চিংড়ি ঘেরের জন্য উপকূলীয় বন উজাড়

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য রাতের আঁধারে উজাড় হচ্ছে উপকূলীয় বন। খোদ বন বিভাগের কর্মীদের সহযোগিতায় উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর হাজারো গেওয়া ও কেওড়াগাছ কেটে বন উজাড়ের অভিযোগ উঠেছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলবাসীর সুরক্ষায় লাগানো এই গাছগুলো কাটায় আবার হুমকির মুখে পড়বে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারি গাছ বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বনকর্মীরা।
স্থানীয়রা জানায়, সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের ভাটেরখীল ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় হঠাৎ বেড়েছে চিংড়িঘের তৈরির কাজ। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত করে স্থানীয় বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাতের আঁধারে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর হাজারো গাছ কেটে গড়ে তুলছেন চিংড়িঘের।
ভাটেরখীল উপকূলীয় বনে দেখা যায়, ছাতা মাথায় দিয়ে গাছের চারা পাহারা দিচ্ছেন বন বিভাগের কর্মচারী আবুল হোসেন আজাদ। কিন্তু তাঁর কয়েকশ গজ দক্ষিণেই বনায়নের গাছ কাটছেন কয়েকজন যুবক। একই সময়ে ওই স্থানের উত্তরে দুটি স্কেভেটর দিয়ে গাছ কেটে মাছের ঘের তৈরির কাজ চলছে। আবুল হোসেন আজাদ বলেন, গাছ কাটা ও মাছের ঘের নির্মাণ কারা করছে তা তিনি জানেন না। কর্মকর্তারাও তাঁকে বিষয়টি জানাননি। ওই সব বিষয় রেঞ্জার ও বিট কর্মকর্তারা দেখাশোনা করেন। এ বিষয়ে তাঁর বলার কোনো সুযোগ নেই। তাঁর দায়িত্ব নতুন রোপণ করা চারা গরু-ছাগল থেকে রক্ষা করা।
গাছ কাটায় নিয়োজিত আবুল কাশেম বলেন, ‘৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে গাছগুলো কাটছি। ১ হাজারেরও বেশি ছোট-বড় গেওয়া ও কেওড়াগাছ কেটেছি। আরও ২ হাজার গাছ কাটা বাকি রয়েছে।’
ভাটেরখীল বন বিট কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তাঁকে গাছগুলো কাটার দায়িত্ব দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, ছাবের আহমদ ও আলতাফ উদ্দিন বলেন, সবুজ বেষ্টনীর জায়গাগুলো তাঁদের পূর্বপুরুষদের। আরএস খতিয়ানেও সেই রেকর্ড আছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বন বিভাগ এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগায়। আর যেসব জায়গা খালি ছিল, সেখানে কৃষিকাজ করতেন তাঁরা।
মুরাদপুরের চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী ও সৈয়দপুরের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁদের ইচ্ছে মাফিক উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর হাজার হাজার গাছ কেটে উজাড় করছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অভিযোগ করেছেন। সমপ্রতি অনিয়মের প্রতিবাদ করায় স্থানীয়দের সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝামেলাও হয়েছে।
ভাটেরখীল উপকূলীয় বন বিট কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় নতুন বনায়নের জন্য আমাদের ২২হাজার ৫০০পিস খুঁটি দরকার ছিল। খুঁটি সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে ৪৫০টি গেওয়াগাছ কেটেছি। এসব গাছের শেকড় থেকে আবার নতুন গাছ ও ডালপালা বের হবে। এগুলোর বাইরে কোনো গাছ কাটা বা বিক্রি করা হয়নি।’
তবে সহকারী রেঞ্জার খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর গেওয়া ও কেওড়াগাছ কাটা ঠিক হয়নি।
সীতাকুণ্ড উপকূলের রেঞ্জার মোহাম্মদ কামাল হোসেন এসব অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, উপকূলে নতুন বনায়নের জন্য বেশ কিছু গেওয়াগাছ কাটা হয়েছে। সেখানে মাউন্ড নামের নতুন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাহেদের সঙ্গে আসামি হচ্ছেন স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদ
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনায় আহত চিকিৎসকের মৃত্যু