থেমে নেই ইভটিজিং

হেল্পলাইন ১০৯-এর কথা জানে না অনেকে, শঙ্কায় অনেকে ঘটনা আড়াল করে ।। নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস আজ

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ১৩ জুন, ২০২৩ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কয়েকজন স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় কর্ণফুলী উপজেলায় কাজল শেখ নামে এক বখাটেকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে শিকলবাহা মহিউদ্দীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শেণির কয়েকজন ছাত্রীকে ইভটিজিং করে।

এ ঘটনার ১৬ দিন আগে মীরসরাইয়ে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়ার চেষ্টার ঘটনায় মো. সবুজ (২৬) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় সম্পৃক্ত শুভ (২২) নামে আরেকজন পালিয়ে যায়। এ দুজন মিলে প্রায় বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করত।

দুই উপজেলায় সংঘটিত ঘটনা দুটি গত মাসের। এর মধ্যে কর্ণফুলীতে সাজা দেয়া হয় ২৮ মে এবং মীরসরাইয়ে আটক করা হয় ১২ মে। পৃথক এ দুই ঘটনা থেকে স্পষ্ট পথেঘাটে এখনো ছাত্রী, কিশোরী বা নারীরা উত্ত্যক্ত বা ইভটিজিংয়ের শিকার হন। শাস্তির আওতায় আসায় শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করার বিষয়টি হয়তো জানাজানি হয়েছে। এর বাইরেও অসংখ্য ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটছে।

জানা গেছে, কোথাও নারী ও শিশুরা ইভটিজিংসহ নির্যাতনের শিকার হলে তাদের সহায়তার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন সেন্টার রয়েছে। সরাসরি এ হেল্প সেন্টারের নম্বর ১০৯এ কল করলে সহায়তা পাওয়া যায়। তবে জোরালো প্রচারণার অভাবে এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইভটিজিং, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হলেও শাস্তির আওতায় আসছে না দোষীরা। আবার অনেক সময় সচেতনতার অভাবে এবং সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে কিংবা পরবর্তীতে আরো রোষানলে পড়ার শঙ্কায় এ ধরনের বিষয়গুলো আড়াল করে অনেক পরিবার। এতে ইভটিজিংয়ে জড়িত বখাটেরা আরো সাহসী হয়ে উঠছে। তাই ইভটিজিং প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পালিত হবে ‘নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস’। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ১৩ জুন দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বখাটেরা স্কুলছাত্রীদের উত্যক্ত বা ইভটিজিং করায় তা প্রতিরোধের তাগিদকে গৃহীত কর্মসূচি হিসেবে প্রথমবার দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন হয়েছিল ২০১০ সালে। এরপর থেকে নারীর প্রতি সকল ধরনের নিপীড়ন এবং উত্যক্তকরণের প্রতিরোধ এবং নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের বার্তা দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসাযাওয়ার পথেই নারীদের উত্যক্ত করার ঘটনা ঘটে না। গণপরিবহন এবং কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা ইভটিজিংয়ের শিকার হন। গত বছর প্রকাশিত আঁচল ফাউন্ডেশন নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ তরুণী ইভটিজিংয়ের শিকার হন। তরুণীরা সবচেয়ে বেশি এ ধরনের নিপীড়নের শিকার হন একাকী চলার সময়ে, যা ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ মা, বোন, বান্ধবী বা অন্য নারী সঙ্গী থাকা অবস্থায় এবং ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাবা, স্বামী, ভাই বা অন্য পুরুষ সঙ্গী থাকা অবস্থায় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ৪৫ দশমিক ২৭ শতাংশ তরুণী গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে বাস বা বাসস্ট্যান্ডে যৌন হয়রানির সম্মুখীন হন ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ তরুণী। এছাড়া রেল বা রেলস্টেশনে ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হন।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা ফারহানা ইদ্রিস আজাদীকে বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি নিরাপত্তার জন্য অনেক মাবাবা তাদের মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। বস্তি এলাকায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। হয়তো মাবাবা তাদের সন্তানকে রেখে কাজে গেছেন, তখন তারা ইভটিজিংয়ের শিকার হন।

ইভটিজিং প্রতিরোধে সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, নারী ও শিশুর সহায়তায় বিদ্যমান হেল্পলাইনের প্রচারণা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কিশোরকিশোরীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। একটি ছেলে মেয়েকে কেবল মেয়ে হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখে, সে জায়গায় তাদের সচেতন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজের স্তূপ
পরবর্তী নিবন্ধসাজানো হচ্ছে নতুন কোচের রেক-কম্পোজিশন