পাইকারিতে দাম কমলেও প্রভাব নেই খুচরায়

চালের বাজার মনিটরিংয়ের তাগিদ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পাইকারিতে চালের দাম কমলেও এখনো খুচরায় বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে বর্তমানে ১০ শতাংশ করে সরকার। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি অনুমতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের চাল আনতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পাইকারী পর্যায়ে চালের দাম বস্তায় ৩৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এদিকে বাজারে পাইকারী পর্যায়ে দরপতনে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের ৩-৪ টাকা কমার কথা। কিন্তু বাজারে এখনো তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভোক্তারা বলছেন, খুচরা দোকানিরা একেকজন একেক দামে চাল বিক্রি করছেন। পাইকারী বাজারে দাম বাড়ার খবর পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের বাজার নিম্নমুখী তারপরেও বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান। গতকাল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং পাহাড়তলী পাইকারী চালের আড়তদাররা জানান, পাইকারী বাজারে বর্তমানে প্রায় সবধরনের চালের দাম বস্তায় সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে পাইজাম সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়া স্বর্ণা সিদ্ধ ২ হাজার ১০০ টাকা, মোটা সিদ্ধ ১ হাজার ৯০০ টাকা, নাজিরাশাইল সিদ্ধ ৩ হাজার টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ ২ হাজার ৪০০ টাকা, জিরাশাইল সিদ্ধ ২ হাজার ৮০০ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ২ হাজার ৭০০ টাকায় এবং কাটারি আতপ ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেতি আতপ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং চিনিগুড়া চাল ৪ হাজার ৫০০ টাকা। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, শুল্ক কমানোর প্রভাবে বাজারে চালের বাজার নিম্নমুখী। সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছে। কারণ আমদানি শুল্ক না কমালে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যেতো।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের বাজার কমছে। এখন ক্রেতা কমে গেছে। চালের পাশাপাশি ধানের দামও কমেছে। এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে জিরাশাইল চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ৭০ টাকা, মিনিকেট আতপ ৬০ টাকা, মোটা সিদ্ধ চাল ৫২ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় এবং স্বর্ণা সিদ্ধ ৬৫ টাকায়।
কাজীর দেউরি এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, চালের দাম এক সপ্তাহ ধরে কমছে। আমাদের চাল এক সপ্তাহ আগে কেনা। তাই এই মূহূর্তে পাইকারী দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিক্রি করতে হলে লোকসান দিতে হবে। আমরা দুই এক বস্তায় এনে বিক্রি করি। পাইকারী বাজারে দাম কমে গেলে আমরাও কমিয়ে দিই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দাঁড় করে ক্রেতাদের পকেট কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন। কখনো তারা পেঁয়াজ নিয়ে খেলেন, কখনো তেল-চিনি নিয়ে। এখন পাইকারী বাজারে চালের দাম কমেছে কিন্তু খুচরা বাজারে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। ফলে ভোক্তাদের কোনো লাভ হলো না। তাই প্রশাসনকে খুচরা বাজারে মনিটরিং জোরদারের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমানোর পাশাপশি যাবতীয় রেগুলেটরি ডিউটি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাল আমাদিনতে শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে ১০ শতাংশ এবং শর্ত সাপেক্ষে সমুদয় রেগুলেটরি ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। এ প্রজ্ঞাপনের আওতায় রেয়াতি হরে চাল আমদানির শর্ত হচ্ছে, এ জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত কমপক্ষে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হয়ে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে ‘নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়’ চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। ওইদিন এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম নিয়ে ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয়, আবার কৃষকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু-কিশোরদের নিয়ে নির্বাচনী শোডাউন, আটকালেন ম্যাজিস্ট্রেট
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ল ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত