প্রাচীন গুহাচিত্র

রেজাউল করিম | বুধবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

গুহা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত ভূগর্ভস্থিত ফাঁপা অংশবিশেষ। স্পেলিওলজি বা গুহাবিদ্যা অনুসারে কোনও ভূ-অভ্যন্তরের পাথরনির্মিত প্রাকৃতিক ফাঁপা অংশ যদি অন্তত মানুষের প্রবেশের উপযুক্ত বড় হয়, তাকে গুহা বলা হয়ে থাকে। ছোট গুহা, পাথুরে আশ্রয়স্থল, গ্রোটো, কৃত্রিম বা মানুষের নির্মিত গুহা, সামুদ্রিক বা সমুদ্রনির্মিত গুহাকেও বুঝে থাকি। মানুষ কেন গুহায় ছবি আঁকত তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। গুহাচিত্র হল সেসব চিত্র যা প্রাচীন গুহার দেয়াল বা ছাদে আবিষ্কার করা হয়েছে। বিশেষ করে সেই সকল চিত্রকর্ম যা প্রাগৈতিহাসিক কালে মানুষেরা প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে (আনুমানিক ৩৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) অঙ্কন করেছিল। এশিয়া ও ইউরোপে এই গুহা চিত্রগুলো পাওয়া গিয়েছে। তবে শুধু ঘরসজ্জার জন্য এই চিত্রগুলো অঙ্কন করা হয়নি। কারণ, এই গুহাগুলো বা তার আশেপাশে মানুষের কোন বসতি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রায়ই সব গুহাই খুব দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। কিছু মতবাদ অনুযায়ী, গুহাচিত্র দ্বারা প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করত। যদিও অনেকে আবার মনে করেন যে এগুলো সম্পূর্ণ ধর্মীয় বা আনুষ্ঠানিকতার কাজে ব্যবহৃত হত। প্রায় সবগুলো চিত্রই একই রকম যেখানে পশু হচ্ছে প্রধান উপজীব্য বিষয়। চিত্রকর্মের বিষয় হিসাবে মানুষ এসেছে মূলতঃ তার হাতের ছাপ এর মধ্য দিয়ে।
বিশ্বে এ যাবতকালের সবচেয়ে প্রাচীন গুহাচিত্রের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ইন্দোনেশিয়ার একটি গুহায় মানুষের পশু শিকার করার যে গুহাচিত্রটি বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, তা ৪৪ হাজার বছর পুরোনো। ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে অন্তত ২৪২টি গুহা আছে, যেগুলোতে প্রাচীন সব গুহাচিত্র আঁকা আছে। প্রতি বছরই সেসব গুহা থেকে প্রাচীন সব ছবি আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো চুনা পাথরের তৈরি সেসব গুহা এখন ক্ষয়ে যাচ্ছে, সে কারণে মানব ইতিহাসের প্রাচীন সব গুহাচিত্রও হারিয়ে যাওয়ার পথে।

চুনাপাথরের গায়ে আঁকা এই গুহা চিত্রে দেখা যাচ্ছে অর্ধেক মানুষ ও অর্ধেক পশুর মতো দেখতে থেরিয়ানথ্রপরা বর্শা ও দড়ির মতো উপকরণ দিয়ে বিশাল পশু শিকার করছে। এই গুহাচিত্রটি প্লেইসটোসিন যুগের শেষ দিকে আঁকা হয়েছিল। আটটি মানুষের মতো অবয়ব, দুটি শূকর ও চারটি অ্যানোয়া অর্থাৎ ছোট আকারের মহিষ দেখা যাচ্ছে ওই চিত্রে।
ইউরেনিয়াম ডেটিংয়ের মাধ্যমে গুহার পাথরে ১৪ ফুট চওড়া গুহাচিত্রটি পর্যবেক্ষণ করে প্রাচীন মানুষের চিন্তাধারা জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ যাবৎ আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন এই গুহাচিত্র মানুষের কল্পনা ও বিমূর্ত চিন্তার প্রথম উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির নৃতত্ত্ববিদরা এই গুহাচিত্রটি খুঁজে পেয়েছেন। এই গুহাচিত্রে মানুষ আঁকা যেতে পারতো, কিন্তু সেখানে থেরিয়ানথ্রপ কেন আঁকা হলো? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষকরা বলছেন সে সময়ের মানুষের সুপার ন্যাচারাল চিন্তা ও কল্পনার পরিচয় বহন করছে এই থেরিয়ানথ্রপরা। গুহাচিত্র নিয়ে এখনো রহস্যেও শেষ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরক্ত দিয়ে
পরবর্তী নিবন্ধপরৈকোড়া ইউনিয়ন সমিতি চট্টগ্রামের সভা