ফিরে দেখা একুশ

চৌধুরী শাহজাহান | শুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ


আবদুস সালাম বাংলা সাহিত্যের একজন সৃজনশীল লেখক ও সাহিত্যের অধ্যাপক । কবিতা ও প্রবন্ধ লেখায় তিনি অধিক স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ২০২০-২১ সালে সারাবিশ্ব করোনার ভয়ানক থাবায় যখন বিপর্যস্ত তখন আবদুস সালামের কলম জ্বলে ওঠে। করোনা ভাবনা থেকেই তিনি রচনা করেন অনেকগুলো সমাজ সচেতনতামূলক কবিতা। সেই ভাবনার মলাটবদ্ধ রূপান্তর দেখি তাঁর ‘করোনানুভূতি’(২০২১) কাব্যে। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটি পাঠকের নজর কেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হলো ২০টি প্রবন্ধ নিয়ে ‘একুশ নির্ভর সাহিত্য ও অন্যান্য’ প্রবন্ধ গ্রন্থটি। প্রবন্ধগুলোতে তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন।
দেশভাগের পর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে যতগুলো রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন ঘটেছে তার প্রতিটির চিত্র বাংলাদেশের সাহিত্যে রূপায়িত হয়েছে।
বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্বতন্ত্র ধারার সাহিত্য। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, গান ও চিত্রকলায় আমরা তা সফলভাবে প্রতিফলিত হতে দেখি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে রচনা করেন বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। আবদুল গাফফার চৌধুরী রচনা করেন কালজয়ী গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি /আমি কি ভুলিতে পারি’।
একুশ নিয়ে উল্লেখযোগ্য কবিতা লেখেন শামসুর রাহমান, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল গনি হাজারী, ফজলে লোহানী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিস চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, জামালুদ্দিন, আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান হাফিজুর রহমান প্রমুখ। কবিতাগুলোতে মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, জাতীয়তাবাদী চেতনা, শ্রেণীবৈষম্য ও সর্বোপরি শোষণ বঞ্চনার কথা বর্ণিত হয়েছে। আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতাটি এখানে উল্লেখ করতে চাই।
‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো/ চারকোটি পরিবার/ খাড়া রয়েছি তো। যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য / পারেনি ভাঙতে/ হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার/

ইটের মিনার/ ভেঙেছে ভাঙুক। ভয় কি বন্ধু,দেখ একবার আমরা জাগরী/ চারকোটি পরিবার।’ (আলাউদ্দিন আল আজাদ)
গল্প, উপন্যাস, নাটক ও চিত্রকলায়ও একুশের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে। একুশকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য গল্প, উপন্যাস, নাটক ও গান রচনা করেন শওকত ওসমান, সাইয়িদ আতিকুল্লাহ, আনিসুজ্জামান, আতোয়ার রহমান, সিরাজুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, তোফাজ্জল হোসেন, জহির রায়হান, সরদার জয়েন উদ্দিন, রাবেয়া খাতুন, নূরল আলম, শহীদুল্লাহ কায়সার, রশীদ হায়দার, মুনীর চৌধুরী, মমতাজ উদ্দিন আহমদ, সেলিনা হোসেন প্রমুখ।
প্রাবন্ধিক আবদুস সালাম প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নির্বাচনে সচেতন ছিলেন। বিশটি প্রবন্ধের মধ্যে একুশের সাহিত্য : বাঙালির নতুন অভিযাত্রা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের উপন্যাস, চর্যাপদ: সেকালের আলোকমশাল, নজরুল প্রতিভা: সময়ের চেয়ে পরাক্রান্ত, একজন নূরলদীন ও তাঁর সারাজীবন, আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ : শামসুর রাহমানের নব জন্ম, প্রসঙ্গ: পদ্মানদীর মাঝি ও দিবারাত্রির কাব্য, তারাশঙ্করের ‘কবি’: একটি জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস ও সিরাজ-উদ-দ্দৌলা চৌধুরী : অনুপ্রেরণার কবি ও শিক্ষক-সাহিত্য পাঠকদের মনন ও চিন্তার খোরাক জোগাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুনতীর সীরতুন্নবী (সা.) মাহফিল ৮ অক্টোবর শুরু
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের কবিয়াল ও কবিগান