সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট পোর্ট লিংক রোড সংলগ্ন ডিসি পার্কে ফুল উৎসবের অষ্টম দিনে এতিম ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ছয়টি বাসে করে সরকারি শিশু পরিবার, উপলব্ধি এবং সীতাকুণ্ড প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রায় দুই শতাধিক শিশু এখানে আসে। তারা এদিন পার্কে নাগরদোলা, কায়াকিং ও নৌকায় চড়ে বিশাল দীঘিতে আনন্দে মেতে উঠে।
উপলব্ধির শিশু জান্নাত নাগর দোলায় উঠে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে, এরকম আগে কখনও চড়িনি। এখানে এসে বিভিন্ন ফুল দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে। সরকারি শিশু নিবাসের নাঈমা জানায়, আমি এখানে এসে অনেকগুলো ফুলের নাম জেনেছি। নৌকায় ঘুরেছি। সবাই মিলে কায়াকিং করেছি। আমরা অভিভূত। মাঈনুল ইসলাম নামে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোর জানায়, প্রতিবন্ধীদের কথা কেউ ভাবে না। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আমাদের জন্য আজকে যে
আয়োজন করেছেন এজন্য কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতেও যেন প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকে আমাদের সে প্রত্যাশা। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু জান্নাতুল নাইম বলে, আমরা নাগরদোলা এবং নৌকায় উঠে খুবই আনন্দিত। আমরা যেখানে থাকি সেখানে এরকম ফুলের বাগান হলে খুব ভালো হবে। চট্টগ্রাম সরকারি
শিশু পরিবারের শিক্ষক রুমা পারভীন বলেন, এটি জেলা প্রশাসকের একটি মহৎ উদ্যোগ। এত বিশাল জায়গাজুড়ে শুধু ফুলের বাগান চট্টগ্রামের অন্য কোথাও নেই। আমরা চাই আমরা যেন মাঝে মাঝে আমাদের এতিম বাচ্চাদের নিয়ে এখানে আসতে পারি। এরকম একটি পার্ক শিশুদের মানসিক বিকাশে দারুণ
অবদান রাখবে। সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, এক সময়ের মাদকের রাজ্য এখন ফুলের রাজ্য হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ এই ফুলের সম্রাজ্যে শিশু কিশোরদের মিলন মেলা একটি উৎসবে রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ
ফখরুজ্জামান বলেন, এসকল পিতৃ–মাতৃহীন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের শিশুদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু
আমাদের দেশে সব জায়গায় এ ধরনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসকল শিশুদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আমরা অবশ্যই শিশুবান্ধব ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পার্ক হিসেবে এই ডিসি পার্ককে গড়ে
তুলব এবং তারা যেন প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এখানে আসতে পারে এবং খেলাধুলা করতে পারে সে ব্যবস্থা করব। এসময় পার্কে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রতীক দত্ত।