ ডলারের পণ্য। রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, রাজশাহীর বাজারে এখন মাছের আঁশ সংগ্রহ করা হয় এই কথা তারাও জানেন। তবে ব্যবসাটি একেবারেই নতুন। তাই বিষয়টি এখন পর্যন্ত সরকারের নীতিনির্ধারনী মহলের কাছে পৌঁছায়নি। ব্যবসাটি আরো লাভজনক হলে সরকার এই খাতে নজর দেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষার ডিজিটালাইজেশন নিয়ে মিটিসল
পরবর্তী নিবন্ধআইসিসির দশক সেরার মনোনয়নে বাংলাদেশি নেই