দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে আইনের প্রয়োগ

মাহমুদা খাতুন | শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ১২:১৭ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ সরকার নারী নির্যাতনরোধে ও নারীর অধিকার সংরক্ষণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় হালনাগাদ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও সংশোধনেও কাজ করছে। সহিংসতার শিকার নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে অধুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ ও এর সংশোধন ২০০৩ আইনও হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যমান আছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২০, শিশু একাডেমি আইন-২০১৮, বাল্য বিবাহ নিরোধ বিধিমালা-২০১৮, যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩), পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা বিধিমালা-২০১৩, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ ইত্যাদি। এসব আইন, অধ্যাদেশ ও সংশোধনীতে নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু আইনের প্রয়োগ কতটা হচ্ছে? যাদের জন্য এই আইন তারা কতটা এসব আইনের সুফল পাচ্ছেন? এসকল সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্র তাদের অভিগম্যতা কতটুকু? আইনের যথাযথ প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভুক্তভোগী নারীরা আইনি অধিকার পাওয়ার অভিগম্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শাস্তির বিধান দিয়েই অপরাধ দমন করা যায় না। আইনের বিষয়বস্তুর সীমাবদ্ধতা, আইনের প্রক্রিয়াগত সীমাবদ্ধতা এবং আইন বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিদের সীমাবদ্ধতা (দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণগত) এসবও বহুলাংশে মানে রাখে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০২১ সালে সারা দেশে শুধু নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা আনুমানিক ১৯ হাজার। বিশেষজ্ঞদের দাবী ২০২২ সালে তা আরও বাড়বে।

এসব আইন ব্যবহার করে সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে সাধারণত মামলায় যেতে হয়। আর এই মামলার তদন্তভার ন্যস্ত হয় সাধারণত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের উপর। প্রশ্ন আছে তদন্ত প্রক্রিয়া ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা নিয়েও। অনেক সময় সহিংসতার শিকার নারী মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে এবং সামাজিক চাপে আপোষ করতে বাধ্য হয়। এই প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নের জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগী নারীর বিচার নিশ্চিত করার জন্য আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতার শিকার নারীর বিচার পাওয়ার অভিগম্যতায় আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ দাবী রাখে।

এমনিতেই করোনাকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপি নারী ও শিশু নির্যাতনের মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে। বাংলাদেশে এই হার আরো বেশি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতনের ঘটনা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এই সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের নারী ও শিশুরা। অথচ দেশে যুগোপযোগী অনেক আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে অপরাধ বাড়ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দুষ্কৃতকারীরা নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধ করেও বিচারের আওতায় আসছে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শুধু সরকারই নয়, দেশের সুশীল সমাজ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুধাকণ্ঠ প্রেম
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব গণমাধ্যম এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সংবাদ প্রকাশ করে