নানা রকম ড্রাগন

রাজন বড়ুয়া | বুধবার , ১৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

ড্রাগন বলতে আমরা সাধারণত এক ধরনের কাল্পনিক জীবকেই জানতাম যা নাকি মুখ দিয়ে আগুন বের করতে পারে। ড্রাগন নিয়ে মানুষের কৌতুহলের যেন শেষ নেই। সমপ্রতি আমরা জানছি ড্রাগন ফলও আছে। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, বহু প্রাচীণ ড্রাগন গাছও রয়েছে। এখন ড্রাগন সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

ড্রাগন (প্রাণী): ড্রাগন হলো পৌরাণিক প্রাণী। ড্রাগনকে নিয়ে মানুষের কল্পনার যেন অন্ত নেই। পৌরাণিক প্রাণী হিসেবে ড্রাগন প্রাচীণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যে উপস্থিত হয়েছে। ড্রাগনের গড় আয়ু প্রায় ১২০০ বছর। ড্রাগন সর্বভুক অর্থাৎ উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ই খায়। এদের মাংস খাওয়ার জন্য ধারালো দাঁত এবং গাছপালা খাওয়ার জন্য চ্যাপ্টা দাঁত রয়েছে। চীন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের উপকথায় এই জীবের অস্থিত্ব পাওয়া যায়। মনে করা হয়, এই জীব উড়তে পারে। এই ড্রাগন নিয়ে অনেক দেশে ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে। কমোডো ড্রাগন হলো ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পশু। চীনের ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ড্রাগন বোট রেসিং যুক্তরাজ্যে জনপ্রিয় খেলাগুলোর অন্যতম।

ড্রাগন (ফল): ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল মধ্য আমেরিকা হলেও ২০০৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে এর ব্যাপক চাষ লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে আমাদের দেশের পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ড্রাগন ফল। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus undatus । একধরনের ফনীমনসা প্রজাতির। এই ফলটি সাদা, লাল, হলুদ, গোলাপীসহ একাধকি রঙের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের গাছে কোনো পাতা নেই। কাণ্ডগুলো লতানো প্রকৃতির। এই গাছে ফুল রাতেই প্রস্ফুটিত হয়। তাই এই ফুলকে রাতের রাণীও বলা হয়। ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ড্রাগনফল ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া এতে বিটাক্যারোটিনের উপস্থিতির কারণে চোখের জন্য উপকারী। ড্রাগন ফল হজমি শক্তি বাড়ায়।

ড্রাগন (গাছ) : আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে ক্যানারি দ্বীপে মূলত ড্রাগন গাছ দেখা যায়। ড্রাগন গাছ দেখতে অনেকটা খাড়াভাবে খুলে রাখা ছাতার আকৃতির। ড্রাগন গাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শুষ্ক পরিবেশে পহাড়ের চূড়ার মতো জায়গায় কিংবা কম মাটিতেও বাষ্পীভবন হ্রাস করার মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্ক বড় গাছগুলোর নীচে গজানো চারাগুলির বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

গ্রিক পুরান অনুযায়ী, হরাকিউলিসকে হেসপেরাইডস এর বাগান থেকে তিনটি সোনার আপেল আনতে হতো। এই আপেল পাহারা দিচ্ছিল শতমুখী ড্রাগন ল্যান্ডন। ড্রাগনকে না মেরে আপেল ফিরিয়ে আনা অসম্ভব ছিল। হারকিউলিসের সঙ্গে যুদ্ধে ড্রাগনের মৃত্যু হয়। ড্রাগনের গাঢ় লাল রঙ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সেই রক্ত থেকেই নাকি এই ড্রাগন গাছের জন্ম। আর সেই থেকেই ড্রাগনের রক্ত বুকে করে বয়ে নিয়ে চলেছে এই গাছ। ওই গাছ কাটলে রক্তের মতো লাল রঙের ডে উপক্ষার বের হয়, গবেষকরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, ওগুলো নাকি আসলে রেজিন। প্রাচীনকালে এই উপক্ষার দিয়েই পেটের নানা রোগের ওষুধ তৈরি হত। তা ছাড়া বিভিন্ন রঞ্জক হিসাবে, টুথপেস্ট তৈরি করতেও এটি কাজে লাগানো হতো।

প্রতি ৩/৪ বছর পরপর পরিপক্ক পাতা ঝরে পড়ে। এরপর নতুন পাতা জগায়। এর ফলগুলো ছোটো মাংসল যার প্রতিটিতে একটি থেকে তিনটি বীজ থাকে। পাকা ফলগুলো কমলা রঙের। পাতাগুলো ২৪ ইঞ্চি লম্বা এবং ১.২ ইঞ্চি প্রশস্ত হয়। ড্রাগনের কাণ্ড এবং শাখাগুলো পুরু এবং স্থুল যেখানে প্রতিটি শাখা বারবার দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। ড্রাগন গাছে সাধারণত মার্চের দিকে ফুল আসে। সুগন্ধযুক্ত ফুলগুলো সাদা বা সবুজ রঙের ছোট গুচ্ছাকারে থাকে। ফল সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক হতে ৫ মাস সময় লাগে।

গ্রীক, রোমান এবং আরবের লোকেরা এটিকে সাধারণ ক্ষত নিরাময়ে, রক্ত জমাট বাঁধা, ডায়েরিয়া নিরাময়ে, আমাশয় রোগের জন্য কিংবা জ্বর হলে ব্যবহার করতেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজয় বঙ্গবন্ধু
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে নারী ও শিশুসহ ৩৪ রোহিঙ্গা আটক