ডাবল প্রমোশন

এমরান চৌধুরী | বুধবার , ২০ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ক্লাস টিচার ক্লাসের এ মাথা থেকে ও মাথা একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর আরাম করে বসে বললেন, ‘তোমরা কেমন আছ?
সবাই এক বাক্যে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ স্যার। বেশ ভালো আছি।’
‘ আপনি কেমন আছেন স্যার?’ ক্লাস ক্যাপ্টেন আবদুল কাইয়ুমসহ অনেকের কণ্ঠে উচ্চকিত হলো।
‘ আলহামদুলিল্লাহ। আমিও বেশ ভালো আছি।

তোমরাতো জানো আজ রেজাল্টের দিন। তোমাদের জীবনের প্রথম রেজাল্ট এটি। তাই বলে রাখি, পরীক্ষায় সবাই ভালো করে ন। কেউ কেউ করে। কেউ একটু বেশি ভালো করে। কেউ কম। কিন্তু সবার চেষ্টা থাকে ভালো ফল করার। তাই ফল নিয়ে কারও বেশি খুশি বা বেজার হওয়ার কারণ নেই। তোমরা কি আমার কথা বুঝতে পেরেছ?’

‘ জী, স্যার।’
‘সব সময় একটা কথা মনে রাখবে। যে যেমন চেষ্টা করবে তার ফলটাও হবে তেমন। তাই তোমাদের ভালো ফলের জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে।’
‘জী স্যার।’ সবাই সমস্বরে বলল।
এবার তবে রেজাল্টটা শুনিয়ে দিই। রেজাল্ট শুনে কেউ আবার মন খারাপ করো না কিন্তু।’

‘ ঠিক আছে স্যার। করব না’
‘ তোমরা কি জানো প্রথম শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ক’জন?’
‘ কেন জানব না স্যার!’ বলল ক্লাস ক্যাপ্টেন। ঊনপঞ্চাশ জন।’
‘ তোমরা সবাই পাশ করেছ।’ এই কথা বলার পর সবার চোখে আলোর শিখা জ্বলে উঠল।
‘তবে! ‘
‘তবে কি স্যার?’
‘দু’জন পাশ করেছে বিশেষ বিবেচনায়। আর একজন পেয়েছে ডাবল প্রমোশন।’
সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠল। বিশেষ বিবেচনায় পাশ কে কে করল তা জানার চেয়ে মুখ্য হয়ে উঠল ডাবল প্রমোশন। ছাত্র-ছাত্রীদের বুকের ভেতরটায় তোলপাড় শুরু হলো।

‘ কে ডাবল প্রমোশন পেয়েছে স্যার?’ কৌতূহল ধরে রাখা সম্ভব হলো না নয়ন তারার। তার প্রশ্নে সুর মিলিয়ে জানতে চাইল ক্লাস ক্যাপ্টেন আবদুল কাইয়ুম।
‘ সেটা বলব সবশেষে। এখন দশ থেকে এক পর্যন্ত কারা হলো তাদের নাম বলছি সবাই মনোযোগ দিয়ে শোন। দশ নম্বরে পাশ করেছে নয়নতারা। নয় নম্বরে পাশ করেছে মাইজ্জা মিয়া। এভাবে স্যার বলে গেলেন এক একটা নাম। চেমন আরার রোল তিন এবং আবদুল কাইয়ুম এর রোল এক।
রোল এক বলা হয়ে গেল কিন্তু নিশান চৌধুরীর নাম বলা হলো না দেখে সবাই অধির হয়ে উঠল। সবাই হৈ চৈ করে বলল, ‘ স্যার, নিশান চৌধুরী কত নম্বরে পাশ করেছে?’
একটু ছবর কর সোনামণিরা। সব বলব।

‘নিশান চৌধুরী ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৯৯ নম্বর পেয়েছে। তাই রেজাল্ট এবং বয়স বিবেচনা তাকে দেওয়া হয়েছে ডাবল প্রমোশন।’এই ঘোষণা দিয়ে স্যার ছাত্র-ছাত্রীদের মুখের দিকে তাকালেন। দেখা গেল সব কটা তরতজা ফুল নিমিষে শুকিয়ে গেল।
স্যার বললেন, ‘ তোমরা কি নিশানের ডাবল প্রমোশনে খুশি হওনি?’

‘খুব খুশি হয়েছি স্যার। এক বছরে দু দুটো ক্লাস ডিঙানো কার ভাগ্যে জোটে। আমরা নিশানের এই ফলাফলে বেশ খুশি।’ বলল ক্লাস ক্যাপ্টেন কাইয়ুম।
‘দেখতে হবেতো নিশান কার ছেলে! মোবারক মাস্টারের ছেলে বলে কথা।’ উচ্ছসিত হয়ে বলল চেমন আরা।
‘ তবে!
‘তবে কি? নয়ন তারা বলল, ‘ আমাদের আশা ছিল ও এবার ক্যাপ্টেন হবে। তা আর হলো না।’
‘ তোমাদের ক্যাপ্টেন হওয়ার চেয়ে সে একটা বছর এগিয়ে গেল। এটা তার জন্যে এবং বন্ধু হিসেবে তোমাদের জন্য গর্বের নয় কি?’
‘নিশ্চয় স্যার।’ সবাই সমস্বরে বলল।

‘তাহলে এসো আমরা হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাই।’
‘ জী স্যার।’
‘ আমি এক দুই তিন বলব। তিন বলার সাথে সাথে শুরু হবে হাততালি। আর শেষ হবে উল্টো থেকে তিন দুই এক বলার সাথে সাথে। রেডি, ওয়ান টু থ্রি।’
শুরু হলো পুরো ক্লাস রুম জুড়ে হাততালি। যখন হাততালি চলছিল তখন পুরো ক্লাসে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হলো মনে হলো কোনো রাজকীয় বাজনা বেজে চলেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবদরের যুদ্ধে ইসলামের বিজয় সূচিত হয়েছে
পরবর্তী নিবন্ধগরম এল