দুঃসময়ে পরিবারের পাশে থাকুন

ফারহানা ইসলাম সুমি | রবিবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

আলহামদুলিল্লাহ,আজ আমার দ্বিতীয় জন্মের ৬ষ্ঠ জন্মদিন। ২০১৬ সালে আমার দুই কিডনি নষ্ট হয়ে যায়, নয় মাস ডায়ালাইসিসের পর ২০১৭ তে আজকের এইদিনে আমার নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন হয়।। ভারতের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতালে। প্রতিটি মানুষ জীবনে কখনো না কখনো খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয়, তখন মানুষ বুঝতে পারে অসহায়ত্ব কি! ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালে ভয়াবহ দুঃসময় পেরিয়ে আমি জীবনকে আবার নতুন ভাবে চিনতে শিখেছি। অসুস্থতা সময় আমি পেয়েছি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ, পেয়েছি কাছের দূরের অনেক মানুষের হৃদয় উপচানো ভালবাসা। আবার পেয়েছি অনেকের করুণা, শুনেছি মানুষের আহারে।

সুস্থতা জীবনের সবচেয়ে বড় নেয়ামত, একটা সময় জীবনের অনেক কিছু পাওয়া না পাওয়ার ভাবনায় কত শত কষ্ট পেয়েছি, প্রয়োজনহীন মানুষের কথায় কষ্ট পেয়েছি। এখন সব না পাওয়াকে অবলীলায় তুচ্ছ করতে পারি। এখন শিখেছি ক্ষুদ্রতাকে জয় করতে। নিজেকে অবদমন করতে, অনায়াসে মানুষকে ক্ষমা করতে। এখন জীবনের মামুলি ছোট খাট কষ্ট আমার কাছে হাস্যকর বিষয় ছাড়া কিছুই নয়। হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের বিছানা আমাকে শিখিয়ে, বেঁচে থাকার চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। খুব সহজে চাইলেই জীবনের যেকোন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায়। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই।

আমাদের একটু পজেটিভ ভাবনা আমাদের জীবনকে সহজ করে দে। আমি খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি, একটা মাত্র জীবন আমার তাও আবার খুব ছোট। তাই জীবন এখন আমাকে প্রচন্ড টানে। খুব মায়াময় লাগের জীবনের সব কিছু। আমার এই অসুস্থতা সাথে কাটানোর দীর্ঘ সময় আমার পাশে ছিল দুজন মানুষ। আল্লাহ আমাদের জীবনে কিছু ফেরেস্তা পাঠান মানুষ রূপে, যেন ওরা আল্লাহর রহমত আর উছিলা হয়ে আমাদের পাশে থাকে। আমার জীবনে তাদের একজন আমার স্বামী আর একজন আমার ছোট ভাই। আল্লাহর পর ওরা না থাকলে হয়ত এতদিন আমার আর পৃথিবী আলো দেখা হতো না।

আমি পৃথিবীর ভাগ্যবতী মেয়েদের একজন যার জীবনের আমার মত জীবনসঙ্গী আর আমার ভাইয়ের মত ভাই আছে। সবাই আমার পরিবার আর আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। পরিশেষে বলতে চাই, দুঃসময়ে পরিবারের পাশে থাকুন। পরিবারের চেয়ে বড় শক্তি নেই। প্রিয়জনের চেয়ে বড় কোন সম্পদ নেই। সুন্দর সুস্থ একটা পরিবার আল্লাহর দেওয়া রহমত। প্রয়োজনে প্রিয়জনকে কিডনি দিন।

আপনার একটা কিডনিতে আপনি যেমন বাঁচতে পারবেন, বাঁচাতে পারবেন আপনার আপনজনকেও। আমার আজকের লেখার পেছনের মূল কারণ হল : কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা। দেশে এখন প্রতি ৪ ভাগের ১ ভাগ কিডনি রোগী। অথচ আমাদের দেশের ৯৫% মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পর্কে কিছুই জানে না। সেখানে মেয়েদের কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে ১% মানুষও সচেতন নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোহাম্মদ নূরুল আলম স্মরণে
পরবর্তী নিবন্ধএবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ও প্রাসঙ্গিক কথা