‘ফাটল’ নিয়ে দুই মত

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ।। র‌্যাম্পের ক্রটি সংশোধনে সিডিএকে চসিকের চিঠি ।। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেখার পর ব্যবস্থা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

নির্মাণ অথবা ডিজাইনগত ত্রুটির কারণে নগরের বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের দুটি পিলারে ‘ফাটল’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ত্রুটি সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে সংস্থাটি গতকাল মঙ্গলবার ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএকে চিঠিও দিয়েছে। তবে সিডিএ এটাকে ফাটল বলতে নারাজ। তারা বলছে, এটা ফাটল নয়, এটি ঢালাইকালীন চার্টারে ব্যবহৃত ফোম সরে যাওয়ার দাগ। তারপরও ‘ফাটল’ পরীক্ষা করে দেখতে ফ্লাইওভারটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিপিএম কনসালটেন্টকে খবর দিয়েছে সিডিএ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের একটি বিশেষজ্ঞ দল আজ ফাটলটি সরেজমিন দেখে মতামত জানাবে।
অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সিডিএর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘র‌্যাম্পটি নির্মাণ করা হয়েছিল হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য। কিন্তু ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে ফাটল দেখা দেয়।’ বর্তমানে ফ্লাইওভারটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চসিকের। তাই ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য পরোক্ষাভাবে চসিককে দায়ী করা হয়।
গত সোমবার দিবাগত রাতে ফ্লাইওভারটির কালুরঘাটমুখী আরকান রোডের সাথে সংযুক্ত র‌্যাম্পের দুটি পিলারে ফাটল দেখার খবর জানাজানি হয়। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে সিটি মেয়রের নির্দেশে চসিকের দুজন কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিএমপির সহযোগিতায় র‌্যাম্পটিতে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এছাড়া নিচ থেকেও দোকানপাট সরিয়ে দেন। সর্বশেষ গতকাল সকালে ফাটল পরিদর্শনে যান মেয়রের নেতৃত্বে চসিকের প্রকৌশলীরা। পরিদর্শন করে সিডিএও।
প্রসঙ্গত, ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন। ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয় ১০৬ কোটি টাকা। ফ্লাইওভার চালুর পর এর সুফল বৃদ্ধিতে এবং স্থানীয়দের দাবির মুখে ২০১৬ সালে কালুরঘাটমুখী র‌্যাম্পটি যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হয় র‌্যাম্পটি। এর দৈর্ঘ্য ৩২৬ মিটার এবং ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রশস্ত।
সিডিএকে চসিকের চিঠি : জনস্বার্থে ফ্লাইওভারটির ত্রুটি সংশোধন করে পুনরায় যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গতকাল সিডিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে চসিক। এতে স্বাক্ষর করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শহীদুল আলম।
চিঠিতে বলা হয়, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের হক মার্কেট সংলগ্ন দুটি পিলারে সৃষ্ট ফাটলের কারণে জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টিসহ যানবাচন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখানে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নির্মাণ ত্রুটি থাকতে পারে : গতকাল বেলা ১১টার দিকে চসিকের প্রকৌশলীদের সাথে নিয়ে ফ্লাইওভারের ফাটল পরিদর্শন করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় ‘নির্মাণ ত্রটি’র কারণে ফাটল হতে পারে মন্তব্য করে উপস্থিত সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, আমি তো প্রকৌশলী না। ফাটলের কারণ আমি বলতে পারব না। সাধারণভাবে যেটা বলতে চাই, নিশ্চয় নির্মাণে ত্রুটি আছে। যার ফলে এ ফাটল দেখা দিয়েছে। এখানে প্রকৌশল দৃষ্টিকোণ থেকে কি হয়েছে না হয়েছে এটা আমার থেকে আমাদের প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন।
ফাটল দেখে অবাক হয়েছেন বলেও জানান মেয়র। বললেন, যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেভাবে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে আমি নিজেও দেখে হতবাক হয়েছি। কারণ এ ফ্লাইওভারে আগেও একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। গার্ডার পড়ে অনেক লোক মারা গিয়েছিল। আমরা রোড বন্ধ করে দিয়েছি।
ফাটলের কারণ তদন্ত করে বের করা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ কাজ আমরা করিনি, এটা নির্মাণ করেছে সিডিএর অধীনে ম্যাঙ। ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিতে আজকে আমরা সিডিএকে চিঠি দেব। ফাটল কী কারণে হয়েছে তদন্তপূর্বক বের করা যাবে। সিডিএ এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যে সমস্ত ঠিকাদার কাজ করেছে তাদের কোনো নির্মাণ ত্রুটি আছে কিনা তা তদন্ত করে বের করে যাবে। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দেখার পর ব্যবস্থা : ফাটল দেখা দেওয়ার পর দুর্ঘটনা এড়াতে গত সোমবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যানবাহন চলাচলের জন্য কবে খুলে দেওয়া হবে জানতে চাইলে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, এটাকে কোনো ফাটল ধরা বলে না। বড় কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের এঙপার্টরা আসবেন। তারপর দেখে যানবাহন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেব। তিনি জানান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিপিএম কনসালটেন্ট লিমিটেডকে খবর দেওয়া হয়েছে। আজ তারা আসবে।
ফ্লাওভার নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাঙের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনির হোসেন আজাদীকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে করার কিছু নেই। এটা সম্পূর্ণ সিডিএর ব্যাপার। এটা যারা ডিজাইন করেছেন তারা জানবেন।
তিনি বলেন, র‌্যাম্পটা মূল ফ্লাইওভারের সাথে সরাসরি কানেকশন ছিল না। পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছিল বঙ গার্ডারের মাধ্যমে। কলামের উপরে ক্যান্টিলিভার (মূল কাঠামোর সাথে সংযোগ করা অংশ) করে র‌্যাম্পটি করা হয়েছে। এখানে কলাম থেকে অরিজিনাল ফ্লাইওভারের দূরত্ব প্রায় ১৩ মিটার। যখন এটার ডিজাইন করা হয়েছিল তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে টেস্ট করা হয়। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি লাইন ছিল। তাই ১৩ মিটার দূরেই ফাউন্ডেশনটা করা হয়েছিল। অরিজিনালি ইঞ্জিনিয়ারিং টার্ম অনুযায়ী ফাউন্ডেশনটা করার দরকার ছিল ফাউন্ডেশনের মাথায়।
তিনি আরো বলেন, যখন এটা ডিজাইন করা হয় তখন বলা হয়েছিল ভারী যানবাহন নিচ দিয়ে এবং হালকা যানবাহন উপর দিয়ে যাবে। নির্মাণ করার পর সিটি কর্পোরেশনকে সিডিএ হস্তান্তর করেছিল। তারা হয়তো হালকা যানবাহন চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহদ্দারহাট মোড়ে দিনভর যানজট
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬