খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে বিশ্ব শাসন ব্যবস্থা। জটিল রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার যাতাকলে পিষ্ঠ লাখ–লাখ অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ প্রতিদিন নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতার তকমা লাগাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে জলে–স্থলে। পাড়ি দিচ্ছে সাগর–মহাসাগর। সামনে ধেয়ে আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক শরণার্থী সঙ্কট। এতে শরণার্থীদের একটি তরঙ্গ সৃষ্টি করবে যা বিশ্ব কখনও দেখেনি।
রাশিয়ার অপ্রতিরোধ্য হামলায় একটি মানবিক ট্র্যাজেডির জনপদে পরিণত হলো ইউক্রেন। যুদ্ধের একবছর পর–এখন মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে ইউক্রেন। হিমশীতল ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে এপর্যন্ত পোলান্ড সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০লাখেরও বেশি নিরাপরাধ মানুষ শরণণার্থী হিসেবে ইউক্রেন ছেড়ে
পালিয়েছে। ইউক্রেনের সরকার বলেছে –এ পর্যন্ত যুদ্ধের ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে ৫১বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ শহর থেকে ২শমাইল দক্ষিণে শিল্প শহর কালেনিভকার আটটি তেল ট্যাংকারে রাশিয়ার ক্রজ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায়ে ১মিলিয়ন গ্যালেনেরও বেশি তেল মাটিতে প্রবেশ করেছে।
পানীয় জলের সংকটে এ শহরের মানুষ বাড়ি ফিরে ডিজেল পান করছে বলে পশ্চিমা গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে এ ডিপোর শিফট সুপার ভাইজার সিডোরেন্েকা বলেছিলেন। অপরদিকে সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধ এখন পর্যন্ত একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে। আফগানিস্তান,
নাইজেরিয়া, হাইতি, বার্মা সহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে শরনণার্থীর স্রোত ঠেকাতে ইউরোপ –আমেরিকা হিমশিম খাচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকার কালিফোনিয়া এবং ক্যানটাকিতে প্রচণ্ড দাবদাহ ও বন্যায় হাজার–হাজার মানুষকে সরাতে হয়েছে। মারাত্মক বন্যা–ধোয়া জলাবদ্ধতার কারণে ফ্রান্সের গিরোন্ডার অঞ্চল থেকে দশ
হাজার লোককে সরাতে হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী সংকটের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চোখে পড়ার মত। সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট উদ্বাস্ত নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ইউরোপ ও পশ্চিমাবিশ্বকে। মূলত: যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ বছর ধরে আফগানিস্তানের মাটিতে যুদ্ধের ব্যয় ছাড়াও
শুধুমাত্র আফগান শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য ১৩.৩ বিলিয়ন বরাদ্দ গুনতে হয়েছে। জাতিসংঘের এক হিসেবে দেখা যায়, বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, আগামী এক দশকে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। যুদ্ধের
চেয়ে বেশি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তচ্যূত হয়েছে। আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ পৃথিবীর নিরক্ষরেখার কাছাকাছি দরিদ্র দেশের মানুষ ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে পারবেন, বা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন। ফলে দেশে–দেশে অভিবাসনের চাপ বাড়বে।
আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড মিলিব্যান্ড উদ্বাস্তু সংকট সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটি কেবল একটি সংকট নয়, এটি একটি পরীক্ষা। এটা আমাদের মানবতার পরীক্ষা। এটি পশ্চিমা বিশ্বে আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা – আমরা কারা এবং আমরা কীসের পক্ষে দাঁড়িয়েছি’।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে জলবায়ু স্থানচ্যূতি বিশ্বের শহরগুলিতে ব্যাপক অভিবাসন যোগ করবে। জলবায়ু অভিবাসনের এ সমস্যাটি এখন জরুরি। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ইউনাইটেড ন্যাশসনস ক্রাইমেট চেন্জ কনফারেন্স (কপ–২৮) সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ ব্যাপারে ব্যাপক রুপরেখা আসবে।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক