পাঁচ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্ত টিম

বাবুল হত্যাকাণ্ড

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর মোগলটুলি মগ পুকুর পাড় এলাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনার পর পাঁচটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। এ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর মেলাতে ব্যস্ত তদন্ত টিমের সদস্যরা। ১) হত্যাকান্ডটি কি পূর্ব পরিকল্পিত? নাকি হঠাৎ মুখোমুখি হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ২) নিহত আলী আজগর বাবুলকে কি টার্গেট করেই গুলি করা হয়েছে, নাকি দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ৩) দুই প্রার্থীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় পক্ষ কি এ ঘটনা ঘটাতে পারে? ৪) সংঘর্ষে অংশ নেয়া বহিরাগতরা কার পক্ষের ছিল? ৫) ঘটনাস্থলের সিসিটিভিগুলো নিষ্ক্রিয় এবং ভেঙে দিয়েছিল কারা? এসব প্রশ্নের উত্তরে সিএমপির গোয়েন্দা শাখার উপ পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদ আজাদীকে বলেন, নিহতের ছেলে বাদী হয়ে ১৩ জনকে এজাহারভুক্ত করে মামলা করেছেন। আমরা মামলাটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পাশাপাশি ঘটনাটি কারা, কেন ঘটিয়েছে সেই বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে। সিসিটিভিগুলো কারা কখন ভাঙলো, বহিরাগতরা কাদের পক্ষে ঘটনায় অংশ নিয়েছিল, সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে যারাই সম্পৃক্ত থাকবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত: গত ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে নগরীর মগপুকুর পাড় এলাকায় পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে নজরুল ইসলাম বাহাদুরের অনুসারী আজগর আলী বাবুল (৫৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এছাড়া মাহবুব নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত আজগর আলী বাবুল ও আহত মাহবুব উভয়ই বাহাদুরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে মিন্টু ও অলি নামে দুজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে, যারা কাদেরের অনুসারী।
সংঘর্ষ শুরুর পর কাদের ও তার কয়েকজন অনুসারী মগপুকুর পাড়ে তাহের ভবনের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর ডবলমুরিং থানা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে ভবনটি ঘিরে কাদেরসহ তার অনুসারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থেকে আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এদের মধ্যে কাদেরসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। আদালত কাদেরসহ ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আজগর আলী বাবুলের বাসা নগরীর মোগলটুলি কাটা বটগাছ লেন এলাকায়। বুধবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গলির মুখে পুলিশ মোতায়েন আছে। নজির মঞ্জিল নামে বাবুলের বাড়িটিতে এলাকার লোকজনের আনাগোনা আর থেমে থেমে কান্নার আওয়াজ। গলিপথ জুড়েও মানুষের জটলা। সবার মধ্যেই উৎকন্ঠা। রিকশায় মাইক লাগিয়ে বাবুলের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে এভাবে- ‘চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের গুলি করে এলাকার সর্দার ও আওয়ামী লীগ নেতা আজগর আলী বাবুলকে খুন করেছে। তার নামাজে জানাজা…’
বাবুলের মা জ্যোস্না বেগম আজাদীকে জানান, বাবুল গতবার (২০১৫ সাল) কাদেরের সঙ্গে থেকে তাকে কমিশনার (কাউন্সিলর) বানিয়েছে। তখন এলাকার সবাই বলছিল- বাবুল, তুমি একজন সন্ত্রাসীর পাশে কেন হাঁট ? সেজন্য এবার বাবুল আমাদের আত্মীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের পক্ষ নিয়েছে। বাবুল বিপক্ষে থাকলে কাদের ভোট পাবে না বুঝতে পেরে সে আমার ছেলেকে খুন করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গতবার বাবুল কাদেরের পক্ষে থাকায় বাহাদুর হেরে যান। এবার বাবুল বাহাদুরের পক্ষ নেয়ায় কয়েকদিন আগে কাদের তাকে ফোন করে হুমকি দেয়। মূলত বাহাদুর আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবার পরই কাদেরের সঙ্গে বাহাদুরের দূরত্ব তৈরি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন বলেন, এলাকার মানুষ বাবুল ভাইকে সম্মান করেন। উনি এলাকার সর্দার। উনি যাকে ভোট দিতে বলবেন এলাকার অনেক মানুষ সেটা বিবেচনা করবেন। বাবুল ভাই এবার কাদেরের বিরোধিতা করছিলেন, সেজন্য তাকে খুন করা হয়েছে। কাদের সন্ত্রাস করে নির্বাচনে জেতার পরিকল্পনা করেছিল। মোগলটুলিতে ফাতেমা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি কারখানায় আবদুল কাদেরের নির্বাচনী প্রতীক ব্যাটমিন্টন র‌্যাকেট বানানো হচ্ছিল। কিন্তু ব্যাটমিন্টন র‌্যাকেটগুলো তৈরি করা হচ্ছিল লোহার কাঠামো দিয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল ধারালো পাত। সহিংসতা সৃষ্টির জন্য ব্যাটমিন্টনের নামে ধারালো অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল বলে পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন আজগর আলী বাবুল। মূলত সেখান থেকেই বিরোধের সূত্রপাত হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, সিসি ক্যামেরা নষ্ট দেখে তাদের কাছে ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত মনে হচ্ছে। তবে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে কাদেরের অনুসারীও থাকায় এ নিয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন না।
পুলিশ সূত্রমতে, মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী ঘটনায় আবদুল কাদেরের পক্ষে ফেনীর বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে দেখা যায়। তারা কয়েকদিন আগেই চট্টগ্রামে আসে। তাদের মধ্যে হেলাল অন্যতম। তার বাড়ি ফেনী। মোগলটুলীতে তার বোনের বাসা। ফেনীর প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ক্যাডার হিসেবে হেলাল পরিচিত। মোগলটুলিতে অবস্থান করে সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে। এসব তথ্য পুলিশ এখন যাচাইবাছাই করছে। একই সাথে কাদের ও বাহাদুরের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোন পক্ষ এ ঘটনার মাধ্যমে আখের গোছালো কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দরের নতুন চেয়ারম্যান শাহজাহান
পরবর্তী নিবন্ধআ.লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত একটি মহল