ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরেকটি ট্রেন ও শাটল আধুনিকায়নের সুপারিশ

শর্ত পূরণ না হওয়ায় সহজকে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৭ মে, ২০২৪ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ না করায় বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বিক্রির সহায়ক প্রতিষ্ঠান সহজসিনেসিসভিনসেন জেভির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সংসদীয় কমিটি থেকে বলা হয়েছে।

এছাড়া বৈঠকে ঢাকাকক্সবাজার রুটে আরেকটি ট্রেন যোগ করা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতকারী শাটল ট্রেনের আধুনিকায়নেরও সুপারিশ করা হয়। ট্রেনের বগি দেশে তৈরি করার সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। খবর বিডিনিউজের।

দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট ব্যবস্থাপনা করে আসছিল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেড। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে ২০২২ সালে পাঁচ বছরের জন্য সেই কাজ পায় সহজ লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে সহজের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ে ইন্টিগ্রেটেড টিকিটিং সিস্টেমের (বিআরআইটিএস) ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই, ইনস্টল, কমিশন, অপারেট ও মেইনটেন্যান্স কাজ করার কথা সহজ জেভির।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, আগের বৈঠকে সহজের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। সহজের কী পরিমাণ যন্ত্রাংশ স্থাপন করার কথা ছিল এবং কী পরিমাণ তারা স্থাপন করেছে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছিল কমিটি। দুই মাসের মধ্যে যন্ত্রাংশ স্থাপনে ব্যর্থ হলে সহজের সঙ্গে চুক্তি বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছিল।

সে অনুযায়ী গতকালের বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, সাতটি চুক্তির মধ্যে সহজ মাত্র দুটি চুক্তি শেষ করেছে। বাকি পাঁচটির মধ্যে একটি চুক্তিতে ১৫০টি স্টেশনে টিকেট বিক্রি কম্পিউটারাইজড করার কথা থাকলেও ৩০টিতে তা করা হয়েছে। বাকি চারটি চুক্তি অনুযায়ী টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, জায়ান্ট স্ক্রিন ডিসপ্লে, সার্ভিস কি কিয়োস্ক এবং জিপিএস ট্রেন ট্যাকারও চালু করতে পারেনি সহজ। তবে যন্ত্রাংশগুলো সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে কমিটিকে জানিয়েছে রেলওয়ে।

বৈঠকে উপস্থিত কমিটির সদস্য শফিকুর রহমান বলেন, তারা চুক্তি যথাযথভাবে রক্ষা করেনি, দ্রুততার সঙ্গে দেখে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে কমিটির বৈঠক থেকে।

চুক্তির শর্ত পূরণ না করার বিষয়ে বক্তব্য জানতে ‘সহজসিনেসিসভিনসেন জেভি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ দেবনাথের মোবাইলে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সংসদ সচিবালয়ের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব শর্তে ডেমু ট্রেন আমদানি করা হয়েছিল, তার যথাযথ বাস্তবায়ন না হয়ে থাকলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ডেমু ট্রেন কেন চলতে পারল না, কী সমস্যা, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবার কথা বলা হয়েছে।

রেলের কত জমি বেদখল : রেলওয়ের মোট জমি কত, কত জমি অবৈধ দখলে আছে, কতটুকু নিজেদের ব্যবহারে লাগছে এসব বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল সংসদীয় কমিটি। গতকালের বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেয় রেলওয়ে। তাতে বলা হয়, রেলের মোট ভূমি আছে ৬১ হাজার ৮২১ একরের কিছু বেশি। এর মধ্যে ৩০ হাজার ২৮৬ একর রেলের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৬৮ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। এখন অবৈধ দখলে আছে ৬ হাজার ৭২৭ দশমিক ৫০৮ একর। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৭১৯ একর। রিজিউমকৃত ভূমি আছে ১ হাজার ৬১৮ একর। সবচেয়ে বেশি, ৫ হাজার ৩৫ একর জমি অবৈধ দখলে আছে পাকশিতে।

সারা দেশে রেলের বেদখলকৃত জমির উদ্ধারের কাজ দ্রুত শুরু করার সুপারিশ করেছে কমিটি। নারায়ণগঞ্জে রেলের জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি উপকমিটি করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভবন মালিককে খুনে কেয়ারটেকারের যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা সড়কের ভিআইপি অংশে অভিযান, দুই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ