নাসিরাবাদের ২৩ ব্যক্তিকে সাড়ে ৩২ লাখ টাকা জরিমানা

নাগিন পাহাড়ের আশেপাশে পাহাড় কেটে স্থাপনা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীতে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বায়েজিদের পূর্ব নাসিরাবাদ মৌজায় নাগিন পাহাড়ের আশেপাশে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ ও প্লট তৈরির অপরাধে ২৩ ব্যক্তিতে ৩২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল রোববার পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে পৃথক পৃথক শুনানি শেষে অধিদপ্তরের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূরুল্লাহ নূরী এসব জরিমানা করেন। এসব জরিমানার মধ্যে ২৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৫শ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা হয়। এর আগে গত ২৩ ও ২৭ সেপ্টেম্বর নাগিন পাহাড় এলাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে পাহাড় কেটে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন এবং পরিবেশের অবস্থানগত ছাড়পত্র না নিয়ে ৬ তলার ঊর্ধ্বে ভবন করার প্রমাণ পান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এরপর প্রথম দফায় ৩০ জনকে শুনানিতে ডাকা হয়। পরে দুই দফায় আরও প্রায় ৪৫ জনকে শুনানিতে হাজিরের নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর প্রায় ৩৫ জনকে নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকালের শুনানিতে নাগিন পাহাড়ের আশেপাশে পাহাড় কেটে প্লট ও বসতি নির্মাণের অভিযোগে ২৩ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ১৪শ বর্গফুট পাহাড় কাটার পাশাপাশি দুটি টিনশেড স্থাপনা নির্মাণের অপরাধে মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনকে এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, ৮শ বর্গফুট পাহাড় কেটে একটি টিনশেড স্থাপনা নির্মাণের অপরাধে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে ৮০ হাজার টাকা, ৩২শ বর্গফুট পাহাড় কেটে একটি টিনশেড স্থাপনা নির্মাণের অপরাধে ইমারত ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ক্লাবের নুরুল আবছার মিয়া গংকে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ১৫শ বর্গফুট পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অপরাধে মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ১৫শ বর্গফুট পাহাড় কেটে গ্যারেজ নির্মাণের অপরাধে নুরুল আলম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. বদিউল আলম, মো. দিদারুল আলম ও মো. জসিম উদ্দিনকে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ১২ হাজার ৯৬০ বর্গফুট পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের অপরাধে ইউনিটি হাইটসের মো. হাবিবউল্লাহ বাহার ও ভূমি মালিক মো. নাসির উদ্দিন গংকে ১২ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা, ৮৭৫ বর্গফুট পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অপরাধে খোকন শিকদারকে ৮৭ হাজার ৫শ টাকা, ২৩৫০ বর্গফুট পাহাড় কেটে আটতলা ভবন নির্মাণের অপরাধে মোহাম্মদ সাইফুল আলম সুমনকে দুই লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা, ১৬শ বর্গফুট পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অপরাধে মোহাম্মদ শফি, মোহাম্মদ শেখ আবদুল্লাহ, মো. শহিদউল্লাহ, মো. নাছির উল্লাহ, মো. আমান উল্লাহ ও মো. আমিন উল্লাহকে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ১ হাজার বর্গফুট পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহকে এক লক্ষ টাকা, ৮শ বর্গফুট পাহাড় কাটায় মোজাম্মেল হক গংকে ৮০ হাজার টাকা, ১৫শ বর্গফুট পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করার অপরাধে মো. নুরুল আলমকে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং তিন হাজার বর্গফুট পাহাড় কেটে ৭ তলা ভবন নির্মাণের অপরাধে মোহাম্মদ ইছা খান গংকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
নাগিন পাহাড়ে পাহাড় কাটা ও পরিবেশ ছাড়পত্র ব্যতিরেখে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৬ জনকে ৩২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত সময়ে শুনানিতে হাজির না হওয়ায় ১০ জনের বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় পরিবেশ আইনে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরবর্তীতে ৩ অক্টোবর শুনানিতে ২৩ জনকে জরিমানা করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নূরী আজাদীকে বলেন, নাগিন পাহাড় চট্টগ্রাম শহরের একটি নাম করা পাহাড়। এই পাহাড়কে ক্রমান্বয়ে কেটে সংকীর্ণ করে ফেলা হয়েছে। এখানে বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড়-টিলা শ্রেণির ভূমিতে নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বহুতল ভবনও নির্মিত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়ায় গত দুই সপ্তাহে জড়িত অনেককে শুনানিতে ডেকেছি। রোববার পৃথক ১৩টি এনফোর্সমেন্ট মামলায় ৩২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘নাগিন পাহাড় বাঁচবে না?; রাতের আঁধারে মাটি নিয়ে যান প্রভাবশালীরা, পাহাড়ি ভূমিতে তৈরি হচ্ছে ভবন’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আজাদীতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোমা মিজানের মৃত্যুদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধমাইক ব্যবসায় ফিরছে সুদিন