ছোট কাকুর পুষি মিঞ

রশীদ এনাম | বুধবার , ৫ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

মিঞ মিঞ মিঞ মিঞ, কেঁ কুঁ কেঁ কুঁ গোঁ গাঁ বিড়ালের ঝগড়া করার শব্দ। ছোট কাকুর পুষি বিড়ালটি মাঝে মাঝে পাশের বাসার হুলো বিড়ালটির সাথে ঝগড়া বাঁধে। ঝগড়ার পর শান্ত হয় দুজনে। ওহ মধুর যন্ত্রনায় আছি। শুভ্র বর্ণের বিড়াল ছানাটি নানা বাড়ি থেকে আনা হয়েছিল।
নানা ভাইয়ের একটা পুষা বিড়াল ছিল। নানা বাড়ি গেলে দেখতাম, নানা ভাই সারাক্ষন বিড়াল নিয়ে মেতে থাকেন। বিড়ালটিও ছিল নানা ভাইয়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু। নানা ভাই তাঁর পোষা বিড়ালকে বাঁশি নামে ডাকত। বাঁশি বলে ডাকলে, মিঞ মিঞ কর সারা দেয়।
নানা ভাই খেতে বসলে বাঁশি ল্যাজ নাড়াত। বাঁশিকে খুব যত্ন করে মাছের কাটা কুটু বেচে খেতে দিত। বাঁশিও গাপুস গুপুস করে খুব আয়েশ করে মাছ খেত। খাবার শেষে জিহ্বা বের করে দু পা সামনে দিয়ে হাই তুলত। উষ্ণতার জন্য শীতকালে নানা ভাইয়ের কম্বলের উপরে শুয়ে থাকে বাঁশি, মাঝে মাঝে কম্বলের উপর গড়াগড়িও করে। বাঁশির বড় গুন হলো সে ইঁদুর ধরায় বেশ পারদর্শী । ইঁদুর শিকার করার পূর্বে বাঁশি ইঁদুর কে নিয়ে খেলা করবে, একেবার দাবা খেলার চালের মতো। ইঁদুর বেচারা বুঝত না যে, বাঁশি তাঁকে ঘায়েল করার জন্য খেলছে। খেলা শেষ হলে ইঁদুরকে বাঁশি কপ করে ধরে মুখে পুরে নিতে। বাঁশি কখনও চুরি করে খাবার খেত না। নানা ভাই যতক্ষন খাবার দিবে না ততক্ষন শান্ত হয়ে দু পায়ের উপর ভর করে গাপটি মেরে বসে থাকেন।
একদিন ছুটির বাঁকে ছোট কাকু নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখে বাঁশি দুটো বাচ্চা প্রসব করেছে। নানা ভাই বাঁশি কে বাটিতে করে মাছ দুধ খাবার খেতে দিচ্ছে। বাচ্চাগুলোর চোখ ফোটেনি কুঁই কুঁই করে ডাকছে, বাঁশি জিহবা দিয়ে ছানা দুটোকে আদর করছে, ছানা দুটি চুক চুক করে বাঁশির বুক থেকে দুধ পান করছে।
ছোট কাকু নানা ভাইকে বললেন, “খালু বাঁশির একটা ছানা আমাকে দিয়েন। ইঁদুরের অত্যাচারে অতিষ্ট, বই ও অপ্রকাশিত গল্পের পান্ডুলিপি, কাপড় চোপড় অনেক কিছু সাবাড় করে দিয়েছে। নানা ভাই ছোট কাকুর কথা শোনে, বাঁশির একটি ছানা ছোট কাকুকে উপহার দিলেন।
ছোট কাকুর খুব শখ হলো বিড়াল পুষবে। বিকেলে বাঁশি যখন ঘুমিয়ে পড়লে, বাঁশির ছানাকে নিয়ে চুপি চুপি বাড়িতে নিয়ে আসেন।
ওদিকে নানা বাড়িতে বাঁশির খুব মন খারাপ। দুটো ছানা থেকে একটা ছানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সারা বাড়ি মিঞ মিঞ করে খোঁজে বেড়াচ্ছে, সারাদিন বেচারা খাবারও খায়নি, অন্য বিড়াল ছানাটিকেও পাহারা দিচ্ছে। আহা মা বলে কথা। তাঁর সন্তানের জন্য কাঁদছে। পৃথিবীর সব প্রাণীর মায়েরা এমনই হয়। বাঁশি নানা ভাইয়ের পায়ের কাছে এসে সে শুয়ে পড়লেন, চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নানা ভাই বাঁশির দুঃখটা বুঝতে পেরে তার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করলেন। বাঁশি
অজোড়ে মিঞ মিঞ করে কেঁদে উঠল।
ওদিকে ছোট কাকু বিড়াল ছানাটি বাড়িতে এনে পড়ল মহা বিপদে। বাঁশির ছেলের নাম রাখা হলো পুষি। ছোট পুষি দুষ্টু প্রকৃতির। সে এটা সেটা পা দিয়ে ফেলে দেয়। এসব কেন্দ্র করে পাশের বাসার বন্যা আন্টিদের সাথে ঝগড়া ঝাটিও কম হয়নি। পুষি যত বড় হচ্ছে দুষ্টামির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সারাদিন ছুটাছুটি আর লম্প ঝম্প, কখনও গাছে কখনও ছাদে।
এক বিকেলে বন্যা আন্টিদের হেঁশেলে প্রবেশ করে রান্না করা ইলিশ মাছ চুরি করে খেয়ে ফেলে। বন্যা আন্টি গিয়ে জমিদার দাদুর কাছে পুষির বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। জমিদার আন্টি বিচার করল, ক্ষতিপুরন দিতে হবে। ছোট কাকু বাজার থেকে ইলিশ মাছ এনে বন্যা আন্টিদের বাসায় ক্ষতিপুরন হিসেবে পাঠিয়ে দিলেন। বন্যা আন্টি ঝগড়াটে মহিলা ইলিশ মাছ পেয়েও শান্ত হয়নি পুষির বিরুদ্ধ থানায় অভিযোগ করার হুমকি দিলেন।
ছোট কাকু যখন গভীর রাতে লিখতে বসেন। পুষি তখন বেলকনিতে দৌড় ঝাপ দেয়। পুষি ইদুঁরে সাথে খেলা করে শেষে গফ করে ধরে খেয়ে ফেলে। জোছনা রাতে প্রায়ঃসময় ছোট কাকু বাড়ির ছাদে জোছনা উপভোগ করেন। ভরাপূর্ণিমার রাতে গানের আনন্দ আড্ডারও আয়োজন করেন। সেই আড্ডায় ছোট কাকুর বন্ধুরাও থাকেন। গানের আসরের এক কোণে বসে পুষিও গান উপভোগ করেন আয়েশ করে। গান শেষে সবাই মিলে ফানুশ উড়ায়, সেদিন মায়ের বাগান বাড়িতে ইলিশ মাছের বারবিকিউ আয়োজন হয়। পার্টিতে হঠাৎ পুষি বিকট শব্দ করে মিঞ মিঞ মিঞ করে চিৎকার করে কাঁদছে। ছোট কাকু বুঝতে পারলেন, পুষির গলায় ইলিশ মাছের কাঁটা আটকে গেছে। ছোট কাকু পুষিকে খোলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটতে লাগল। ডাক্তার বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যেমে পুষির গলা থেকে ইয়া বড় একটা ইলিশ মাছের কাঁটা বের করলেন। পুষি ল্যাজ নাড়িয়ে ডাক্তারকে মিঞ মিঞ করে ধন্যবাদ বাড়ি ফিরতে লাগল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাপানের উপর দিয়ে গেল উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র
পরবর্তী নিবন্ধশরতের রঙ