নামে স্টাফ কোয়ার্টার দখল সন্ত্রাসীদের

অর্ধেকের বেশিতে বহিরাগত, অর্ধেক খালি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২২ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনি। বিশাল কলোনি জুড়ে স্টাফদের সারি সারি কোয়ার্টার। রেলের স্টাফদের জন্য তৈরি হয়েছে এসব কোয়ার্টার। তবে সন্ত্রাসীদের কারণে এখানে থাকতে পারেন না রেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। নামে রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টার হলেও এই বাসাগুলো সন্ত্রাসীদের দখলে। বরাদ্দ দেয় তারাই।
গত দুদিনে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রায় ২শ বাসার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আমবাগান এলাকা দিয়ে প্রবেশের পর কয়েকটি বাসায় রেলওয়ের স্টাফরা থাকেন। অর্ধেকের বেশিতে থাকেন বহিরাগতরা। অর্ধেক বাসা খালি। ৩ থেকে ৪টি বিল্ডিং প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এগুলোতে চলাচলের রাস্তাও নেই। এখানে জমিদারি চলে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের। তাদের ভয়ে এই কলোনিতে রেলওয়ের স্টাফরা থাকেন না।
রেলের সমস্ত স্টাফ কোয়ার্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন রেল পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২। রেলের একাধিক স্টাফের অভিযোগ, টাইগারপাসে বিশাল রেলওয়ে কলোনিটাকে ‘পরিত্যক্ত’ করে রাখার পেছনে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ দায়ী। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে তার যোগসাজস রয়েছে। স্টাফ কোয়ার্টারে স্টাফরা না থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এখানে চলাচলের ভালো রাস্তাও নেই। ভাঙাচোরা রাস্তা আর ড্রেন একাকার হয়ে গেছে। অনেক বাসার নিচতলা পানিতে ডুবে যায়। স্টাফরা না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব বাসা বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে। বিভাগীয় প্রকৌশলীর চেয়ারে যিনি আসুক তার কাছে প্রতি মাসে চলে যায় লক্ষ টাকার ভাগ। রেলওয়ের প্রায় কলোনির সামনের খোলা জায়গাও ঘর করে ভাড়া দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আহসান হাবীব আজাদীকে বলেন, স্টাফ কোয়ার্টারগুলোর দায়িত্ব আমার, সেটা ঠিক আছে। আপনি যত অভিযোগ করেছেন তা আমি শুনেছি। এই ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সরদার সাহাদাত আলী আজাদীকে বলেন, টাইগারপাসের এই কোয়ার্টারগুলোতে উচ্ছেদ করতে গেলে অনেক সময় সমস্যা হয়। তাই এবার আমরা নতুন সিস্টেম করেছি। আমরা যার নামে কোয়ার্টারগুলো বরাদ্দ দিয়েছি তাদের একটা তালিকা তৈরি করছি। তাদেরকে স্ব স্ব দপ্তরের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে জানানো হবে বরাদ্দকৃত বাসায় যদি ওই স্টাফ না থেকে বাইরের কাউকে ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে তার বাসা বরাদ্দ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিত্যক্ত বাসাগুলোর ব্যাপারে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এগুলো সার্ভে করে ভেঙে ফেলব।
অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, আমবাগান দিয়ে প্রবেশ মুখের একটিসহ ভেতরের বেশ কয়েকটি বিল্ডিং ভাড়া দেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে রং করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ রয়েছে, রেল কর্তৃপক্ষ স্টাফ কোয়ার্টারগুলো তাদের স্টাফদের জন্য মেরামত করে রাখলে তার পরদিনই স্থানীয় সন্ত্রাসীরা দরজা-জানালা ভেঙে দেয় অথবা খুলে নিয়ে যায়। বিদ্যুতের তার কেটে নিয়ে যায়। যার ফলে পুরো কলোনিতে চলছে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব।
অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম আজাদীকে বলেন, এখানে আগে একবার উচ্ছেদ করেছিলাম। করোনার পর আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। এখন উচ্ছেদ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনাদের প্রতিবেদন এলে এটা দিয়ে একটা মাঠ প্রতিবেদন তৈরি করে আবার উচ্ছেদ করা হবে।
গতকাল বিকালে টাইগারপাস স্টাফ কলোনি ঘুরে আসার সময় সর্ব দক্ষিণে ক্রসিং গেটের পাশের গলির এক বিল্ডিয়ের সামনে দেখা হয় এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বিল্ডিংয়ের সামনের জায়গায় কয়েকজনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি রেলওয়েতে সাব-কন্ট্রাকটারের কাজ করেন বলে জানান। রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টারে কিভাবে থাকেন জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, যার কোয়ার্টার তার থেকে নিয়েছি।
কোয়ার্টারের সামনে খালি জায়গায় গড়ে তুলেছেন নানা জাতের সবজির বাগান। সামনের খালি জায়গা দখলের পর রাস্তার দক্ষিণ পাশে গড়ে তুলেছেন একটি কবুতরের খামার। খামারটি কার জানতে চাইলে এটা তার নিজের বলে জানান ওই ব্যক্তি। গত দুদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাইগারপাস রেলওয়ে স্টাফ কলোনির বেশিরভাগ বিল্ডিংয়ের চিত্র এমন। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখানে বসবাসকারীদের কেউ মুখ খুলতে চান না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযেখানেই দুর্নীতি সেখানেই অভিযান চলবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধদগ্ধ গৃহবধূকে নেওয়া হলো ঢাকায়