জনগণের সেবা করার মাধ্যমে ভবিষ্যতের ভোট নিশ্চিত করুন

দুই মেয়রের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

| শুক্রবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সেবা করাকে একটি বড় কাজ হিসেবে উল্লেখ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে জনগণের সেবা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটি তাদের ভবিষ্যৎ ভোট নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনগণের সেবা যদি আপনারা নিশ্চিত করতে পারেন ভবিষ্যতে আপনাদের ভোটের কোন চিন্তা থাকবে না। মানুষই আপনাদের ওপর আস্থা রাখবে, বিশ্বাস রাখবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ের শাপলা হলে দুই সিটি কর্পোরেশনকুমিল্লা ও ময়মনসিংহের নবনির্বাচিত মেয়র এবং পাঁচ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের জনকল্যাণে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস কোনোভাবেই হারাবেন না। তাই তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করুন। তার সরকার দেশের প্রতিটি এলাকার উন্নয়ন করেছে এবং তৃণমূলের মানুষকে ঘিরেই এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিদের জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কাজ করার এবং বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সরকার প্রধান বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। যেটা আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। এই পরিবর্তন ধরে রেখে আরো উন্নতি করতে জনগণের কাছে দেওয়া ওয়াদা আপনাদের রক্ষা করতে হবে। জনগণকে উন্নত সেবা প্রদান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা তাঁর সরকারের লক্ষ্য, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ঘোষণা দিয়েছি ‘আমার গ্রাম, ‘আমার শহর।’ অর্থাৎ গ্রামের মানুষ সকল নাগরিক সুবিধা পাবে।

দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদসন্ত্রাসের পথ থেকে সবাই যেন দূরে থাকে, সেদিকে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র তাহসিন বাহার সুচনা এবং ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র একরামুল হক টিটুকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জএই পাঁচ জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথবাক্য পাঠ করান। পাঁচটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা হলেন : কুড়িগ্রামের এ এন এম ওবায়দুর রহমান, ঠাকুরগাঁওয়ের আবদুল মজিদ, সিরাজগঞ্জের শামীম তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিল্লাল মিয়া ও হবিগঞ্জের আলেয়া আক্তার।

পরে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ৪৪ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলররাও একই স্থানে শপথ নেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।

গত ৯ মার্চ সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হন কুমিল্লা৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার সুচনা। তিনিই কুমিল্লার প্রথম নির্বাচিত নারী মেয়র হলেন। একই দিনে অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন একরামুল হক টিটু।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে। সবার আগে যেটা দরকার, তা হচ্ছে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই এই দেশের মানুষ অন্তত পক্ষে এইটুকু পেয়েছেসরকার জনগণের শোষক নয়, সেবক হিসেবেই কাজ করে। যার কারণে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আমি অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যার বয়স ১৫ বছর, সে হয়তো ভাবতেও পারবে না যে, ১৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালের আগের বাংলাদেশ কী অবস্থায় ছিল? বাংলাদেশে সেখান থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করেছি। সবচেয়ে বড় কথা দারিদ্র্যের হার আমরা পেয়েছিলাম ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ। সেখান থেকে কমিয়ে আমরা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, অন্তত আমরা ১৬ বা ১৭ শতাংশের নামিয়ে আনব। যেটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাও করতে পারতাম, যদি কোভিড১৯ এর মহামারি না দেখা দিত। আবার রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ যদি না হতো, নিষেধাজ্ঞাপাল্টা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণে প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে। এইগুলো যদি না হতো, আমরা কিন্তু আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের দারিদ্র্যের হার আরও কমাতে পারতাম।

অতি দরিদ্র প্রায় ২৫ ভাগের ওপরে ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেটা আমরা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এত দ্রুত অতি দরিদ্রের হার কমানো, আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এটা পারেনি। আমরা লক্ষ্য স্থির করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে কেউ আর ভূমিহীনগৃহহীন থাকবে না, অতি দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তার সরকার স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখান থেকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ যাতে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে, সেদিকে তিনি জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য রাখতে বলেন।

পাশাপাশি তিনি বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার এবং প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে খাদ্যোৎপাদন বাড়াতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্যও জনপ্রতিপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় সতর্কতার অংশ হিসেবে তিনি দেশের নদীনালা, খাল, বিলসহ বিভিন্ন জলাশয় সংরক্ষণ করা এবং পানির প্রবাহকে অব্যাহত রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তার সরকার স্থানীয় সরকার খাতে বাজেট বরাদ্দ ৮ গুণের বেশি বাড়িয়েছে। কারণ, বিএনপির শাসনামলে ২০০৬০৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫,৭৯৯.৩৬ কোটি টাকা, যা বর্তমানে ৪৬,৭০৪ কোটি টাকা। সরকার প্রধান বলেন, প্রতিটি এলাকায় উন্নয়ন হয়েছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থারও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। কাজেই, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং কাজের মান বজায় রাখার জন্য আপনাদের কাজ করা উচিত, বলেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুঞ্জীভূত লোকসান মেটাবে গ্রহীতা ব্যাংক
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬