প্রবাহ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারাবাঁশখালীপেকুয়া সড়কে ভয়াবহ যানজট

এই ঈদে গত রোববার পর্যন্ত আনোয়ারাবাঁশখালীপেকুয়া প্রধান সড়কে স্মরণকালের ভয়াবহ যানজটে লাখ লাখ যাতায়াতকারী চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হন। মনে হবে এ তিন উপজেলায় কোন প্রশাসন নেই। লাখ লাখ যাতায়াতাকারী চরম অসহায়ভাবে কোথাও ১০/১৫ মিনিট কোথাও বা আধা ঘণ্টা কোথাও ঘণ্টার অধিক সময় যানজটে পড়ে সন্তানসন্ততি নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঈদ বিধায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাথে স্ত্রী সন্তানসন্ততি থাকবে স্বাভাবিক। রোজা রেখে প্রচন্ড গরমে সড়কের উপর কি রকম যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হবে।

ঈদের দিন, আগে এবং পরে ঈদ কেন্দ্রিক পরপর চার বার চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশখালী গ্রামের বাড়ীতে যাওয়া আসা হয়। ঈদের দিন বেলা ১১ টার দিকে বৈলছড়ি গ্রামের বাড়ী থেকে আপনজনের জেয়ারতের উদ্দেশ্যে চাম্বল যাওয়া হয়। ঈদের দিনে পর্যন্ত চাম্বলে যানজটে পড়ি। তৈলারদ্বীপ সরকার হাট, চানঁপুর চৌমুহনী, গুনাগরী খাসমহল, বৈলছড়ী খান বাহাদুুর বাজার, জলদী মিয়ার বাজার, শিলকূপ বেয়ান (টাইম) বাজার, চাম্বল বারী হাট, নাপোড়া বাজার, টইটং বজল মিয়ার বাজার, পেকুয়া চৌমুহনী যানজটের অন্যতম জংশন।

তৎমধ্যে বাঁশখালীগুনাগরী খাসমহলে যানজটে না পড়ে অতিক্রম করতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়। যেহেতু পশ্চিম সাতকানিয়ার বিশাল অংশ খাসমহল চৌরাস্তা হয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসাযাওয়া করছে।

অপরদিকে পশ্চিম বাঁশখালীর একটি বড় অংশ এই গুনাগরীর খাসমহল হয়ে চট্টগ্রাম শহর, সাতকানিয়া, বাঁশখালী উপজেলা সদর এ যাতায়াত করছে। ফলে এ গুনাগরী খাসমহল চৌ রাস্তায় সকাল ৮/৯ টা থেকে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট থাকে না সময় খুব কম। চাঁনপুর চৌরাস্তা, তৈলারদ্বীপ সরকার হাটের গরুর বাজার থাকলে বিকেল বেলা যানজটে না পড়ে অতিক্রম করতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়।

আগেই উল্লেখ করা আছে পেকুয়া, পশ্চিম চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী কক্সবাজার জেলার এ চার উপজেলার লাখ লাখ জনগণ চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতে মাত্র ১০/১৫ বছর আগেও আরাকান মহাসড়ক ঘুরে চট্টগ্রাম শহরে আসাযাওয়া করত। সে লক্ষে পেকুয়াচৌমুহনী, মগনামা ঘাট, বদরখালী, মহেশখালীতে বাস স্টেশন গড়ে উঠে। দূরত্ব অনেক কম বিধায় তেল বাঁচাতে সময় বাঁচাতে এ সব অসংখ্য বড় বড় বাস পেকুয়াবাঁশখালীআনোয়ারা একমাত্র প্রধান সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসাযাওয়া করছে। চকরিয়া ও পেকুয়া এবং আনোয়ারা ও কর্ণফুলী এই ছোট ছোট দুই উপজেলা নিয়ে এক একটি নির্বাচনী এলাকা। কিন্তু পেকুয়াআনোয়ারার মধ্যবর্তী বাঁশখালী এক নির্বাচনী এলাকা। এ উপজেলা যেমনি অনেক বড় তেমনি উত্তরদক্ষিণ প্রায় ৩০ কি.মি লম্বা, একটি মাত্র প্রধান সড়ক, বাঁশখালী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এর রাস্তার উপর প্রায় ৩০৪০ টি ছোট বড় স্টেশন রয়েছে। যেখানে নানান দোকানাদির পাশাপাশি সিএনজি গাড়ির স্টেশন গড়ে ওঠে।

আনোয়ারাবাঁশখালী পেকুয়া সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য বাস, ট্রাক, কভার্টভ্যান, সরকারিবেসরকারি প্রাইভেট গাড়ির পাশাপাশি শত শত নয় হাজার হাজার তিন চাকার সিএনজি আসাযাওয়া করছে।

১০/১২ বছরের বাচ্চারাও এ গাড়ি চালাতে দেখা যাচ্ছে। এ সব হাজার হাজার সিএনজি গাড়ি কোন নিয়ম নীতি শৃঙ্খলার তোয়াক্কা করে না। রঙ সাইডে চালিয়ে নিতে তারা বেপরোয়া।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ায় কক্সবাজারমুখী সারা দেশের যানবাহনের একটি বড় অংশ ঘুরপথে আরাকান মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে আনোয়ারাবাঁশখালীপেকুয়া সরু প্রধান সড়ক হয়ে কক্সবাজার যাওয়াআসা করছে।

প্রতি উপজেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনিক কমিটির কমবেশি ব্যস্ততা থাকে, আইনশৃংখলা সভাও হয়। মনে করি তাদের দায়িত্ব হবে স্ব স্ব উপজেলার প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচলের শৃঙ্খলার রক্ষা করা। যেহেতু অন্যান্য উপজেলার জনগণ পরিবার পরিজন নিয়ে যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রতি উপজেলায় রয়েছে থানা তথা পৃথকভাবে পুলিশ প্রশাসন। উপজেলা পুলিশ প্রধান সজাগ দৃষ্টি দিলে তৎপর হলে এতে সেই উপজেলার প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃংখলা বহাল থাকবে স্বাভাবিক। তা হলে হাজার হাজার যাতায়াতকারীর কল্যাণ হবে।

পুন উল্লেখ্য, ঈদ কেন্দ্রিক ৪ বার চট্টগ্রাম শহরের বাড়ী থেকে বাঁশখালী বৈলছড়ি গ্রামের বাড়িতে যাওয়াআসা হয়। ভয়াবহ যানজটে কোথাও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন চোখে পড়েনি। ঈদের ২ দিন পর রবিবার সকালে বাঁশখালী গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে গুনাগরী খাসমহল কেন্দ্রিক প্রায় দুই কি.মি দীর্ঘ যানজটে পুলিশ প্রশাসনের ২ জন সদস্যকে চেষ্টা করতে গিয়ে অসহায়ত্ব মনে হচ্ছিল। যেহেতু ট্রাফিক পুলিশের মত অভিজ্ঞতা তাদের থাকার কথা না।

আনোয়ারাবাঁশখালীপেকুয়া সড়কটি সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক তা সরকারী উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মনে হয় জানা হয়ে আছে। অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন হয়ে কাজ শুরু করতে দীর্ঘ সময় নিবে স্বাভাবিক।

অতএব এ তিন স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসনের প্রতি সুপারিশ

. জরুরী ভিত্তিতে রাস্তার পাশে অবৈধ হাজার হাজার দোকানাদি উচ্ছেদ করা হোক

. হাজার হাজার ৩ চাকার সিএনজি নিয়ন্ত্রণে আনা হোক

. গুনাগরী খাসমহলচাঁনপুর চৌমুহনীতে মধ্যখানে সরু ডিভাইডার দিয়ে রাস্তা পৃথকীকরণ করা হোক

উক্ত সব কিছু করতে সরকারী উপর মহল থেকে অর্থ বরাদ্দ ও দিক নির্দেশণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। উপজেলা প্রশাসনের সদিচ্ছা কর্মতৎপরতাই যথেষ্ট।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, গবেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুজিবনগর সরকার : ইতিহাসের মাইলফলক
পরবর্তী নিবন্ধচাঁদের হাটের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন