পরীর পাহাড় না কোর্ট হিল

বিবাদ গড়াল আদালতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ‘আদালত ভবন’ খ্যাত ‘কোর্ট হিল’কে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, এমন অভিযোগে বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান ও জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
অপর দুজন হলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল হাসান ও বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আতিকুর রহমান। গতকাল রোববার সকালে তৃতীয় সিনিয়র সহকারী জজ ইসরাত জাহানের আদালতে দেওয়ানী কার্যবিধির ১ নম্বর আদেশের ৮ নম্বর বিধিমতে প্রতিনিধিত্ব আকারে কোর্ট হিলকে পরীর পাহাড় হিসেবে প্রচারণা না চালাতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সমিতির পক্ষে মামলাটি করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়াউদ্দিন। এদিকে শুনানি শেষে আদালত কেন চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না, তা বিবাদীদের কাছে জানতে চেয়েছেন এবং তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন আজাদীকে বলেন, ৭৮ টি আদালতের কোর্ট হিলে বৃটিশ আমলে নির্মিত লাল রংঙের দ্বিতল সুরম্য ভবনটি ‘কোর্ট বিল্ডিং’ তথা ‘আদালত ভবন’ হিসেবে নামকরণ করা হয় এবং সুদীর্ঘকাল থেকে ভবনটি ‘আদালত ভবন’ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু সম্প্রতি আমরা দেখতে পেলাম ‘কোর্ট হিল’কে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে প্রচার করছে জেলা প্রশাসন। আইন অঙ্গনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিষয়টি আইনজীবী তথা আইনজীবী সমিতি মানতে পারে না। যার কারণে আমরা ‘কোর্ট হিলে’র জায়গায় ‘পরীর পাহাড়’ প্রচারণার বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেছি। আদালত সেটি গ্রহণ করেছেন এবং কেন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, আইনীভাবে স্বীকৃত ও বহুল প্রচারিত ‘কোর্ট হিল’কে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে লিখা শুরু করেছেন বিবাদীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ আগস্ট সিডিএকে দেয়া একটি পত্রে ‘কোর্ট হিলে’র জায়গায় ‘পরীর পাহাড়’ উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত পত্রের উপর সিডিএ ‘কোর্ট হিল’কে ‘পরীর পাহাড়’ লিখে গত ১৭ আগস্ট জেলা প্রশাসন বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে সরকারের কোনোরূপ সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন ব্যতিরেকে সিডিএ সচিবকে প্রভাবিত করে ‘কোর্ট হিলে’র জায়গায় ‘পরীর পাহাড়’ লিখতে বাধ্য করা হয়। আরজিতে উল্লেখ করা হয়, একের পর এক জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামে আসেন এবং পূর্বসূরীদের অনুরোধে দেওয়ানী আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশে এবং বেআইনীভাবে হেনস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি কাল্পনিক ইস্যু সৃজন করে শত বছরের স্বীকৃত ঠিকানা ‘কোর্ট হিল’ কিংবা ‘আদালত ভবন’ মুছে বা বাদ দিয়ে কল্পিত ‘পরীর পাহাড়’ সাইন বোর্ড নির্মাণ করে কোর্ট হিলের চতুর্দিকে স্থাপন করতে শুরু করেন। এমনকি বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্ব শাসিত সংস্থাকে পরীর লিখতে বাধ্য করছেন।
এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান আজাদীকে বলেন, কোর্টে যেহেতু মামলা হয়েছে, সেটি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কাগজপত্র দেখে পরবর্তী ধাপে যাব এবং নির্দেশ অনুযায়ী কারণ দর্শানোর নোটিশ বিষয়ে জবাব দেব।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে, আইনজীবীদের ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। কোনোভাবেই এটিকে আটকানো যাবে না। ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় আমাদেরকে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছেন। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপক্ষোয় আছি। সে নির্দেশনা পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করব এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করব।
প্রসঙ্গত, মাস দুয়েক ধরে কোর্ট হিল বা পরীর পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবীরা। জেলা প্রশাসন বলছে, পরীর পাহাড়ে তিনশ’র উপর অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে আইনজীবীদের ৫ টি ভবনও রয়েছে। যেগুলোর কোনো বৈধতা নেই। অন্যদিকে আইনজীবী সমিতি বলছে, তাদের ভবনগুলোর বৈধতা রয়েছে। অবৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে আটকা পাঁচ হাজার কন্টেনার
পরবর্তী নিবন্ধবাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আসছে হরতাল