নেই পর্যাপ্ত ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা

চট্টগ্রামের ২৫ কন্টেনার ডিপো পরিদর্শনে ফায়ার সার্ভিসের ৭ টিম দুই শত পৃষ্ঠার অনুসন্ধান রিপোর্ট ডিজি বরাবরে প্রেরণ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৬ জুন, ২০২২ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের কোন কন্টেনার ডিপোতে পর্যাপ্ত ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা নেই। নেই প্রশিক্ষিত জনবল। আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় কন্টেনার ডিপোগুলো চরম অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। চট্টগ্রামের ২৫টি কন্টেনার ডিপো পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি টিম মহাপরিচালক বরাবরে তদন্ত রিপোর্ট প্রেরণ করেছে। এতে বেশ কিছু সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রামে বর্তমানে পুরোদমে সক্রিয় থেকে কন্টেনার হ্যান্ডলিংকারী কন্টেনার ডিপোর সংখ্যা ১৯টি। অপর একটি ডিপো নতুন করে লাইসেন্স নিয়েছে। তবে এখনো কাজ শুরু করেনি। এর বাইরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ এবং বিকডার সদস্য নয় এমন আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সবকটি মিলে চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ২৫ কন্টেনার ডিপো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি পৃথক টিম চট্টগ্রামের কন্টেনার ডিপোগুলো পরিদর্শন করে ফায়ার সেফটির পাশাপাশি পরিবেশসহ অন্যান্য ছাড়পত্রের কাগজপত্রও সংগ্রহ করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা গত ১৩ এবং ১৪ জুন কন্টেনার ডিপোগুলো পরিদর্শন করে পৃথক পৃথক রিপোর্ট তৈরি করেন। পরবর্তীতে সাতটি টিমের রিপোর্ট সমন্বয় করে দুই শতাধিক পৃষ্ঠার একটি অনুসন্ধান রিপোর্ট গতকাল মহাপরিচালক বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের টিমের অন্যতম সদস্য এবং আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, চট্টগ্রামের সর্বমোট ২৫টি কন্টেনার ডিপোর তালিকা রয়েছে আমাদের কাছে। এরমধ্যে ২২টি ডিপো সচল রয়েছে। তিনটি ডিপো বন্ধ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি টিম উক্ত ডিপোগুলো পরিদর্শন করে। এই পরিদর্শন কার্যক্রম গত মঙ্গলবার সম্পন্ন হওয়ার পর গতকাল ডিজি বরাবরে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে।
পরিদর্শনকালে চট্টগ্রামের কন্টেনার ডিপোগুলোর সবগুলোতেই অনিয়ম ধরা পড়েছে। কোন ডিপোতেই অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কোন কোন ডিপোতে সামান্যতম ব্যবস্থাও নেই। নেই প্রশিক্ষিত লোকবল। অথচ লাইসেন্স নেয়ার সময় তারা অগ্নি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় আইন কানুন অনুসরণ এবং প্রশিক্ষিত লোকবল ও ইকুইপমেন্ট রাখার ব্যাপারে অঙ্গিকার করেছিলেন।
সূত্র বলেছে, গত মঙ্গলবার বিএম কন্টেনার ডিপোসহ সীতাকুণ্ডের অন্যান্য কন্টেনার ডিপো পরিদর্শন করা হয়। তাদের কাছ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সসহ সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন কন্টেনার ডিপোর মধ্যে ৩টিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল) ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই। ছয়টি কন্টেনার ডিপোর মধ্যে শুধু পোর্ট লিংক কন্টেনার ডিপোতে রাসায়নিকের কন্টেনার রাখার তথ্য পেয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক দল। সেখানেও কন্টেনারগুলো অপরিকল্পিতভাবে রাখা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের টিম তাৎক্ষণিকভাবে রাসায়নিকের কন্টেনারগুলোতে পরিকল্পিতভাবে রাখার নির্দেশনা প্রদান করে। এসব কন্টেনারকে অন্যান্য কন্টেনার থেকে আলাদা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রয়োজনে দেয়াল নির্মাণ করে সাধারণ কন্টেনার থেকে রাসায়নিকের কন্টেনারকে আলাদা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পরিদর্শনকালে প্রতিটি কন্টেনার ডিপোকে পরিকল্পিত উপায়ে কন্টেনার রাখার জন্য মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এদের প্রত্যেককেই চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ডিপোগুলোর ভেতর কী কী পণ্য রাখা আছে, কীভাবে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী, সেসব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন নথি ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যেসব ডিপোতে অগ্নিনিরাপত্তামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তাদের সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ডিপোগুলোর ব্যাপারে মহাপরিচালক বরাবরে প্রেরিত দুই শতাধিক পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ডিপোগুলোর কন্টেনার ব্যবস্থাপনার বেহাল দশা তুলে ধরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, শ্রম আইন অনুযায়ী যে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগে কর্মরত শ্রমিকদের কমপক্ষে ১৮ শতাংশকে অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণযন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মধ্য থেকে অগ্নিনির্বাপণ দল, উদ্ধারকারী দল ও প্রাথমিক চিকিৎসা দল (প্রতিটি দলে কমপক্ষে ছয়জন করে) গঠন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এমন ১৯টি কন্টেনার ডিপোর কোনটিতেই এই ধরনের কোন আয়োজন নেই বলেও সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন সদস্য রয়েছেন। যারা আগুন নিভাতে গিয়ে নিজেদের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে ফেলেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনা প্রতিরোধে পরামর্শক কমিটির ৬ দফা সুপারিশ
পরবর্তী নিবন্ধচীনে তৈরি দুটি আধুনিক টাগবোট চট্টগ্রাম বন্দরে