চমেকের নাসিরাবাদ হোস্টেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

মেসের কর্তৃত্ব নিয়ে ফের মুখোমুখি দুই পক্ষ শিক্ষার্থীদের বের করে তালা দিল প্রশাসন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) নাসিরাবাদস্থ হোস্টেলের মেসের কর্তৃত্ব নিয়ে আগের দিন (বুধবার) মারামারিতে জড়ায় নাছির ও নওফেল গ্রুপ। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই পক্ষকেই অধ্যক্ষের অফিসে ডাকা হয়। কিন্তু অধ্যক্ষের অফিস থেকে ফেরার পর তারা ফের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে আবারো ধাক্কাধাক্কি ও ভাঙচুরে জড়ায়। পরপর দুদিনের এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নাসিরাবাদের এই হোস্টেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে চমেক প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে নাসিরাবাদের দুটি হলেই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার আজাদীকে বলেন, আগের দিন মারামারির ঘটনায় দুই পক্ষের ১০ জনকে আমরা ডেকেছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলি। কিন্তু হলে গিয়ে দুই পক্ষ আবারো বিবাদে জড়ায়। এমন চলতে থাকলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া মাঝখানে ছুটির দিন (শুক্রবার) পড়ে গেছে। এই সময়ে যদি কোনো অঘটন ঘটে, আমরা সে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। যার কারণে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নাসিরাবাদের এ দুটি হল অনিদির্ষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। সিদ্ধান্তের পরপরই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়। শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় দুটি হলই তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তবে মেইন হোস্টেল (চট্টেশ্বরী সড়কের) চালু থাকছে জানিয়ে চমেক অধ্যক্ষ বলেন, ওটাতে তেমন সমস্যা হয়নি। তাই সেটি চালু রাখা হয়েছে। অবশ্য, মেইন হোস্টেলে পুলিশ ফোর্স বাড়ানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) নাসিরাবাদের হোস্টেলে মেসের কর্তৃত্ব নিয়ে মারামারিতে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। গতকাল বিকেলে নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর সড়কের হাফিজুল্লাহ বশির শাওন ছাত্রাবাস ও লুৎফুস সালাম ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে একটি পক্ষ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে যাওয়া পাঁচলাইশ থানার এসআই শরীফ রুকুনুজ্জামান আজাদীকে বলেন, মেস ম্যানেজার হওয়া নিয়ে দুই গ্রুপের তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে দুজনের শরীরে সামান্য আঁচড় লাগে। আর কক্ষের একটি পানি রাখার পাত্র/ফিল্টার ভেঙে যায়। তবে কলেজের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

চমেক সূত্রে জানা গেছে, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর সড়কে হাফিজুল্লাহ বশির শাওন ছাত্রাবাস ও লুৎফুস সালাম ছাত্রাবাস নামে দুটি ছাত্রাবাস (হোস্টেল) রয়েছে। এ দুটি হল চমেকের নাসিরাবাদের হোস্টেল হিসেবে পরিচিত। প্রথম বর্ষের ৭০ জনের মতো ছাত্র এ দুটি হলে থাকেন। দুটি হোস্টেল মিলিয়ে এক মেসের মাধ্যমে ডাইনিং পরিচালনা করা হয়। সিলেকশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রতি মাসে একজন মেস ম্যানেজার নির্বাচন করা হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই দুটি হোস্টেলেও এখন দুটি পক্ষ সক্রিয়। একটি পক্ষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং অপর পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। তবে এখানেও নাছির অনুসারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বরাবরই নাছির গ্রুপের মধ্য থেকেই মেস ম্যানেজার হয়ে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে ক্ষোভ রয়েছে নওফেল অনুসারীদের মাঝে। গত মঙ্গলবার মেস ম্যানেজার নির্বাচনের মিটিং থাকলেও সেখানে নওফেল অনুসারীরা যোগ দেয়নি। যদিও বৈঠকের কথা তাদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ নওফেল অনুসারীদের।

ফলে মেস ম্যানেজার নির্বাচনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। কিন্তু বুধবার গিয়ে নিজেদের গ্রুপের একজন মেস ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করবে বলে দাবি করে তারা (নওফেল অনুসারীরা)। এ নিয়ে তর্কাতর্কি থেকে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। হলের কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এতে নিজেদের দুজন আহত হয়েছে বলে দাবি করে নাছির অনুসারীরা।

এ ঘটনায় দুই পক্ষের দশজনকে বৃহস্পতিবার অফিসে ডেকে আনে চমেক প্রশাসন। শনিবার (আগামীকাল) এই দশ জনের অভিভাবকদের নিয়ে আসতে বলা হয়। তবে অধ্যক্ষের অফিস থেকে হোস্টেলে ফিরতে না ফিরতেই গতকাল বিকেলে ফের মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। আবারো উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়ে দুটি হল অনিদির্ষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে চমেক প্রশাসন। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় দুটি হলে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেসরকারিভাবে হজে এবার খরচ বাড়ছে দেড় লাখ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধমায়ের আত্মহত্যার পর কারাগারে বাবা