চমেক হাসপাতাল জুড়ে ‘নিরাপত্তার চোখ’

স্থাপন হচ্ছে আরো দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা দালাল ও চোর চক্র নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

হাসপাতাল এলাকায় সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দালাল ও চোর চক্র নিয়ন্ত্রণে নড়েচড়ে বসছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল প্রশাসন। বেশ কিছুদিন ধরে এ নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তৎপরতার অংশ হিসেবে হাসপাতালের ভিতরেবাইরেসহ চারপাশে স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার চোখে ঢাকতে হাসপাতালের সব পয়েন্টেই সিসিটিভি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিশেষ করে দালাল ও চোর চক্র নিয়ন্ত্রণে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ভিতরেবাইরেসহ হাসপাতালের চারপাশে সব মিলিয়ে ২৫৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। কিন্তু এসবের মাঝে বর্তমানে সচল সিসিটিভির সংখ্যা ১২০টির বেশি নয়। অধিকাংশ সিসিটিভি অচল থাকায় হাসপাতালে দালাল ও চোর চক্রের উৎপাত বেড়ে যায়।

দালালের উৎপাত ও ওষুধ চুরি যেন নিত্যকার ঘটনা। কোনোভাবেই এ উপদ্রুব নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। যার কারণে হাসপাতালের প্রতিটি পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, বর্তমানে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এরপরও বহিরাগত বিভিন্ন লোকজনের (দালাল) আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চুরির ঘটনাও ঘটছে। তাই হাসপাতালের কোন কোন পয়েন্ট এখনো সিসিটিভি ক্যামেরার বাইরে সেটি আমরা দেখছি এবং সেখানে নতুন করে সিসিটিভি স্থাপন করছি। পাশাপাশি কোন কোন পয়েন্টে নতুন করে সিসিটিভি লাগানো প্রয়োজন, সেটিও চিহ্নিত করা হচ্ছে। বর্তমানে নতুন করে দেড় শতাধিক সিসিটিভি স্থাপনের কাজ চলছে। প্রয়োজন হলে আরও সিসিটিভি কিনে স্থাপন করা হবে। অর্থাৎ আমরা কোনো পয়েন্ট বাদ রাখতে চাচ্ছি না। সবটাই সিসিটিভির আওতায় আনার কথা ভাবছি।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাইনী ওয়ার্ডসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দালালের উৎপাত চরম পর্যায়ে। রোগীর স্বজনরা কখন ওষুধের স্লিপ নিয়ে বের হচ্ছেন, এর জন্য ওত পেতে থাকে দালালরা। ওষুধের স্লিপসহ কাউকে পেলেই তাকে টেনে নিয়ে যায়। কম দামে ও প্রয়োজনে বাকিতে ওষুধ কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নির্ধারিত ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ফার্মেসিগুলোর সাথে আগে থেকেই চুক্তি থাকে এসব দালালের। বলতে গেলে নির্দিষ্ট কিছু ফার্মেসির হয়েই কাজ করে এসব দালাল। নির্ধারিত ফার্মেসিতে আনার পর কয়েক গুণ বেশি দামে ধরিয়ে দেয়া হয় ওষুধ। এ কাজে একটি নির্দিষ্ট হারে কমিশন পায় দালালরা, যা ফার্মেসিগুলো থেকেই দেয়া হয়। এভাবে দালালদের হাতে নিঃস্ব হচ্ছে গরিবের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নিম্নবিত্ত ও অসহায় রোগীর অসংখ্য পরিবার।

ওয়ার্ডের ভিতরেবাইরে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এ ধরনের উৎপাত অনকেটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। এতে করে রোগীর অসহায় স্বজনরাও দালালের খপ্পর থেকে রেহাই পেতেন। এর বাইরে হাসপাতালের ভিতর থেকে বিভিন্ন সময় নবজাতক চুরির ঘটনাও ঘটেছে। ওষুধ চুরি তো অনেকটা নিত্যকার ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি ওষুধ চুরির ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। এর মাঝে হাসপাতালের সরকারি কর্মচারীও রয়েছে। দালালের পাশাপাশি এ ধরনের বিভিন্ন চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে হাসপাতালে।

এদের নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে হাসপাতালকে ‘নিরাপত্তার চোখে’ ঢাকতে চায় হাসপাতাল প্রশাসন। একই সাথে দর্শনার্থী প্রবেশেও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি বহিরাগত, দালাল ও চোর চক্র নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নতুন করে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে আজ
পরবর্তী নিবন্ধসড়কের দেড় লক্ষাধিক ইট বিক্রি!