চট্টগ্রামের সিনেমা হল ও সিনেমার সেকাল-একাল

বাসুদেব খাস্তগীর | মঙ্গলবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

কৈশোর বয়সে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অনুভূতিটা মনে জাগ্রত হলে আমরা একরকম নস্টালজিয়ায় ফিরে যাই। সিনেমা দেখা ছিলো সে সময়ের দুর্নিবার এক আকর্ষণ। তার কারণও অবশ্য ছিলো। তখনকার সময়ে ইন্টারনেট প্রযুক্তির যুগ ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের এমন যুগ ছিলো না। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা ছিলো বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। আমাদের চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলো ছিল এতদঞ্চলের সেই বিনোদনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। এই সিনেমা হলগুলোকে ঘিরে এখনও আবর্তিত হয় অনেকের আনন্দবেদনার স্মৃতি জাগানিয়া স্মৃতি। আমাদের প্রজন্মের যারা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি কিংবা বিনোদনকে ভালোবাসতেন তাদের মধ্যে এমন কেউ বলতে পারবে না যে একবারও সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেনি। তরুণ বয়সে সিনেমা দেখাকে কেন্দ্র করে কত স্মৃতিই না মনের কোণে প্রতিনিয়ত দোলা দেয়। এ প্রজন্মের অনেকের কাছে সে কাহিনি গল্পের মতই শোনাবে। সে সময় সিনেমা কেন্দ্রিক যে বিনোদন তা ছিলো মূলত শহর কেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলে বা মফস্বল এরিয়াতে তখন সিনেমা হল তৈরি হয়নি। তরুণ বয়সে সেই দল বেঁেধ সিনেমা দেখার যে প্রবণতা এটা শুধু গ্রাম নয়, শহরভিত্তিক তরুণদের মধ্যেও প্রকটভাবে বিদ্যমান ছিল। তখনকার সময়ে সিনেমার রমরমা দিনের কথা মনে হলে এখন বিস্মিতই হতে হয়। এখনকার সময়ের অনেকেই আছে যারা কখনও সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেনি বা অনেকের সাথে সিনেমা হলের পরিচিতিই ঘটেনি। তারা এখন বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে মনে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচরণ, ভিডিও গেম বা ইউটিউবে সিনেমা নাটক ইত্যাদি উপভোগ করা। সিনেমা হলে গিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে নিয়ে সিনেমা দেখার যে অপার আনন্দ তা এ প্রজন্মের অনেকেরই নেই। কৈশোরে আমরা যখন গ্রাম থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসতাম শহরে নানা কাজের পাশাপাশি সিনেমা দেখার একটা গোপন ইচ্ছা মনে পোষণ করেই আসতাম এবং তা অনেকের ক্ষেত্রেই ছিলো একটি চরম বাস্তবতা। এই ইচ্ছেটা অনেক সময় বাস্তবে রূপ নিতো আবার অনেক সময় স্বপ্নই থেকে যেতো। কারণ তখনকার দিনে সময়ে সময়ে সিনেমার টিকেট জোগাড় করা ছিলো রীতিমত ছোটখাটো এক যুদ্ধের মত ব্যাপার। টিকেট কালোবাজারির একটা বিরাট চক্র প্রত্যেক সিনেমা হলকে ঘিরে থাকতো। তারা ছিলো এলাকার অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে যাবার তেমন সাহস কারো ছিলো না। এই টিকেট কালোবাজারি নিয়ে দর্শক ও পুলিশের সাথে নানা সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটতো এবং সে সময় পত্রপত্রিকায় তা রীতিমত শিরোনাম হয়ে খবর প্রকাশিত হতো। অনেক সময় টিকেট না পেয়ে দর্শকরা হতাশ হয়ে ফিরতো বাড়িতে বা বাসায়। শহরে এসে সিনেমা দেখে সে সিনেমার কাহিনি স্মৃতিতে ধারণ করে এবং তা সিনেমা না দেখা বন্ধুদের শোনানোর জন্য মন উদগ্রীব হয়ে থাকতো। বন্ধুরা শুনে আনন্দ পেতো এবং সুযোগ পেলে তারাও একসময় শহরে এসে সিনেমা দেখে যেতো। অনেক সময় শহরে এসে সিনেমা দেখার ইচ্ছে বিসর্জন দিয়ে সিনেমা হলের সামনে টাঙানো বিরাটকায় পোস্টারে চোখ রেখে বাড়িতে ফিরে যেতে হতো। বন্ধুদের সেটা বললে তারা বলতে ‘দেওয়াল শো’ দেখে এসেছিস। সিনেমা দেখা বন্ধুদের সিনেমার কাহিনি শুনতে শুনতে স্কুলে যাবার সময় কত যে পথ পাড়ি দিয়েছি তার সীমা নেই। সিনেমা হলের সামনে সিনেমার নানা ঘটনা প্রবাহের আলোকে নায়ক নায়িকার ছবি সম্বলিত পোস্টার তোলা হতো নতুন ছবি শুরুর দিনে বা আগের দিনে। পোস্টারগুলো দেখে মন জুড়িয়ে যেতো আর মনে মনে কল্পনা করতাম অবিকল কীভাবে নায়ক নায়িকার ছবি এঁকে এ পোস্টার করে কারা? সেসব শিল্পীদের কথা মনে মনে ভাবা হতো এবং তাদের আয়েরও একটি চমৎকার উৎস ছিলো। নতুন সিনেমা শুরুর আগে দিনে কোনো কোনো জায়গায় মাইক দিয়ে এনাউন্স করা হতো, সে এনাউন্সের ভাষাও ছিলো অন্যরকম। যার কণ্ঠ মাধুর্য সুন্দর ও কথা বলায় চমৎকারিত্ব ছিলো সে ব্যক্তি সিনেমার এনাউন্স করতো। দরাজ কণ্ঠের সেই এনাউন্স পাবলিকের মনকে ছুঁয়ে যেতো এবং তার এ রকম এনাউন্স শুনে অনেকেই সেই সিনেমা দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠতো। সেই সিনেমার গান কিংবা কাহিনির অংশ বিশেষ তাঁর কণ্ঠেতে শুনিয়ে সাধারণ পাবলিকের মনকে নাড়া দিয়ে যেতে কত রকমের প্রচেষ্টাই না ছিলো। অনেক সিনেমা ছিলো ব্যবসা সফল এবং সিনেমা হলের ব্যবসাও ছিলো জমজমাট। শুধু কি তাই? পত্রিকা জুড়ে থাকতো সিনেমার বিজ্ঞাপন। একসময় ইত্তেফাকের এক দুই পৃষ্ঠা জুড়ে থাকতো সিনেমার বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপন দেখতে তখনকার সময়ের তরুণ মন থাকতো উদগ্রীব। শুধু সিনেমার খবর নিয়ে বের হতো চিত্রালী বা পূর্বাণীর মত সিনেমাভিত্তিক পত্রিকা। সেইসব পত্রপত্রিকায় সিনেমা জগতের রমরমা খবরসহ সিনেমা সংশ্লিষ্ট অভিনেতা অভিনেত্রীদের ছবি ও সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাছে পাঠকের করা নানা প্রশ্নের উত্তরও থাকতো। এক শ্রেণির পাঠকের কাছে এসব পত্রিকা ছিলো ভীষণ জনপ্রিয়। রেডিওতে একসময় ‘বিজ্ঞাপন তরঙ্গ’ নামে একটা অনুষ্ঠান ছিলো। শ্রোতাদের অনুরোধের গান শোনা হতো এবং সে গানের অধিকাংশই ছিল সিনেমার গান। সেখানে সিনেমার বিজ্ঞাপনও প্রচারিত হতো। সিনেমা প্রিয়রা সেখানে সিনেমার গান শোনার পাশাপাশি শুনতো সিনেমার বিজ্ঞাপন। গ্রামাঞ্চলে রেডিও ছিলো বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। ঘরে ঘরে রেডিও শোনা হতো এবং ছেলে মেয়েরা সিনেমার বৈচিত্র্যময় বিজ্ঞাপন শুনে সিনেমা দেখায় আগ্রহী উঠতো। রেডিওতে সিনেমার বিজ্ঞাপনেরও একটা ভিন্ন আকর্ষণ ছিলো। চমৎকার কণ্ঠে নানা ভঙ্গিমায় সে বিজ্ঞাপন মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে যেতো বিচিত্রভাবে। সিনেমা দেখার প্রবণতা তখন ছিলো বেশিরভাগ শহর কেন্দ্রিক। শহরে বসবাসকারী তরুণরা তো ছিলই, পাশাপাশি গ্রাম থেকে শহরে এসে সিনেমা দেখার প্রবণতাও ছিল প্রবল। সবসময় আসতে না পারলেও সময়ে সময়ে এসে সিনেমা হলে ঢুঁ মারা হতো। পরিবারের সবাইকে নিয়েও সিনেমা দেখার একটা পরিবেশ ছিল। পরে ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলের বড় বড় বাজারে কিছু কিছু সিনেমা হল গড়ে ওঠে। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার যে উদ্দীপনা বা সিনেমাকে ঘিরে এক শ্রেণির তরুণের যে দুর্নিবার আকর্ষণের যুগ, সে কথা এখন যেন কল্প কাহিনির মত। এখনকার প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সে সময়ের বিনোদন হিসাবে সিনেমা দেখার যে দৃশ্যপট তা কল্পনাই করতে পারবে না। সে সময়ে শহর গ্রাম সর্বত্র ফুটবল খেলা ছিলো জনপ্রিয়সে সময়ের কেউ যেমন ছোটবেলায় ফুটবল খেলেনি এমন কাউকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না, ঠিক তেমনি সে সময়ে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা না দেখা এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন এসব স্মৃতি অতীত। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে এমন উদাহরণ প্রচুর যে, তারা অনেকেই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেনিএকথা অনেকটাই সত্যি। চট্টগ্রামের যে সব সিনেমা হলে আমাদের বিনোদনের দিন পার হয়েছে সেগুলোর এখন কেমন অবস্থা আমরা অনেকেই জানি। প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ আমাদের সিনেমা হল ভিত্তিক সিনেমাকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এখন যে সিনেমা হচ্ছে তা দেখার ধরন ও রকম পাল্টে গেছে। প্রযুক্তিকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। প্রযুক্তি আমাদের অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে সত্যি কিন্তু সে সময়ের চিরচেনা পরিবেশটাকে যেন কৃত্রিমতায় এবং এক ধরনের যান্ত্রিকতায় ভরিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামের জলসা, নূপুর, উজালা, লায়ন, খুরশীদ মহল, সিনেমা প্যালেস, গুলজার, আলমাস, দিনার, রঙ্গম, বনানী কমপ্রেক্স, সাগরিকা সিনেমা হলের নামগুলো ছিলো মুখে মুখে। পতেঙ্গার দিকে একটি নেভী হলও ছিল। এসব সিনেমা হলের সামনে প্রতিনিয়ত শো চলাকালীন সময়ে ভিড় লেগেই থাকতো। টিকেট কালোবাজারি নিয়েই ঘটে যেতো লংকাকাণ্ড। চট্টগ্রামের সেই সিনেমা হলগুলোর অধিকাংশই এখন ব্যবসায়িক মার্কেট। সুউচ্চ দালানের দিকে তাকালেই এখনকার কেউ মনে করতে পারবে না এখানে একসময় জমজমাট সিনেমার প্রদর্শন হতো। সেই সময়ের রাজ্জাককবরী, রাজ্জাকশাবনা, আলমগীরশাবানা, ফারুক ববিতা, জাফর ইকবালববিতা, ইলিয়াছ কাঞ্চনচম্পা, আজিমসুজাতা, রহমানশবনম, ওয়াসিমরোজিনা, অলিভিয়ামাহমুদ কলি, উজ্জ্বলশাবানা, ওয়াসিমঅঞ্জু ঘোষসহ নানা জুটির নায়ক নায়িকার অভিনয় দশর্কদের মুখেমুখে আলোচিত হতো। সোহেল রানা ও জসিম অ্যাকশন হিরো ছিলো অতুলনীয় তারকা। সামাজিক ও পারিবারিক ঘরানার সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে পরিবারের সবাই মিলে সেগুলো উপভোগ করতে সবাই হলে ছুটে যেতো। সেই সময়ের অনেক জনপ্রিয় সিনেমার গান এখনও সমান জনপ্রিয়। রেডিওতে সে গানও প্রতিনিয়ত শুনা হতো এবং সে সব সিনেমার গান শুনলে যেন সেই দিনেই মন ফিরে যায়। চট্টগ্রামের বিখ্যাত সুরকার সত্য সাহার হাত ধরে সেই সময়ে চলচ্চিত্রে সৃষ্টি হয়েছে অনেক কালজয়ী গান। গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সাথে ছিলো তাঁর চমৎকার বোঝা পড়া। চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে ‘ঐকতান’ নামে একটি রেকর্ডিং এর দোকান ছিল। সেই সময়ের চলচ্চিত্রের অনেক গান তালিকা করে দিয়ে ক্যাসেটে রেকর্ড করে নিয়ে আসতাম। তখন ফিতা জড়ানো ক্যাসেটে গান রেকর্ডিং করা হতো। বাড়িতে এনে চলচ্চিত্রের সেই সব গান অবসরে টেপ রেকর্ডারে সময়ে সময়ে বাজিয়ে শোনা হতো। আর এখন কত সহজভাবে বিনোদনের এই মাধ্যমগুলো প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের বদলে আমরা পেয়ে যাচ্ছি। তখনকার সময়ে সিনেমার সংখ্যার চেয়ে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। আর ঈদ এলেতো কথাই ছিলো না। নতুন সিনেমার বুকিং নিশ্চিত করা নিয়ে হলগুলোর মধ্যে রীতিমত এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হতো। প্রতিটি সিনেমা হল দর্শক টানতে নানা রকম সাজসজ্জার ব্যবস্থা করতো। সিনেমা হলের মালিক ও কর্মচারীরা উৎসবের আমেজে দিনাতিপাত করতেন। সিনেমা হলের কর্মচারীদেরও বেশ কদর হতো। অনেকেই পরিচিতির সুবাধে তাদের কাছে টিকেটের জন্য ধর্ণা দিতো। বেতন ভাতা বোনাসসহ নানা সুযোগ সুবিধা তারা পেতেন। টিকেট না পেয়ে কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও সিনেমা হলে দেখতেন। এই ছিলো সিনেমার সেই স্বর্ণালী যুগ। পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পে এক ধরনের অশ্লীলতার আগমন হলে দর্শকরা ধীরে ধীরে মানুষ সিনেমা বিমুখ হতে থাকে। প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আগমনের যুগে সিনেমাহলগুলো যেন ক্রমান্বয়ে সেই দিনকে হারিয়ে ম্রিয়মান হয়ে পড়ে। এক তথ্যে দেখা যায় চট্টগ্রামের সেই সোনালি দিনের সিনেমা হলগুলোর মধ্যে বনানী কমপ্লেক্স, জলসা, নূপুর, মেলোডি, উজালা, লায়ন, খুরশিদ মহল, রঙ্গম, গুলজার, আলমাস, দিনার, সানাই, উপহার, রিদম, সাগরিকা, অলঙ্কার, চাঁদনী, কর্ণফুলী, রূপালী, পূরবী, গ্যারিসনএকের পর এক ভেঙে অট্টালিকা করা হয়েছে এবং সেখানে সিনেমা হলের বদলে তৈরি করা হয়েছে বড় বড় শপিং মল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হলের নামটি রেখে মার্কেটের নাম রাখা হয়েছে। যেমন জলসা মার্কেট, নূপুর মার্কেট, মহল কমপ্লেক্স, গুলজার শপিং কমপ্লেক্স ইত্যাদি। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় চট্টগ্রাম নগরীতে একসময় ২৭ টির মতো সিনেমা হল ছিল। এখন তার সবকটিই বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। এখন চট্টগ্রাম শহরে সিনেমা প্যালেস ও সুগন্ধা সিনেমা হল ছাড়া আর কোনো সিনেমা হল সম্ভবত চালু নেই। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের মালিকদের মধ্যে অনেকেই জীবন জীবিকার প্রয়োজনে সিনেমা হলের ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য ব্যবসায়। এই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আমাদের সাংস্কৃতিক জগতকে আলোকিত করেছেন অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। সংগীত, নাটক কিংবা মঞ্চসবখানেই ছিল এই চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মীদের অবাধ বিচরণ। অবশ্য সেই ধারা এখনো বিদ্যমান। চট্টগ্রাম তো শিল্প সাহিত্য সংষ্কৃতি ও বিনোদনের অন্যতম পাদপীঠ। একসময়ের চলচ্চিত্র কাঁপানো নায়িকা শাবানা ও কবরীতো এই চট্টগ্রামেরই মেয়ে। এক সময় ২৭টি মত সিনেমা হল নিয়ে যে শহরটি সিনেমা জগতকে অনেক কিছুই দিয়েছিলো সে সিনেমা হলগুলো আজ শুধুই অতীতের ম্মৃতি। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীন আলমাস ও দিনার সিনেমা হল দীর্ঘদিন চালু ছিলো, কিন্তু এখন এ দুটিও বন্ধ রয়েছে। সেগুলোও সম্ভবত বড় কোনো বাণিজ্যিক ভবন বা অন্য কিছু তৈরির অপেক্ষায়। তবে বর্তমানে সিনেমা দেখার রুচিবোধের মধ্যেও এক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখনও বড় পর্দায় সিনেমা উপভোগ করতে চায় যেটার ব্যবস্থাপনা অনেকটা আরামদায়ক। চট্টগ্রামও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ঢাকায় এখন অনেক মাল্টিপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও তার ঢেউ লেগেছে। চট্টগ্রাম শহরে ইতোমধ্যে কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্স চালু হয়েছে এবং দর্শকদের কাছ থেকে ভালো সাড়াও মিলছে। চট্টগ্রামের প্রথম সিনেপ্লেক্স সিলভার স্ক্রিন

২০১৮ ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় ফিনলে স্কয়ারে যাত্রা শুরু করে। এরপর চট্টগ্রামে চালু হয় আরেকটি মাল্টিপ্লেক্স ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’। এটির অবস্থান শহরের চকবাজার এলাকায় বালি আর্কেড শপিং কমপ্লেক্সে। দুটি মাল্টিপ্লেক্স বেশ ভালো সংখ্যক দর্শকদের আকর্ষণ করছে। চট্টগ্রামে সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার খবরের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হযেছে সেখানে সিনেপ্লেক্সের নতুন মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের খবর সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জাগাচ্ছে। এখন বেশ কিছু ভালো চলচ্চিত্রও নির্মাণ হচ্ছে এবং অনেক চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসাও অর্জন করে আমাদের সুনাম বৃদ্ধি করছে। এগুলো সবই ইতিবাচক দিক। আশা করা যায় চলচ্চিত্রের সেই পুরানো ঐতিহ্যের দিন পেরিয়ে নতুন আঙ্গিকে আবার নতুন চলচ্চিত্রের পরিবেশ তৈরি হবেসেখানে এই চট্টগ্রামও অতীতের মত একটি ভূমিকা রাখবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বিএমসি ডিগ্রি কলেজ,চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউচ্চ শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
পরবর্তী নিবন্ধসৃজনশীলতায় উর্বর চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গন