দলিল রেজিস্ট্রি প্রসঙ্গে

জিয়া হাবীব আহসান | মঙ্গলবার , ৫ জুলাই, ২০২২ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

আইন মোতাবেক সম্পত্তি হস্তান্তরের যোগ্য ব্যক্তি কেঃসম্পত্তি হস্তান্তরকারীর যোগ্যতা নিম্নরূপ: ১। চুক্তি সম্পাদনের যোগ্যতা থাকতে হবে যথাআইন অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া; ) মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা; ) কোনো আইন বলে চুক্তি সম্পাদনে অযোগ্য ঘোষিত না হওয়া; অর্থাৎ স্বত্বহীন ব্যক্তি সম্পত্তি হস্তান্তরের যোগ্যতা রাখে না। কাসেমের সম্পত্তি রিপন বিক্রি করতে পারে না। তবে কাসেম ক্ষমতা দিলে পারে। সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডের অধীনে থাকলে তা মালিক বিক্রয় করতে পারে না।

শরিকের জমি কয়েক যুগ দখলে রাখলে মালিকানা স্বত্ব অর্জিত হবে কিঃঅন্যের সম্পত্তি প্রকাশ্য ভাবে মালিকের গোচরে ১২ বৎসরের উর্ধকাল দখল করে তবে সে ক্ষেত্রে জবরদখলকারীর স্বত্ব পাকা হয় এবং আসল মালিকের স্বত্ব বিলুপ্ত হয়। ২০ বৎসর ব্যাপী অব্যাহত ভাবে কেউ নিজ আপন অধিকারে আলো বাতাস, পথ পানি, জলপথ ইত্যাদি ব্যবহারের অধিকার ভোগ করে তবে সে উক্ত সুখাধিকার ভোগের দাবীদার বা পাকা অধিকারী হয়। সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে উক্ত সময়সীমা ৬০ বৎসর। কিন্তু একজন শরিক অপর শরিকের জমি প্রকাশ্যে ও নির্বিঘ্নে কয়েক যুগ দখলে রাখলে সে মালিকানা স্বত্ব অর্জন করবে না। কেননা আইনতঃ একজন শরিক অন্য শরিকের জমি তাদের পক্ষেই ভোগদখল করেন। সুতরাং এখানে তামাদী আইনের বিরোধ দখল সৃষ্টি হবে না।

রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের ভ্রম সংশোধন কি সম্ভবঃকোনো দলিল রেজিস্ট্রির পর যদি দেখা যায় সে দলিলের পক্ষবৃন্দের অসাবধানতাজনিত ভুল রয়েছে তাহলে পরবর্তীকালে তা সংশোধন করা যেতে পারে। এ ধরণের পরবর্তী দলিলকে সংশোধনপত্র বলা হয়ে থাকে। রেজিস্ট্রার্ড মূল দলিলের সংশোধনপত্রও রেজিস্ট্রি করা বিধেয়। মিসটেক আইনগ্রাহ্য কিনা তা কন্ট্রাক্ট আইনের বিধানানুসারে বুঝতে হবে। প্রমাদ উভয় পক্ষের অনবধানে ঘটেছে; এক পক্ষের অসাবধানতাজনিত ভুল হলে তা মিসটেক রূপে গণ্য হবে না এবং পক্ষদ্বয় যে চুক্তি প্রকৃত পক্ষে করতে চেয়েছেন তা চুক্তিদ্বারা সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আইনঘটিত প্রমাদ নহে, তথ্যঘটিত ভ্রম সম্পর্কে সংশোধন সম্ভব। সংশোধনপত্রে নির্ধারিত স্ট্যাম্প ডিউটি প্রদান করতে হয়। মূল দলিলের সম্পূর্ণ বিবরণ দানে যে প্রমাদ ঘটেছে তার উল্লেখপূর্বক সংশোধিত বক্তব্য রাখতে হবে।

দলিল সম্পাদনের কতদিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হয়ঃসম্পাদনের তারিখ থেকে তিন মাসের (৯০ দিনের) মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রীর জন্য রেজিস্ট্রিকারী অফিসারের কাছে দাখিল করতে হয়। সম্পাদনকারীর স্বাক্ষর দানের তারিখ হতে তিন মাস গণনা হবে। সম্পাদনকারী উক্ত সময়ের মধ্যে দলিল দাখিল না করার উপোযুক্ত কারণ প্রদর্শন করতে পারলে বা রেজিস্ট্র্রারকে সন্তুষ্ট করতে পারলে নির্ধারিত জরিমানা প্রদান সাপেক্ষে রেজিস্ট্রিকারী অফিসার উক্ত দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। উইল রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো সময় তা রেজিস্ট্রির জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই। যেকোনো সময় তা রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করা যাবে।

কোন কোন দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়ঃযে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য একশত টাকা বা তার বেশী সেই স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে প্রায় সকল প্রকার দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্র্রি করতে হবে। যে দলিল দ্বারা স্থাবর সম্পত্তিতে কোনো অধিকার বা স্বত্ব বা অন্য যে কোনো প্রকারের স্বার্থ সৃষ্টি হয়, ঘোষিত হয়, পরিবর্তিত হয়, প্রদত্ত হয়, সীমায়িত হয় এবং বিলুপ্ত হয়, সে দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্র্রি করতে হবে। তবে উইলের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় দান, বন্ধক, লীজ, বিনিময় প্রভৃতির দলিল দ্বারা স্বত্ব ঘোষিত, হস্তান্তরিত, খর্বিত হয় বা নষ্ট হয় বিধায় এসব দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। বাংলাদেশের মুসলমানসম্প্রদায় ইসলামী আইনে স্থাবর সম্পত্তি হেবা বা দান করতে দলিল রেজিস্ট্রি আবশ্যক হতো না। বর্তমানে হেবা বা দানের জন্য দলিল লিখিত হলে তা রেজিস্ট্রি করতে হবে। যে রশিদ দ্বারা কোনো স্বত্ব বা অধিকার সৃষ্ট, ঘোষিত, খর্বিত, হস্তান্তরিত বা বিলুপ্ত হয় তাও রেজিস্ট্রি করতে হবে। আদালতের ডিক্রি বা হুকুমনামা যদি কোনো স্বত্ব সৃষ্টি বা বিলোপ করে তা হস্তান্তর করতে হলে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। যে সব দলিল রেজিস্ট্রি করা আবশ্যক নয় তা রেজিস্ট্র্রি করতে আইনে বাধা নেই। তবে এতে কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না।

দলিল দাতার বাড়িতে গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা আছে কিঃসাধারণত দলিল রেজিস্ট্রির জন্য দলিল রেজিস্ট্রারী অফিসারের নিকট রেজিস্ট্রেশন অফিসে দলিল দাখিল করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থার ব্যতিক্রমও আছে। কোনো ব্যক্তি যদি দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাঁর বাড়িতে উক্ত দলিল দাখিল করতে চায় অথবা কোনো উইল আমানত করতে চান তাহলে রেজিস্ট্র্রারীং অফিসারকে বিশেষ কারণ সম্পর্কে রেজিঃ আইনের ৩১ ধারা মোতাবেক কমিশন যোগ্য দরখাস্তকারীর বাড়িতে গমন করে রেজিস্ট্রেশনের জন্য দলিল গ্রহণ তথা রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। ১৯০৮ সনের রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩১ ধারা রেজিস্ট্রিকারী অফিসারকে যেকোনো স্থানে কোনো সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করার ক্ষমতা প্রদান করেছে। বাড়িতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো অনিয়ম দেখা দিলে অর্থাৎ অফিসারের উপস্থিতি বা অন্য কোনো ব্যাপারে, তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তাহা সংশোধনযোগ্য। তবে রেজিস্ট্রি কর্মকর্তার এখতিয়ার বহির্ভূত কোনো কার্য্য সংশোধনযোগ্য নহে। বাড়িতে দলিল রেজিস্ট্রেশন জন্য নির্ধারিত কমিশন ফি জমা দিতে হয়।

দলিলপত্র মুসাবিধা করতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিতঃঅভিজ্ঞ আইনবিদ কিংবা দলিল লিখক দ্বারা দলিল লিখানো উচিত। স্ট্যাম্প কাগজের মূল্য, রেজিস্ট্রেশন ফিসের জ্ঞান, স্বত্বের প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সম্পর্কে জ্ঞানহীন অনভিজ্ঞ, অল্প শিক্ষিত, সর্বশেষ আইন ও সার্কুলার সম্পর্কে জ্ঞানহীন মুসাবিদা বিপদজনক। এতে দীর্ঘ মেয়াদি মামলা মোকাদ্দমায় এ সূত্রপাত হতে পারে। স্বল্প জ্ঞান সম্পন্ন দলিল লেখক দ্বারা টাইপকৃত দলিল টাইপকৃত হওয়া কিংবা কম্পিউটারকৃত হওয়া উত্তম। অনেক দলিল লিখকের হাতের লিখার পাঠোদ্ধার দুঃসাধ্য। দুর্বোধ্য দলিল লিখা কিংবা দলিল পড়তে না পারা যায় মতো দলিল লিখাকে অনেকে দলিল লিখকের বাহাদুরী মনে করেন। এটা বোকামী এবং হাস্যকর। দলিলে সুস্পষ্টভাবে দাতা গ্রহীতার নাম ঠিকানা, কাটা ছেঁড়ার কৈফিয়ত তপশীলের বিবরণ ও চৌহদ্দির বর্ণনা ইত্যাদি থাকতে হবে। চৌহদ্দি থাকলে দাগ খতিয়ান ভুলের বিপদ উৎড়ানো যায়। দলিল অর্থহীন কস্য, মিদং, কার্য্যাঞ্চাগে প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারের কোনো আবশ্যকতা নেই। দলিলের মূল্যের উপর প্রদত্ত স্ট্যাম্পে দলিলের বর্ণনা শেষ না হলে ডেমী কাগজ সংযোজন করা যায়। আমাদের দেশে কথায় কথায় সব কিছুতে স্ট্যাম্প ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। অথচ প্রাপ্তি রশিদ, ঋণপত্র, তমসুক, খত ইত্যাদি সাধারণ সাদা কাগজে লিখলে চলে। দলিলের শুরুতে এবং পাশে টিপসহি, রেজিস্ট্র্রি অফিসের সিল ছাপ্পর ইত্যাদির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হয়। দলিলের উপরিভাগে ছয় ইঞ্চি পরিমাণ ও নীচে পরিমাণ মত স্থান খালি রাখতে হয়। দলিলের শেষ পৃষ্ঠার নিচের দিকে সনাক্তকারী তারিখ সাক্ষীদের নাম ধাম সুনির্দিষ্ট ও মুসাবিধাকারকের দস্তখত ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকা জরুরি। দলিলের শিরোনামে এক নামকরণ থাকা উচিত। যেমন সাফ কবলা, বায়নাপত্র, ওয়াকফনামা, আমমোক্তারনামা, ওছিয়তনামা ইত্যাদি পাগল কিংবা নাবালকের সম্পত্তি হলে তার পক্ষে আইনানুগ অভিভাবকের নাম ঠিকানা থাকতে হবে। দলিলের পক্ষগণ যদি কোনো ফার্ম বা কোম্পানী হয় তাহলে তাদের পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। দলিল দাতার স্বত্বের উৎস পরিষ্কার ভাষায় লিপি হতে হবে। বায়া দলিল সমূহের রেজিস্ট্রির তারিখ নাম্বারও উল্লেখ করতে হবে। বিনিময় মূল্য, দখল প্রদান, তপশীলের পদাধিকার সুখাধিকার ইত্যাদি উল্লেখ পূর্বক একটি দলিলকে সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। শহর অঞ্চলসহ ভূমি বা বাড়ির সনাক্তকরণের জন্য ওয়ার্ড নং, হোল্ডিং নং, প্রেমিসেস নং প্রভৃতি দিতে হবে। চৌহদ্দি প্রদান করা যেতে পারে, সাথে দরকার হলে দলিলের সহিত স্কেচ ম্যাপ বা প্ল্যান সংযুক্ত করে দলিলে হস্তান্তরিত সম্পত্তি চিহ্নিত করাও যেতে পারে।

চুক্তিপত্র ও বিক্রয়ও কবলার মধ্যে পার্থক্য কিঃচুক্তিপত্র ও বিক্রয় কবলার মধ্যে পার্থক্য আছে। কোন সম্পত্তি ক্রয়ের ব্যাপারে প্রথমে চুক্তিপত্র (বায়নাপত্র) ও পরে বিক্রয় কবলা করা হয়। কবলা সম্পাদনের পর বায়না পত্রের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। চুক্তিপত্রে দলিলের পক্ষগণ পরস্পর কোনো কার্য বা অধিকার অর্জন, বর্জন বা সম্পাদন হতে বিরত বা উদ্যোগী হতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় এবং এতদ্‌সংক্রান্ত লিপিবদ্ধ শর্তাবলী এক পক্ষ লঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ ক্ষতিপূরণ পাবে। পক্ষান্তরে স্বত্ব হস্তান্তর বা কবলা দলিলে এক পক্ষের যাবতীয় স্বত্ব, স্বামিত্ব ও অধিকার ত্যাগ হয়ে অপর পক্ষে বর্তায়। চুক্তিপত্র চুক্তি আইন দ্বারা বিক্রয় কবলা সম্পত্তি হস্তান্তর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

অনিবন্ধনকৃত বিনিময় দলিল দ্বারা সম্পত্তিতে স্বত্ব সৃষ্টি হয় কিনাঃযে সকল দলিল কোনো স্থাবর সম্পত্তিতে স্বার্থ সৃষ্টি করে যার মূল্য ১০০/- টাকার উর্ধে ঐসব দলিলের রেজিস্ট্র্রশেন বাধ্যতামূলক। অন্যথায় এর কোনো আইনগত ফলাফল থাকবে না। অর্থাৎ কোনো দলিল বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যদি নিবন্ধনকৃত না হয়, তাহলে ঐ জাতীয় একটা দলিলের আওতায় নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত সম্পত্তিতে সৃষ্ট কোনো অধিকার কথিত দলিলে ক্ষুণ্ন হবে না। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১১৮ ধারার বিধান মতে ও নিবন্ধনকৃত নহে এমন কোনো বিনিময় দলিল মূলে কোনো স্বত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। কোন দলিলের রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজনীয় হলে যদি তা রেজিস্ট্র্রিকৃত না হয়, তবে () দলিলে বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তিতে এর কোনো প্রভাব হবে না, () পোষ্য গহণ করতে তা কোনো ক্ষমতা প্রদান করবে না, () উক্ত সম্পত্তিতে কোনো লেনদেন অথবা উক্ত ক্ষমতা প্রদান সম্পর্কে তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রাহ্য হবে না। ব্যতিক্রমঃ অনিবন্ধনকৃত বিক্রয়ের লিখিত চুক্তিদ্বারা বিক্রেতার অধিকার নষ্ট হয় না। কিন্তু বিক্রেতাকে সমস্ত অর্থ প্রদান করে। ক্রেতা যখন সম্পত্তির দখলে আসেন তখন তার স্বত্ব পাকা না হলেও হস্তান্তরদাতা তাকে সরাতে পারবে না। আংশিক কার্য সম্পাদনের জন্য চালুকৃত কোনো মোকদ্দমায় অর্থাৎ চুক্তি প্রবনের মোকদ্দমায় একটি অনিবন্ধনকৃত দলিল সাক্ষ্যে গ্রহণীয় হতে পারে।

মুক্তিনামা দ্বারা কি মালিকানা হস্তান্তরিত হয়ঃমুক্তিনামা বা স্বীকৃতি দ্বারা মালিকানা হস্তান্তরিত হয় না। অর্থাৎ এটা হস্তান্তর দলিল হিসেবে গণ্য নয়। এর দ্বারা স্বত্ববর্তায় না। তবে স্বত্ববান ব্যক্তির স্বত্বের সমর্থনে মুক্তিনামা প্রদান করলে তা কার্যকরী হয়। তাছাড়া প্রতিদান গ্রহণে মুক্তিনামা প্রদান করলেও তা কার্যকরী হয়।

নোটারীর মাধ্যমে জমি ক্রয়বিক্রয় বা দানপত্র কতটুকু গ্রহণযোগ্যঃ১০০/- টাকার উর্ধ্বমূল্যে যে কোনো জমি হস্তান্তরের দলিল রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। দানপত্রের ক্ষেত্রেও যে কোনো মূল্যের দলিল রেজিস্ট্র্রি করতে হবে। ঐ সব ক্ষেত্রে নোটারীর মাধ্যমে কোনো স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তর দলিলই আইনসিদ্ধ নহে। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন আইন প্রযোজ্য হবে।

দলিল রেজিস্ট্র্রিকালে সাব রেজিস্ট্র্রি অফিসে দলিল গ্রহীতার উপস্থিতি কি বাধ্যতামূলকঃনা। এক্ষেত্রে দলিল গ্রহীতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নহে। দলিলে গ্রহীতার দস্তখত এবং ছবি সাব রেজিস্ট্রারের সম্মুখে দিতে হবে না। তবে গ্রহীতার ছবি এবং দস্তখত দলিলে থাকলেই চলবে। বর্তমান আইনে েেরজিস্ট্রেশন সময় দলিলে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়েরই ছবি দিতে হবে। জমি রেজিস্ট্রির সময় ক্রেতা বা বিক্রেতাকে দলিল লেখক কর্তৃক সনাক্ত করতে হবে না ।

দলিল লিখার পদ্ধতি কিঃসাফ কবলা, দান, হেবা এবং হেবার ঘোষণাপত্র দলিল সমগ্র দেশে একই পদ্ধতিতে লেখার সুবিধার্থে একটি সহজ ফরমেট নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ফরমেটে ঐ সকল দলিল লিখা বর্তমানে বাধ্যতামূলক। দলিল মুসাবিদাকারক আইনজীবী হলে তার নাম ও সনদ নং এবং দলিল লিখক হলে তার নাম ও লাইসেন্স নং উল্লেখ করতে হবে। তবে বন্ধক, পাওয়ার অব এটর্নী, ট্রাস্ট দলিল, ওয়াক্‌ফ দলিল ইত্যাদি পূর্বের নিয়মে মুসাবিদা হবে। আদালত কর্তৃক ডিক্রিপ্রাপ্ত বা নিলামে ক্রয়কৃত স্থাবর সম্পত্তির জন্য ২৫ বছরের মালিকানার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রয়োজন হবে না।

প্রবাসে অবস্থান রত কোনো বাংলাদেশী নাগরিক দলিল রেজিস্ট্র্রি দেবেন কিভাবেঃপ্রবাসী কোনো নাগরিক দেশে উপস্থিত না থাকলে প্রচলিত নিয়মে নিবন্ধিত আমমোক্তার নামার মাধমে দলিল রেজিস্ট্র্রি ও সম্পাদন করতে পারবেন।

দলিল জমা দেয়া বন্ধক বা ইক্যুইটেবল মর্টগেজ কি আইন সম্মতঃসংশোধিত আইনে দলিল জমা নেয়া বন্ধকের সুযোগ নেই। কোন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হলে বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্র্রি বাধ্যতামূলক। বন্ধক উদ্ধার বা রিডেম্পশন না করে অথবা বন্ধক গ্রহীতার লিখিত সম্মতি ছাড়া ঐ জমি অন্যত্র হস্তান্তর করা বেআইনী।

লেখক : এডভোকেট, কলামিস্ট, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।v

পূর্ববর্তী নিবন্ধরচিত হয়েছে বিরল ইতিহাস
পরবর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল