প্রার্থনা

কাজী জিন্নাত জাহান | শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

এখন আর সকালের চোখ দিয়ে স্বর্ণালী রোদ্দুর সবুজ দেখা হয় না। পত্রিকার কচকচে পাতার সাথে চায়ের সখ্যতা আর হবে কি হবে না জানিনা। জীবনকে এখন শাটল ট্রেনের সাথে মেলালেও যেন ভুল হবে। সময় পরিবর্তনশীল, আমরা জানি। কিন্তু আগেকার দিনে মনে হত সময়ের যেন বরকত ছিল। এখন তো দিনকে ঘন্টা আর ঘন্টাকে মিনিট মনে হয়। আজ যা আছে কাল তা থাকবে না। নানুর বাড়ির উঠান, একান্নবর্তী পরিবারের হৈচৈ, নকশী পিঠার সাজ প্রত্যেকের জীবনেই এই ধরনের গল্প আছে।
কিন্তু বর্তমান জীবনের সাথে অতীতের কোন মিল নেই। বাচ্চারা প্রচন্ড প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত। চারদিকে অসুখবিসুখ বেড়েই চলছে। মানুষের আচরণ, দৈনিক কর্মকাণ্ড সবকিছুতে যেন অস্থিরতার প্রভাব। প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন, অর্থনৈতিক মন্দা, বাজার দামের অস্থিরতা সব কিছুই মিলিয়ে মনে হচ্ছে প্রার্থনা প্রয়োজন। প্রার্থনা সেই সকল মানুষের জন্য যারা সাহায্য চাইতে পাওে না। প্রার্থনা এ পৃথিবীর আবহাওয়ার জন্য, মাটির জন্য, গাছপালার জন্য। প্রার্থনা প্রাপ্তবয়স্ক, প্রবীণদের জন্য যেন সৃষ্টিকর্তা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে তাদের বাঁচান। প্রার্থনা পথেঘাটে, ফ্লাইওভারে যেন কোন মানুষ আহত বা নিহত না হয়।
প্রার্থনা রাশিয়া ইউক্রেনের দ্বন্দ্ব সংঘাত যেন যায় থেমে। যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের মানুষগুলোর উপর সৃষ্টিকর্তা যেন রহমত বর্ষণ করেন। প্রার্থনা চাই, যেন দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমে যায়। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন যেন দুর্বিষহ না হয়। বিশেষ প্রার্থনা শিশুদের জন্য, যেন তারা সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে স্কুলে। যেন থাকে নিরাপদ। শিক্ষিকা যেন হয় ফুটফুটে শিশুদের আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু। মানসিক বিকাশের সবচাইতে বড় শক্তি হল ভালবাসা। আর এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতা, নমনীয়তা, শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন প্রতিটি পেশার মানুষের, দরকার উৎসাহের। অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত সমপ্রতি তার এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, তিনি তার আঁকা ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করতে চান ‘কতটা কমের মধ্যে বাঁচা যায়’। আসলেই বাঁচবো না হয় কটা দিন, তাই নিজের কর্মে, জ্ঞানে, ব্যবহারে এমনকিছু করতে চাই যেন আমরা থাকি সকলের প্রার্থনায়। প্রার্থনা চাই, যাদের জন্য প্রার্থনা করার কেউ নাই। যারা নিতান্তই অসহায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনারি ইন্টারভেনশন ও লাইভ কেস ট্রান্সমিশন কনফারেন্স
পরবর্তী নিবন্ধসুবর্ণভূমিতে সুবর্ণের সাথে ভ্রমণ