ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারী বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে দোকান–গুদামে ভারতীয় পেঁয়াজে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিটি দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজের বস্তার সারি সারি স্তূপ। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে দোকানের বাইরে পেঁয়াজের বস্তা রাখেন। পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ার কারণে গত দুইদিনে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরো ১০ টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাজারে এখন গড়ে ২৫–৩০ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশ করছে। ফলে দামও কমছে। অন্যদিকে খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। পাইকারীর সাথে খুচরার কেজিপ্রতি পার্থক্য ১৫–২০ টাকা।
গতকাল সোমবার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বতর্মানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫–৪০ টাকা। গত দুইদিনের ব্যবধানের দাম কমেছে ১০ টাকা পর্যন্ত। তবে ব্যবসায়ীদের দোকান–গুদামে এখন দেশি পেঁয়াজের মজুদ নেই।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি–১ (তাহেরপুরী), বারি–২ (রবি মৌসুম), বারি–৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। তাই দামও এখন আগের চেয়ে নিম্নমুখী। আসলে পেঁয়াজ পচনশীল চাইলে মজুদ করে রাখা যায় না। দাম বেড়ে গেলে অনেক সময় কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ তোলা হয়, এখন বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দামও কমে যাচ্ছে।
অপরদিকে কাজীর দেউড়ি এলাকার খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০–৫৫ টাকায়। খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ৫০–৫৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ২–৩ টাকা লাভে বিক্রি করছি। এক বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করতে এক দুই দিন লাগে। আর পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দর প্রতিদিন উঠানামা করে। তাই আমরা চাইলেও প্রতিদিন পাইকারী বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিক্রি করতে পারি না। এতে আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাইকারীতে পেঁয়াজের দাম কমলেও ভোক্তাদের এখনো খুচরা বাজারে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। পাইকারীতে যখন দাম বেড়ে যায়, তখন খুচরা বিক্রেতারা সাথে সাথে দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু যখন পাইকারীতে দাম কমে যায়, তখন কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা আগের কেনা বলে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে। পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনকে পাইকারী ও খুচরা বাজার নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা সতর্ক থাকবে।
উল্লেখ্য, সরকার দেশের কৃষক বাঁচাতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজের আইপি (আমদানি অনুমতি) বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে গত ৫ জুন থেকে আবারও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়।