পুঞ্জীভূত লোকসান মেটাবে গ্রহীতা ব্যাংক

ব্যাংক একীভূতকরণ

| শুক্রবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ করলে খেলাপি ঋণ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পুরোটা বহন করতে হবে গ্রহীতা ব্যাংককে। তবে এ জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে বিশেষ ছাড় পাবে তারা। এর বাইরে সরকারি বিশেষ নীতি সহায়তাও দেওয়া হবে। ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনা তুঙ্গে উঠার মধ্যে ‘স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংককোম্পানির একীভূতকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা’য় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এই বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নীতিমালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা; যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংককোম্পানি অধিকতর সেবা প্রদান করতে পারে। নীতিমালাটি দেশের সব ব্যাংক মানতে বাধ্য বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

খবর বিডিনিউজের। দুর্বল ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান ধীরে ধীরে গ্রহীতা ব্যাংকের আয় থেকে সমন্বয় করা হবে জানিয়ে নীতিমালায় বলা হয়, একীভূত হতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। একীভূত হওয়ার বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে বিশেষ সাধারণ সভা ডাকতে হবে। সভায় অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর করতে পারবে।

একীভূত হওয়ার পরে গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান চাইলে নতুন নাম বা নিজ নামেই ব্যাংকিং পরিচালনা করতে পারবে। নাম পরিবর্তন করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে একীভূত বা ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হলেও তা ব্যাংক কোম্পানি হিসেবে পরিচিত হবে।

একীভূত হওয়ার পর গ্রহীতা ব্যাংকের আর্থিক সূচক প্রভাবিত হতে পারে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গ্রহীতা ব্যাংককোম্পানির কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় নীতি সহায়তা দেওয়া হবে।

ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, সিআরআর, এসএলআর, এলসিআর এর বিপরীতে বিভিন্ন হারে যে সঞ্চিতি রাখতে হয়, তাতেও ছাড় দেওয়া হবে। হস্তান্তরকারী (যে ব্যাংক একীভূত হতে চায়) কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসানকে ‘গুডউইল’ এ রূপান্তরপূর্বক তা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে গ্রহীতা ব্যাংকের আয় হতে সমন্বয়/পরিশোধ করা হবে। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকের অতীতের সব লোকসান পূরণ করা হবে গ্রহীতা ব্যাংকের আয় থেকে।

গ্রহীতা ব্যাংক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সুবিধা পাবে জানিয়ে নীতিমালায় বলা হয়, ব্যাংকের দীর্ঘ মেয়াদি বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা প্রদান, মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার ইস্যু, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুকরণে সহায়তা দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। এর বাইরে গ্রহীতা ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে যে কোনো বিষয়ে সুবিধা নিতে পারবে।

একীভূত হওয়া ব্যাংকের কর্মচারীদের তিন বছরের আগে ছাঁটাই করতে পারবে না গ্রহীতা ব্যাংক। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তার দুই ধাপের নিচের কোনো কর্মকর্তা গ্রহীতা ব্যাংকে চাকরি পাবে না। ব্যাংক একীভূত হওয়ার আগেই দুই ব্যাংকের দায়দেনা ও সম্পদ তৃতীয় কোনো নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা শেষ করতে হবে।

পূর্ণাঙ্গ নীতিমালায় বলা হয়, বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের বেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায় ও সম্পদ গ্রহণ করতে দরপত্র আহ্বান করা হবে পত্রিকায়। দরপত্রে সাড়া না পাওয়া গেলে বা আবেদনকৃত কোম্পানির সক্ষমতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্তুষ্ট না হলে, যে কোনো এক বা একাধিক ব্যাংককে স্কিমের আওতায় এনে যে কোনো ব্যাংককে দায়িত্ব গ্রহণে নির্দেশ দিতে পারবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে যে কোনো ব্যাংককে নির্দেশ দিতে পারবে দুর্বল কোনো ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে। এক্ষেত্রে নির্দেশ পাওয়ার পর ব্যাংকটি অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে উদ্যোগ নেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপবাসীর ঈদযাত্রায় ভরসা কেবল এমভি আইভি
পরবর্তী নিবন্ধজনগণের সেবা করার মাধ্যমে ভবিষ্যতের ভোট নিশ্চিত করুন