ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি

| মঙ্গলবার , ৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আমাদের নাগরিকদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে আতংক তৈরি হয়েছে। যা কখনো কাম্য নয়। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তেমন তৎপরতা না থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্তর সংখ্যা। সর্বশেষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর।

৬ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা ডেঙ্গু প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ২১ এবং সরকারি হাসপাতালে ৩১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্ণ চৌধুরী নামে ১১ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিনিয়ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতি রাখলে হবে না। এর আগে ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে আমাদের নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে চসিকসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কারণ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি।’

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছে শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এ বছর অক্টোবর মাসের শেষে নভেম্বরেও ডেঙ্গু জ্বরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এবার দেরিতে এসেছে বর্ষা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়েছে। ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম। তাঁরা আরো বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গু চারটি ধরনের মধ্যে তিনটি ধরন (টাইপ-১, ৩, ৪) রোগের প্রকোপ বাড়িয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় আক্রান্তদের শক সিন্ড্রোম, অর্থাৎ হঠাৎ শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, হেমোরেজিক ফিবার বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে বাড়ছে মৃত্যু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ডেঙ্গু বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি বর্তমানে অনেক খারাপ। সামনে হয়তো, এমনকি ডিসেম্বরেও থাকবে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আমরা ঢুকে পড়লাম। ডেঙ্গু এখন আর ঢাকা কেন্দ্রিক নেই, সারা দেশেই ডেঙ্গু বাড়ছে।

বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী বা বড় শহর ছাড়া ছোট মফস্বল শহরগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্ত এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের আদৌ সক্ষমতা নেই। সবখানে যদি একসঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্ফোরণ ছড়ায় তাহলে তা জাতীয় জরুরি অবস্থার পর্যায়ে দাঁড়াবে। আমরা সেই শঙ্কার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত কী হবে বলা মুশকিল। ২০০০ সালে ডেঙ্গুর শুরু, ২২ বছরে আমরা শুধু ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। আগামী আরও ৩০ বছর যদি আমরা এভাবে চলি তাহলে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এ বিষয়টা প্রথমে আমাদের বোধোদয় হতে হবে, সেই বোধোদয় থেকে আমাদের উচিৎ ডেঙ্গু পরিস্থিতির একটা নির্মোহ বিশ্লেষণ করা। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারতের কলকাতায়ও এক সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। তারা কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এটি সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে। ব্যাংকক-সিঙ্গাপুরের দৃষ্টান্তও আমরা অনুসরণ করতে পারি। ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে ডেঙ্গু এত ভয়াবহ নয়। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ মহামারি। তাই এর মোকাবিলা আমাদেরই করতে হবে। কীটনাশক ছিটিয়ে এডিস মশা বা মশার লার্ভা নিধন অস্থায়ী সমাধান। এসব দিয়ে সাময়িক উপকার হলেও স্থায়ী সমাধান হবে না। যদি সঠিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া যায়, তাহলে এ মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব। তা না হলে প্রতিবছরই এর মুখোমুখি হতে হবে। সিটি করপোরেশন এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিধনে উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান আসছে না। ঘরে ঘরে গিয়ে সিটি করপোরেশন মশা মারতে পারবে না। তারা সড়ক ও গলিতে অভিযান চালায়। তাই জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তখন তারাই মশার উৎস খুঁজবে এবং তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। তবে নিজেরা সচেতন না হলে সিটি করপোরেশন সমাধান দিতে পারবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে