চসিক লাইব্রেরির সামনে খেলা লালদীঘিকে ঘিরে মেলা

জব্বারের বলী খেলার স্থান পরিদর্শনে মেয়র ।। স্পন্সরের বদলে সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে চসিক

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ করেই নিভে যাওয়া আলো আবার জ্বলে উঠেছে। আর সে আলো জ্বালিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে কখনোই হারাতে দিতে চান না সিটি মেয়র। তাই অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে তিনি এগিয়ে এসেছেন জব্বারের বলী খেলার ১১৩ তম আসর আয়োজনে। অথচ আয়োজকরা গত দুই আসরের মত এবারের আসরও বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। যদিও আগের দুবারের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। কারণ সে সময় ছিল করোনা মহামারী। তবে এবারের সব পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলেও মাঠ সংকটের কারণে বলী খেলা আয়োজনে অপারগতা প্রকাশ করেছিল আয়োজকরা। ঠিক তখনই চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে এলেন সিটি মেয়র। তিনি দুই দফা সভা করে ঘোষণা দেন বলী খেলা আয়োজনের।
এরই মধ্যে তিনি বলী খেলা ঐতিহ্যবাহী মেলার স্থানও নির্ধারণ করে ফেলেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে তিনি মেলা এবং বলী খেলার স্থানও পরিদর্শন করেন। তবে এবারে প্রথমবারের মত লালদীঘি মাঠের বাইরে অনুষ্ঠিত হবে জব্বারের বলী খেলা। লালদীঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরির একটু সামনে কোণায় পশ্চিমমুখী করে স্থাপন করা হবে বলী খেলার মঞ্চ। আর আগের মত লালদীঘি এবং তার আশে পাশের এলাকা ঘিরে আয়োজিত হবে মেলা। আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল তিনদিন বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলবে বলী খেলা। বলী খেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে ২০ ফুট দৈর্ঘ এবং ২০ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র। তিনি বলেন, জব্বারের বলী খেলা এবং বৈশাখী মেলা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। কাজেই এই ঐতিহ্যকে হারাতে দেওয়া যাবে না।
জব্বারের এই বলী খেলার জন্য সারা দেশের বলীরা যেমন অধীর অপেক্ষায় থাকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য তেমনি বৈশাখী মেলাকে ঘিরে থাবে বিশাল এক উৎসব। সারা বছর ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে অপেক্ষায় থাকে কখন আসবে ১২ বৈশাখ। তেমনি নগরবাসীও প্রহর গুনতে থাকে মেলার। কারণ এই মেলা থেকেই যে ঘর, গৃহস্থলী পণ্য সামগ্রী ক্রয় যেন একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যে রেওয়াজে বিঘ্ন ঘটিয়েছে গত দুই বছর মহামারী করোনা।
ইতিহাস মতে ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে বদরপাতি এলাকার আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদীঘি মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা পরবর্তীকালে খেলা ও মেলায় পরিণত হয়। গত একশ বছরেরও বেশি সময় জব্বারের বলী খেলা এবং বৈশাখী মেলা একে অপরের পরিপুরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বলী খেলা জন্ম দিয়েছে অনেক নামী দামি কুস্তিগীর বা বলীর। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১২ বৈশাখ ২৫ এপ্রিল আবার গাইবে নতুন কারো জয়গান।
গতকাল জব্বারের বলী খেলা এবং বৈশাখী মেলার স্থান পরিদর্শনকালে সিটি মেয়রের সাথে ছিলেন মেলা কমিটির সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুর লাল হাজারী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাউল্লা চৌধুরী, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, পুলক খাস্তগীর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রুমকী সেন গুপ্ত, মেলা কমিটির সহসভাপতি ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদল, সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন, বলী খেলার রেফারী ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মালেক, মো. চঞ্চল, মো. ইউছুপ, জিয়াউল হক সোহেল ও কোতেয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ।
সিটি মেয়র বলেন, জব্বারের বলী খেলা শুধু একটি খেলা নয়। এটি আমাদের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমাদেরকে সকলের সহযোগিতা করতে হবে। সময় স্বল্পতার কারণে স্পন্সরের বদলে সম্পূর্ণ আয়োজনের ব্যয়ভার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বহন করবে। কারণ এ মেলায় সাথে আমাদের প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক নিবিড় সর্ম্পক রয়েছে। বৈশাখ মাসকে ঘিরে মেলায় নানাবিদ শৈল্পিক ও গৃহস্থালী পণ্য বিক্রি করার জন্য গ্রামের হস্ত শিল্পের কারিগরগণ ব্যস্ত থাকে। অন্য দিকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নানা খাবারের পসরা তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটায় চট্টগ্রামের কারিগররা। তিনি বলেন, এই মেলার আগের যে জৌলুস ছিল তা এখনো বজায় থাকবে। মেলা বন্ধের সিন্ধান্তে চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরী হয়েছিল তা পুরোপুরি নিরসন হবে এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে। পরে তিনি লালদীঘি পাড়স্থ চকিস লাইব্রেরির দ্বিতীয় তলায় মেলা কমিটির কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেড় মাস বন্ধের পর জমি নামজারির আপিল, রিভিউ, শুনানি ফের সচল
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬