নারী পাচার : পরিপ্রেক্ষিত চট্টগ্রাম

ড. আনোয়ারা আলম | রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ


একুশ শতকে এবং বিশেষত এই মাহমারিতে বিশেষত আর্থিক কারণ আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে পুঁজিবাদ ব্যবস্থা ও পণ্য সভ্যতার ভয়াবহ বিস্তার। ১৮৮৭ সালে মার্কস বলেছিলেন “পণ্য মোহাবদ্ধতা”- নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন- “বহু শতাব্দী ধরে অর্থ বিদ্যার একটি প্রধান লক্ষ্য জীবনযাত্রা উৎকৃষ্টতার বিচারে পণ্য মোহাবদ্ধতার প্রভাব বড়ো বেশি। জীবনযাত্রার ক্রিয়াকর্মের জায়গায় আধুনিক অর্থনীতির লক্ষ্যবস্তু অনেক সময়ে শুধুই পণ্য স্বাচ্ছন্দ্য।” পণ্যের ব্যবহারিক ও বিনিময় মূল্য দুটিই আছে- নারীরও ব্যবহারিক মূল্য অনেক বেশি তবে যখন তারা বাজারের পণ্যে পরিণত হয়, তখন তাদের বিনিময় মূল্যের কাছে ব্যবহারিক মূল্য সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য- যেখানে যুগে যুগে নারী শোষিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত।
বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে পাচারের টার্গেট গ্রুপ হচ্ছে- * ভাসমান নারী * দরিদ্র পরিবারে কর্মহীন নারী * অল্পবয়সী বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত বা তালাকপ্রাপ্ত নারী * নিম্নবর্ণ পরিবারের নারী- * উপজাতি, শরণার্থী বা অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের নারী * পোশাকশিল্প ও গৃহস্থালীতে কর্মরত নারী * গ্রাম থেকে শহরে আসা বস্তিতে বসবাসকারী নারী * তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারে ভোগবিলাসী দরিদ্র পরিবারের অল্পবয়সী মেয়েরা।
বাংলাদেশের অন্যতম শহর কক্সবাজার জেলা- যা দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর প্রাচীন নাম পালংকী। এটি প্যানোয়া নামেও পরিচিত ছিল। কক্স সাহেবের বাজার তথা ইংরেজ অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ১৭৯৯ সালে যে বাজার স্থাপন করেন- সেটিই এখন কক্সবাজার শহর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত- এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত, যা ১২২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই জেলার উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা পূর্বে বান্দরবান ও মায়ানমার এবং দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর জেলার আয়তন ২,৪৯১,৮৬ বর্গকিলোমিটার। সর্ব দক্ষিণের শহর টেকনাফ- মায়ানমার সংলগ্ন বিধায় এর গুরুত্ব অনেক। জেলা শহর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে ৩৬৭ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে এই টেকনাফ উপজেলা- আন্তর্জাতিক নাফ নদী মায়ানমার আর বাংলাদেশের মধ্যে সীমানা হিসেবে কাজ করছে। পর্যটন শহর হিসেবে এখানে নারী ও কিশোরীরা বড়ো ধরনের ঝুঁকিতে।
কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ-পূর্বে উখিয়ার স্থান- উত্তরে রামু ও কক্সবাজার সদর, দক্ষিণে টেকনাফ, পূর্বে মায়ানমার অংশ বিশেষত নাইক্ষ্যংছড়ি ও পাহাড়ি মিয়ানমার সীমান্ত। টেকনাফ সহ পুরো কক্সবাজারের প্রধান সমস্যা রোহিঙ্গা সমস্যা।
১৯৯১ সাল থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিল। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে নির্বিচারে গণহত্যা ও নির্যাতনের কারণে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ১১ লাখের বেশি।
এই সমস্যা একদিনের নয়- কানাডার মন্ট্রিলে কলকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে করা, এস. এম বাহারের The Arakani Roninyas in Burmise society শিরোনামে এক পি.এইচ.ডি থিসিসে উল্লেখ করা হয় যে, যার নামে কক্সবাজার নামকরণ করা হয়েছে সেই ক্যাপ্টেন কক্সই উদ্বাস্তু শিবিরে কাজ করতে গিয়ে মারা যান। ঐ থিসেসে আরো বলা হয় চট্টগ্রামের অনেক অঞ্চলে যেমন কক্সবাজার, রামু, চকরিয়া, মহেশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া, টেকনাফ ও পালং এলাকায় এবং দেশের অন্যান্য জেলায় যেমন রংপুর, দিনাজপুর, মোগলহাট, বরিশালে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ শত শত বছর ধরে বাস করে আসছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে, পাকিস্তান আমলে এদের প্রত্যাবর্তন হয়নি বলে ইতিহাসে প্রমাণ রয়েছে।
বর্তমানে মিডিয়ার কারণে উপলব্ধি করা যাচ্ছে- রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যেমন জড়িত তেমনি অবৈধভাবে সমুদ্র পথে বিশেষত মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে- এবং নারী ও শিশু পাচার ব্যাপকহারে বেড়ে যাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে স্থানীয়দের নেতিবাচক ধারণা- কারণ পাচার হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী এবং পাচারের পরে বিক্রি। উখিয়া-টেকনাফের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে দু’হাজারেরও বেশি নারী ও কিশোরী পাচার হয়ে গেছে- (দৈনিক জনকণ্ঠ ডিসেম্বর-৬-২০১৭)। পাচারকারী ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রলোভন ও লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলছে নারী ও কিশোরীদের। দেশ রূপান্তর পত্রিকার ২০১৭ সালে ১৭ মে এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে এক দালালচক্র স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিদেশে বিশেষত মালয়েশিয়ায় চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচারকৃত অনেক নারীর কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এদের ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়- যাদের অনেকে পালিয়ে এসে এসব তথ্য দেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্যাম্পের মাঝি-প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সবজি, লবণ, সিলিন্ডার ও মোবাইল ফোন বিক্রেতা সেজে ক্যাম্পে ঢুকে পড়ে দালালরা- অতএব সুন্দরী ও অল্প বয়সী মেয়েদের ফাঁদে ফেলে পাচার করে দেয়।
২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ৪,৭৬,১৩৮ নারী কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন- যেখানে বিপুলসংখ্যক নারী চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক স্থানে গেছেন- অভিবাসিত অনেক নারীও বিভিন্ন দেশে গিয়ে পাচার এবং যৌনদাসত্বের শিকার হয়েছেন। ভাসানচরে যেতে অনেকের আপত্তি এবং দুই দফা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা হলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে যেতে রাজি না হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী পাচার।
২০২১ সালের তিন মাসে ২৫ হাজার বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। তাদের মধ্যে নির্যাতিত ও খাবার সংকটে মারা গেছে তিন শতাধিক মানুষ। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় পঁচিশ হাজারের মতো বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মানবপাচারের শিকার হয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে- কক্সবাজার সদর উপজেলায় নয়টি, মহেশখালীর চারটি, উখিয়ার ছয়টি, টেকনাফের ১৭টি, চকরিয়া জেলার দুটি, চট্টগ্রাম জেলার পাঁচটি এবং নগরীর তিনটি পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়াগামীদের জড়ো করে ট্রলারে তুলে দেয় দালালরা। যেসব ৬০টি স্থান দিয়ে নারী ও শিশুসহ তথা মানবপাচার হচ্ছে- এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হলো- কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছাটা, ফিশারিঘাট, নাজিরাটেক, সমিতি পাড়া, মহেশখালির সোনাদিয়া, গোরফঘাটা, কুতুবজোম, ধলঘাটা, উখিয়ার সোনারপাড়া, রেজুরখাল, ইনানী, ছোটখালী, মনখালী, টেকনাফের বাহারছড়া, সাবরাং, মাঝরপাড়া, চকরিয়া, পেকুয়া সহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পাচার করা হচ্ছে শত শত নারীকে।
অভিবাসী অনেক নারী শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয় সৌদি আরবে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সাথে তাদের এক ধরনের যৌন দাসী হিসেবে থাকতে বাধ্য করা হয়। নির্যাতনের ফলে অনেকের মৃত্যু হয়েছে- অনেকে দেশে ফিরে এসেও পরিবারের কাছে আশ্রয় পায়নি। ফলশ্রুতিতে এটিও এক প্রকার পাচারের শ্রেণিভুক্ত হয়েছে।
নারী পাচার পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন-“পাচারের মামলা তদন্ত এবং বিচার যেভাবে হচ্ছে তা সন্তোষজনক নয়-২০১২ সালে আইন হবার পর নারী পাচারে মামলা হয়েছে দুই হাজার ৬শ ৭০টি, রায় হয়েছে মাত্র ১৪টি। এখনো ২১৫৬ টি মামলা বিচারাধীন এবং ৫০০ মামলার তদন্ত চলছে। ”
“এটা কিন্তু কোনভাবেই কমে নাই। কারণ আমরা আগে যে হারে নারীদের ফিরিয়ে এনেছি এখন তার চেয়ে বেশি ফেরত আনা হচ্ছে। আর যে সমস্ত জায়গায় আগে কখনো মেয়ে ছিল না যেমন গোয়া এরকম অনেক রেডলাইট জায়গাতে অনেক বাংলাদেশি মেয়ে আছে।” (বিবিসি বাংলা, ঢাকা ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬)।
নারী অভিবাসনের সাথেও যুক্ত হয়েছে নারী পাচার সমস্যা। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক সংকটে অনেক নারী-বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কিন্তু বৈধ অভিবাসন ও অবৈধ অভিবাসন-এ বিষয়টি অনেকে জানেন না বা না বুঝেই পাচারকারীর টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। চাকরি, বিয়ে ও অর্থের প্রলোভনে নারীদের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন সময় ধরে-যেখানে বড়ো একটা অংশ চট্টগ্রাম বিভাগসহ রোহিঙ্গা নারীরা। নন গভার্মেন্ট অর্গানাইজেশন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি বছর শুধুমাত্র পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৫০ হাজার নারীকে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন বড়ো বড়ো শহরের পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে ২৭ জুলাই ২০২১ এক কালোদিন। ঐদিন ইউরোপগামী ৫৭ জন মানুষ ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান। ২০২১ সালের জানুয়ারি হতে এ পর্যন্ত ভূ মধ্যসাগর রুটে নৌযান ডুবিতে প্রায় ৯৭০ জন মানুষের জীবনাবসান হয়েছে। এ বছর আন্তর্জাতিক মানবপাচার প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-“ভুক্তভোগীর কণ্ঠস্বর আমাদের পথ দেখায়।”-তবে প্রশ্ন জাগে-আদৌ কি পথ দেখিয়েছে? কোভিড-১৯ এর বড়ো ধাক্কা হিসেবে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে রামরু কর্তৃক তৈরি এক প্রতিবেদনে বলা হয়-মহামারির কারণে বৈধ অভিবাসনের পথ সীমিত হয়ে যাবে এবং বেড়ে যাবে অবৈধ অভিবাসনের মাধ্যমে মানব পাচারের সাথে নারী পাচারও। নারী শ্রমিকের একাংশ বৈধ পথে বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে গেলেও-আরেক অংশ অবৈধভাবে যাওয়ার প্রাক্কালে পাচারের মতো ফাঁদে আটকে যাচ্ছে-পরিণতিতে পতিতালয়ে বিক্রি বা গৃহকর্মীর আড়ালে যৌন দাসত্বের শেকলে। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিক অবস্থান করছে। এই করোনাকালেও অবাক হওয়ার মতো কিছু তথ্য আমাদের বিস্মিত করছে-যেমন প্রায় ২০ লক্ষ শ্রমিক অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থান করছে এবং বাংলাদেশ প্রথম সারির মানব পাচারকারী দেশ।
২০২০ সালের ২০ জুলাই এর রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার সূচকে এক ধাপ উন্নতি করেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এই সূচকে বাংলাদেশ মানব পাচার সূচকে টায়ার-টু এ অবস্থান করে-টানা তিন বছর নজরদারির প্রক্রিয়ায় চতুর্থ বছরে আবারও টায়ার-টু স্তরে ফিরে যায় বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ বাংলাদেশ, এর সীমান্ত দিয়ে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে অসংখ্য নারী ও পুরুষ। দেশজুড়ে রয়েছে নারী পাচারকারীদের ভয়াবহ নেটওয়ার্ক। তারা টিকটক, লাইকি, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার-ডিসক ৬, হোয়াটসসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির অ্যাপস ব্যবহার করে পাচারের জন্য নারীদের সংগ্রহ করছে-আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, এরকম ৩০টির বা তারও বেশি চক্র সারাদেশে বিস্তৃত রয়েছে। অনেকে গৃহপরিচারিকার লোভ দেখিয়ে পাচার করছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। বছরে দেশ থেকে ২০ হাজার নারী কিশোরী ভারত, পাকিস্তান অথবা ভারত হয়ে অন্য দেশে পাচার হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ বছরে ৫০০ নারী ও আট বছরে ১ হাজার নারী পাচার হয়েছে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। এই পাচারকৃত নারী এক বড়ো অংশ রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী। রোহিঙ্গা শরণার্থী নাজমা বেগম জানান, ৭ মাস আগে তার মেয়ে পাচারের শিকার হয়-দুইদিন পরে তাকে যশোর থেকে উদ্ধার করা হয়। রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে পালাতে না পারে সে জন্য কঠোর নির্দেশ থাকলেও অনেকে এদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে-তুলে দিচ্ছে দালালদের হাতে। কক্সবাজার জুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেক দালাল-পর্যটন শহর কক্সবাজারের রাত ও দিন যতোখানি রঙিন-তার চাইতেও বেশি অন্ধকারে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী-
পাচারের কৌশলে পাচারকারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নারী ও কিশোরীদের সীমান্তের কোন এলাকায় নিয়ে যায়-সীমান্ত জনপদে অনেক ট্রানজিট হোম রয়েছে যাকে পাচারকারীরা বলে “ধরে ধর”- নারী ও শিশুদের সংগ্রহকারী দেশীয় দালালদের বলা হয় ‘পোক’। অবৈধ পারাপারের স্থানকে ‘ধুড়’ বলে-দেশের দক্ষিণ পশ্চিম এলাকায় “ধর”-ব্যবসা জমজমাট। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই পদ দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেয়- এই ‘ধর’ পাচারের অন্তরালে চলে নারী পাচার ব্যবসা।
পাচারের কৌশল পদ্ধতি হিসেবে চাকরির প্রলোভন, প্রেমের অভিনয়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি, দর্শণীয় স্থান পরিদর্শনের টোপ, ভাল খাবার খাওয়ানোর লোভ, আর্থিক প্রলোভন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অপহরণ ও প্রতারণা এবং আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানোর জন্য ছলচাতুরী, পারিবারিক কলহের সুযোগ-সবচাইতে বেশি রোহিঙ্গা নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য-তা হলো ভাসমানদের পুনর্বাসনের নামে ফাঁদ।
পাচারকারীরা হচ্ছে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণকারী ও তাদের সহযোগী, হোটেল রেস্তোরাঁ ও বারের মালিক ও তাদের সহযোগী, আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য, চোরাচালানকারী, পূর্বে পাচারকৃত নারী, পতিতালয় পরিচালনাকারী, বস্তি পরিচালনাকারী। আর এদের সহযোগী হচ্ছে দূর সম্পর্কের আত্মীয়, নিজের বন্ধু, স্বল্প সময়ের পরিচিত ব্যক্তি, ভণ্ড ধার্মিক, বহু বিবাহকারী।
নারী পাচার রোধে প্রয়োজন সমম্বিত কর্মসূচি যা প্রধানত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত-নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা। নারীর শরীর নিয়ে বেচাকেনা আজকের ঘটনা নয়- সেই আদিকাল থেকে এর সাথে যুক্ত হয়ে আছে পতিতাবৃত্তি। তাই ১৯৩৩ সালে নারী প্রণীত হয়েছিল-“The Suppression of Immoral Traffic Act, 1933,” আজ পর্যন্ত এই আইনের উপর ভিত্তি করে নারী পাচার বিরোধী আইনগত কার্যক্রম চলছে। ১৭ জুলাই, ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন সম্পর্কিত বিশেষ বিধান কল্পে প্রণীত আইনে নতুনভাবে নারী পাচারের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ সালে প্রণীত এই আইন প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ২০০০ প্রণীত হয়। এই আইনের ধারা ৫, ধারা ৭ এ নারী পাচার এবং নারী ও শিশু অপহরণ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা রয়েছে।
নারী ও শিশু পাচার রোধে জাতীয়ভাবে প্রণীত নীতি ও আইনের ধারা ৩৬০ থেকে ধারা ৩৭৩ পর্যন্ত নারী পাচারের বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ১৯৭৪ সালের শিশু আইন, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, কনভেনশন অন দি রাইট অফ দ্য চিলড্রেন, সিডও দলিল-মানবাধিকার সর্বজনীন ঘোষণাপত্র-ধারা ১৩ (ক) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩ প্রণিত হয়। দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন হিসেবে পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করছে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, এনজিও সংস্থা হিসেবে CWCS, BNWLA, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ATSEC, উবীনিগ, উদ্দীপন, বিটাসহ বিভিন্ন সংস্থা। তবে আইন আছে, বিভিন্ন সংস্থা আছে কিন্তু নারী পাচার-কি কমছে?
সময়ের প্রবাহে মানবপাচার বাড়ছেই। ২০১২ সালে পাচার রোধে আইন হয়েছে-২০১৮ পর্যন্ত ১৫২টি মামলা হয়েছে-কিন্তু অভিযুক্তদের শাস্তি হয়নি। শুধু কক্সবাজারে ৬৫০ এর মতো মামলা হয়-কিন্তু এখনো পর্যন্ত একটারও নিষ্পত্তি হয়নি। (বরেন্দ্র বার্তা, ৮ জুলাই ২০২০) কোনরকম ক্ষতিপূরণ পায়নি ভুক্তভোগীরা। অনেক ক্ষেত্রে এসব মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা শক্তি কর্মসংস্থান অফিসের জরিপ অফিসারকে তদন্তের ন্যূনতম ধারণা না থাকার কারণে এসব অফিসারেরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়-ফলে রিপোর্ট হযবরল আকারে জমা হয় আদালতে। মানব পাচারকারীরা সুসংগঠিত, ক্ষমতাশালী এবং নেটওয়ার্ক পুরো বিশ্বজুড়ে। ফলে এই অপরাধ দিনে দিনে বিস্তৃত হচ্ছে। রোহিঙ্গা নারীদের পাচারের পয়েন্টগুলো হচ্ছে টেকনাফের শামলাপুর, শীলখালি, রাজারছড়া, জাহাজপুরা, সবারাং, শাহপরীর দ্বীপ, কাটবানিয়া, মিঠাপানির ছড়া, জালিয়াপালং, ইনানী, হিমছড়ি, কুতুবদিয়া, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি, মহেশখালী, সীতাকুণ্ড-মালিরঘাট। এলাকাগুলো যারা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা গেছে নিয়ন্ত্রণকারীদের নাম সাধারণ মানুষের কাছেও চিহ্নিত-যদিও চক্র এটোটাই শক্তিশালী-যেখানে নতজাতু হতে বাধ্য হয় অনেকে। রোহিঙ্গাদের দিয়ে যখন রোহিঙ্গা নারী পাচার হয়-তখন প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকে মাইকিং করলেও সচেতনতা বাড়ানো যাচ্ছে না।
আইন রাষ্ট্রের জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য রচিত হলেও-আইন প্রয়োগে রয়েছে দুর্বলতা এবং দুর্নীতিও আছে। বাংলাদেশের নারীদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে-নারী শিক্ষার হার কম বিধায়-অনেকে আইনগত অধিকার সম্পর্কে অসচেতন-অনেক শিক্ষিত নারীও আর্থিক দুর্বলতা বা অজ্ঞতার কারণে আইনের সাহায্য নিতে পারেন না। অনেক সময়ে পাচারকৃত নারী উদ্ধার হলেও আর্থিক দুর্বলতা বা বিপক্ষ দলের ভয়ভীতির কারণে আইনের দ্বারস্থ হতে পারে না।
আইন পুলিশের হাতে প্রভুত ক্ষমতা দিয়েছে- সহজেই তার অপব্যবহার হতে পারে। রোহফ্রিৎস (১৯৯৫ : ১১) লিখেছেন-“ আইন কাউকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা পুলিশকে দিয়েছে এবং অধিকাংশ সময়েই কোন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধান ছাড়াই তদন্ত পরিচালনা এক্তিয়ার দিয়েছে। পুলিশই প্রথম জানতে পারে কারা অপরাধী-এখানেই তাদের ক্ষমতার বিপুলতা অনুমেয়। বাস্তব ঘটনায়ও তার পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন কোন অপরাধের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা একেবারেই অবাধ বা নিজস্ব মর্জি মাফিক ব্যবহৃত হতে পারে। ফৌজদারী আইনের ১৮৯৮ (৫৪) ধারা অনুযায়ী যে কোন পুলিশ অফিসার যে কোন ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কোন নির্দেশ বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে।”
পাচারের বিরুদ্ধে আইন আছে- এরপরেও বেড়ে যাওয়ার কারণ-সমাজে নারীর দুর্বল অবস্থান বিশেষত প্রান্তিক এবং শরণার্থী পর্যায়ের। যুক্ত হয় দারিদ্র্য, দুর্নীতি, অশিক্ষা এবং পরনির্ভরশীলতা আর পুরুষ তান্ত্রিকতা। কোর্ট-মামলা মোকাদ্দেমা এগুলো জটিল এক অন্ধকার জগত-প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের কাছে- পাচারের শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড হলেও তা সচরাচর কার্যকর হয় না। যে কারণে এই ঘৃণ্য ও অমানবিক অপরাধ নির্মূল করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নারী পাচার প্রতিরোধে যে কৌশলগুলো নেওয়া যায়- * গ্রাম/ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলা। *গণসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গ্রামে গঞ্জে বস্তিতে পাচার বিরোধী বিভিন্ন লিফলেট, স্টিকার, পোস্টার, হ্যান্ডআউট, সংবাদপত্র ছাপিয়ে বন্টন করা, * ইউনিয়ন পরিষদ সভা, স্কুল/মসজিদে পাচারবিরোধী জনসভার আয়োজন করা। * পাচারকারীদের উপর প্রশাসনিক নজর বাড়ানো, পাচার কৌশলকারীদের চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সোপর্দ করা। পাচার বিষয়ে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্তি করা * প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে প্রণোদনামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া * পাচারকৃত পরিবার কর্তৃক মামলা পরিচালনায় সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
একই সাথে পাচারকৃতকে উদ্ধারের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন। পাচারকৃত যারা উদ্ধার হয়-তাদের পুনর্বাসনে পরিবার ও সমাজ নেতাদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
নারী পাচার বিষয়ে যারা কাজ করছেন তাদের পরামর্শ হলো- সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে টিকটক বা বিগো লাইভে আকৃষ্ট করে নারী এবং বিশেষত কিশোরীদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে- তা কঠোরভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় এনে যথাযথ মনিটরিং এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে- এ ব্যাপারে মিডিয়া বিশেষতঃ ইলেকট্রনিক মিডিয়া বড়ো ভূমিকা রাখতে পারে। বিদেশে যেসব নারী যাচ্ছেন-তাদের কি কাজে পাঠানো হচ্ছে তার সঠিক তথ্য এজেন্সিগুলো থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে ডাটা আকারে থাকতে হবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মেয়েরা-পাচারের ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের ঝুঁকিতে আছে। সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিচয় পত্র (আইডি কার্ড) তৈরি করাসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে কিশোরীদের সুরক্ষায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। পাচার বন্ধে “মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ আছে। এই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি। আইনি সহায়তা পেলে আক্রান্ত নারী ও শিশুদের সুরক্ষার-বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। রোহিঙ্গা কিশোরীদের নিরাপত্তা দিতে ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর যাতে ক্যাম্পগুলো কোনভাবেই অরক্ষিত না থাকে। পাশাপাশি কক্সবাজারের মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনকে যুক্ত করে কারও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন না করে নিয়মিতভাবে অভিযুক্ত স্থানীয় হোটেল, বাড়িতে তল্লাশী চালানো, মেয়েদের সচেতন করা- এ কাজগুলো করা দরকার। একই সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মানবাধিকার কর্মী-জনপ্রতিনিধি, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং সুশীল সমাজের সমন্বয়ে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের পাচার থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। মানবপাচার বিরোধী আইনের অধীনে ছয় হাজারের বেশি মামলাও হয়েছে- কিন্তু খুব বেশি রায় হয়নি-বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাব ও গডফাদারদের প্রভাবে আসামীরা খালাস পেয়ে গেছে। বাস্তবিক অর্থে মানবপাচার একক কোন দেশে কাজ করে না- এটি আন্তর্জাতিক চক্র। তৃতীয় বৃহত্তম আন্ডার গ্রাউন্ড বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এরপরেও এই সমস্যা নিরসনে পাচারীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বিবেচনায়, সরকারকে অন্যান্য দেশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে-আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সুসংগঠিত নারী পাচারের নেটওয়ার্কগুলোকে অকার্যকর করে এই অপরাধ দমন করতে হবে। পাচার প্রতিরোধে মানুষকে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে-একই সাথে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি প্রয়োজন।
লেখক : সাহিত্যিক; সাবেক অধ্যক্ষ, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোরবানীগঞ্জের লেখকত্রয়ী
পরবর্তী নিবন্ধফিনলে সাউথ সিটি : আগামীর নতুন ঠিকানা