টিউলিপের ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ

| বৃহস্পতিবার , ৫ জুন, ২০২৫ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশে ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনদুদক। এছাড়া শ্যামলীর রিং রোডে জনতা হাউজিং সোসাইটিতে টিউলিপের নামে থাকা একটি ফ্ল্যাটের রাজউকের কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধানের প্রয়োজনে কর্মকর্তা চাইলে যে কোনো আয়কর নথি জব্দ করে যাচাই করতে পারেন। খবর বিডিনিউজের।

সংস্থার ঢাকা১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের দায়ের করা মামলায় জব্দ করা এসব নথিতে ‘ঘুষ’ হিসেবে নেওয়া ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ঢাকার গুলশানের ফ্ল্যাটের তথ্য রয়েছে। গত মঙ্গলবার দুদকের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন কর অঞ্চলএর অধীন কর সার্কেল১২২ এর উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে এসব নথি জব্দ করেন।

জব্দ করা আয়কর নথিতে ২০০৬০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৮১৯ করবর্ষ পর্যন্ত দাখিল করা রিটার্ন এবং সংশ্লিষ্ট নথি সংযুক্তি রয়েছে। মোট ৮৭টি পৃষ্ঠার এসব নথির মধ্যে ২০০৬১৫ করবর্ষ পর্যন্ত প্রতিটি আয়কর রিটার্নে ‘অ্যাডভান্স টুওয়ার্ডস ডেভেলপার্স’ শিরোনামে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ের তথ্য রয়েছে। ২০১৫১৬ করবর্ষে গুলশানের ফ্ল্যাটটি তার ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিককে হেবা (দান) হিসেবে দেওয়ার তথ্য দেওয়া হয়, যার একটি নোটারীকৃত দলিল (রেজি. নং০১, তারিখ ২১০৬২০১৫) সংশ্লিষ্ট নথিতে সংযুক্ত আছে। তবে ২০১৮১৯ করবর্ষের পর থেকে টিউলিপ সিদ্দিক আর কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বলে নথিতে বলা হয়েছে।

ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড থেকে ৭১ নম্বর রোডের ১১এ, ১১বি ফ্ল্যাটটি (পুরনো ঠিকানাফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি) কোনো টাকা পরিশোধ না করেই তিনি নিয়েছেন। এ মামলায় রাজউকের দুই কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে, যারা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে মালিকানা গ্রহণে টিউলিপ সহযোগিতা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

ঢাকা ও যুক্তরাজ্যে ফ্ল্যাট ও প্লটে ‘অনিয়ম’ এবং প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগের খাতায় নাম আসা টিউলিপের বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান ২ নম্বরের এ ফ্ল্যাটের অভিযোগের অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ওই প্লটের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে ৩০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

টিউলিপ যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়মদুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন।

১৪ এপ্রিল টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভুল কিছু করেছি, এমন কোনো প্রমাণ নেই’। বাংলাদেশ সরকারের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের শিকার’ হওয়ার দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেন, যদি সত্যিই এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়, কেবল রাজনৈতিক দুর্নাম ছড়ানোর চেষ্টা না হয়, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীদের সঙ্গে কেন যোগাযোগ করছে না? গত কয়েক সপ্তাহে তারা দুবার চিঠি দিয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক, লন্ডনে তার জন্ম, লন্ডনে বসবাস করেন এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিজের এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন। এখনও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, অথচ কোথায় তাকে পাওয়া যাবে, তা তারা (দুদক) ভালোভাবেই জানেআর সেটা যে ঢাকায় নয়, তা তো স্পষ্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র হজ আজ
পরবর্তী নিবন্ধবন্যপ্রাণীর হটস্পট খাগড়াছড়ির চিরসবুজ বন