পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়া আরো পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তার

সবাই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্য

বান্দরবান প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের থানচি এবং রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে আরো ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্য। এই জঙ্গিরা পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল। তবে র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের কাছ থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি।

র‌্যাব জানায়, বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রায় তিন মাস ধরে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আস্তানা থেকে ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, নোয়াখালী জেলার নিজাম উদ্দিন হিরন ওরফে ইউসুফ (৩০), কুমিল্লা জেলার সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭), মো. বায়জিদ ইসলাম ওরফে মুয়াজ (২১), ইমরান বিন রহমান শীতিল (১৭) এবং সিলেট জেলার সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে বাইরু (২১)। তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্য বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে বারোটায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে প্রেস কনফারেন্সে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘরছাড়া ৫৫ জন যুবকই পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার অভিযানে রোয়াংছড়ি থেকে ২ জন এবং থানচি থেকে ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

এসময় আরও কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় চলমান অভিযানে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেয়া ১২ জন জঙ্গি এবং কেএনএফের ১৪ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম দফায় ৭ জন ও দ্বিতীয় দফায় ৫ জন জঙ্গি এবং প্রথম দফায় কেএনএফের ৩ জন ও দ্বিতীয় দফায় ১১ জনকে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের আগের পুরনো মামলায় রাঙামাটি থানায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জঙ্গি এবং তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়া কেএনএফের বিরুদ্ধে র‌্যাবের এই অভিযান।

পাহাড়ে কেএনএফের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়া বন্ধে র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে। কবে নাগাদ এ অভিযান শেষ হবে তা বলা মুশকিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লিখিত বক্তব্যে গ্রেপ্তার পাঁচজনের পরিচয় ও জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিবরণও তুলে ধরেন।
নিজাম উদ্দিন হিরন ওরফে ইউসুফ : নোয়াখালীর এই যুবক ২০১৯ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে এসে ব্যবসার সুবাদে জহির নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করেন। ২০২১ সালে তিনি ‘হিজরতের’ প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যান।

সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা : কুমিল্লার একটি নূরানী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। পাহাড়ে অবস্থানরত অপর এক জঙ্গি নেতা মো. দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইয়ের মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনিসহ আরও সাতজন সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য কেএনএফ ক্যাম্পে যান।

সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন : সিলেটের একটি জিমনেসিয়ামে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য রনবীরের মাধ্যমে তিনি এই সংগঠনে যোগদান করেন। সিলেট থেকে যে চারজন তরুণ স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়ে জঙ্গিবাদের জড়ান, তিনি তার মধ্যে একজন। ফারকুন জঙ্গি সংগঠনের দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী। তিনি ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য বান্দরবানে আসেন।

বায়েজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াছ ওরফে বাইরু : সংগঠনটির আমির আনিছ মাহমুদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ২০২১ সালের নভেম্বরে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তিনি বান্দরবানে আসেন।

ইমরান বিন রহমান শিতিল (১৭) : কুমিল্লা থেকে ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে’ যে আটজন নিখোঁজ হয় তার মধ্যে সে একজন। কুমিল্লা থেকে বেরিয়ে সে নারায়ণগঞ্জে আব্দুল্লাহ নাফিজ নামে একজনের তত্ত্বাবধানে ছিলো। ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সে বান্দরবানে আসে।

কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আটজনের মধ্যে চারজনকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং একজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিনজনকে খুঁজে বের করতে অভিযান চলমান রয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রয়লার মুরগি নিরাপদ, অভয় দিলেন গবেষকরা
পরবর্তী নিবন্ধতথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, চকবাজার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা