মায়ের আত্মহত্যার পর কারাগারে বাবা

কী হবে অসহায় দুই শিশুর!

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৯:২১ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ার পারুয়ায় গত বুধবার রাতে আত্মহত্যা করেছেন মা পম্পী মালাকার (২৯)। আর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় কারাগারে বাবা লিটন মালাকার (৪৭)। এ অবস্থায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে অপূর্ব মালাকার (১০) ও দিয়া মালাকার ()। এই ঘটনার পর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অসহায় দুই শিশুর। কী হবে তাদের, কার কাছে মানুষ হবে তারা।

উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সাহাব্দীনগর গ্রামের কেরানি বাড়ির প্রয়াত রাজেন্দ্র মালাকারের ছেলে লিটন। নিহতের পিতা মন্টু চৌধুরীর দায়ের করা আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় লিটনকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে ভোরে লিটনের স্ত্রী পম্পীর লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৮টার দিকে শ্বশুর বাড়ি এলাকায় তার লাশ দাহ করা হয়। পম্পী ও লিটন দম্পতির ছেলে অপূর্ব ও মেয়ে দিয়া মালাকার বর্তমানে নানানানির সাথে রাঙামাটি নানার বাড়িতে রয়েছে।

পম্পীর বাবার বাড়ি রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াদাম এলাকায়। রাতে মায়ের লাশ দাহ করার সময় বাকরুদ্ধ শিশু দুটির মুখ ছিল মলিন। তাদের নানা মন্টু চৌধুরী এবং নানী বকুল রানী চৌধুরীর আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছিল।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহতের পিতা মন্টু চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার ভোররাত চারটার দিকে জামাতা আমার মেয়ে শীলাকে ফোন করে বলে আমার মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করেছে। আমি ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পারুয়ায় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এসেছি।

তিনি বলেন, ১১ বছর আগে লিটনের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। কাতারপ্রবাসী জামাতা লিটন বিদেশ থাকা অবস্থায় আমার মেয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পাকা একতলা ঘর তৈরি করে। ১০ মাস আগে কাতার থেকে দেশে ফিরে আসে লিটন। আসার পর থেকে পাওনাদাররা টাকা ফেরত পেতে চাপ সৃষ্টি করে। আমার মেয়ে লিটনকে টাকা পরিশোধের জন্য বললে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এছাড়া সংসারের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমার মেয়েকে প্রায় সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। আমার মেয়ে স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে পাঁচ মাস আগে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের অনুরোধে সামাজিকভাবে বৈঠক করে স্ট্যাম্প দিয়ে আমি আমার মেয়েকে লিটনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। গত বুধবার রাতে আমার স্ত্রী বকুলকে লিটনের মা পটোরানী মালাকার ফোন করে তারা স্বামীস্ত্রী দুইজনে খুব ঝগড়া করছে বলে জানায়। কিন্তু মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা ফোনটা দেয়নি। পরে ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আমার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

এদিকে লিটনের মা পটোরানী মালাকার বলেন, বুধবার রাত ৯টার দিকে তারা (স্বামীস্ত্রী) যখন ঝগড়া করছিল, তখন আমি পম্পীর মায়ের সাথে কথা বলছিলাম। তাকে ঝগড়ার বিষয়টি জানালে মেয়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে কথা বলবে না বলে দুই সন্তানকে নিয়ে রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন আমার ছেলে লিটন ঘরের বারান্দায় সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে। ভোররাত চারটার দিকে দুই সন্তান ফ্যানের সঙ্গে মায়ের ঝুলন্ত নিথর দেহ দেখে ঘরের সবাইকে ডাকাডাকি করে। পরে ঘরের দরজা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করি আমরা। কিন্তু ততক্ষণে পম্পী আর বেঁচে ছিল না।

রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুব মিল্কী বলেন, লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় গৃহবধূর স্বামী লিটন মালাকারকে গ্রেপ্তার করে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেকের নাসিরাবাদ হোস্টেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধকোমর ভাঙলেও বিএনপির ষড়যন্ত্র থেমে নেই : তথ্যমন্ত্রী