সৃজনশীলতায় উর্বর চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গন

ঋত্বিক নয়ন | মঙ্গলবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

সংস্কৃতি চর্চায় প্রতিটি মানুষের মানসিক ও জাগতিক জীবনের পরিশীলন ঘটে। যে কোন জনপদের সামগ্রিক জীবনআচরণের নামই সংস্কৃতি। সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, ভাষ্কর্য, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি, কারুশিল্প, হস্তশিল্প ইত্যাদি সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোর উৎকর্ষপরিপূর্ণতা সাধন না হলে জাতীয় জীবনের পরিপূর্ণ অগ্রগতি সম্ভবপর নয়। সংস্কৃতি বর্জিত, আলোকিত সমাজ হতে পারে না। সেই আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে চট্টগ্রাম বরাবরই অগ্রগামী। তাই এ কথা আজ পরীক্ষিত যে, চট্টগ্রামেই শুরু হয় সবকিছুর ; সে আন্দোলন সংগ্রাম হোক আর সংস্কৃতি চর্চা; সৃজনশীলতায় উর্বর চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বিকাশের ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক তৎপরতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এখানে হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে। কখনও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে আসন্ন রাজনৈতিক সংকটের পূর্বলক্ষণ দেখে, কখনও বা রাজনৈতিক আন্দোলনের সহযোগী শক্তি হিসেবে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর অসহযোগ, খেলাফত আন্দোলনের কালেও এখানকার সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতা স্থিমিত না হয়ে জোরদার ছিল।

সাংস্কৃতিক বিকাশ পঞ্চাশের দশকে : বিশ এর দশকে সুরেন্দ্রলাল দাসের নেতৃত্বে আর্য সংগীতের শিল্পী দলের নিখিল বঙ্গ কংগ্রেস সম্মেলনে যোগদান ঐ সময়ে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। চট্টগ্রামের ‘প্রগতিলেখক সংঘের’ প্রতিষ্ঠা, কবিয়াল সমিতি গঠন, নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের সম্মেলন উপলক্ষে মাণিক বন্দোপাধ্যায, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ সাহিত্যিক কবির আগমন, ১৯৪৬ খ্রীস্টাব্দের অশান্ত পরিবেশে জনগণের মধ্যে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ভাব জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন, প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকা সীমান্ত প্রকাশের উদ্যোগ ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে এর বহিঃ প্রকাশ ঘটে। তবে চট্টগ্রাম নগরীর সাংস্কৃতিক বিকাশ মূলত পঞ্চাশের দশক থেকেই। সেই সময় চট্টগ্রাম কলেজ, রেলওয়ে ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউট, সেন্ট প্লাসিডস স্কুল, জে. এম. সেন হল প্রভৃতি রঙ্গমঞ্চে নিত্যনতুন অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। আর্য সঙ্গীত সমিতি (১৯০৬), সঙ্গীত পরিষদ (১৯৩৯), চট্টগ্রাম কৃষ্টি কেন্দ্র, প্রাচ্য ছন্দ গীতিকা এবং ছোট বড় আরো কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম শহরে সংস্কৃতি চর্চায় ব্রত ছিল।

১৯৪৭ সালের দিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশ ক’জন প্রতিভাবান শিল্পী সাহিত্যিকের চট্টগ্রামে আগমন ঘটে। এদের মধ্যে উল্লেখ করতে হয় কথা শিল্পী শওকত ওসমান, মোতাহার হোসেন চৌধুরী, ইবনে গোলাম নবী প্রমুখের নাম। এদের সাথে যুক্ত হলেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা। তাঁদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় মাহবুব উলআলম চৌধুরীর সম্পাদনায় চট্টগ্রাম থেকে প্রথম প্রগতিশীল সাহিত্যপত্র ‘সীমান্ত’ এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ক্রমে তা হয়ে উঠে চট্টগ্রামের প্রবীণনবীন লেখক, সাহিত্যিক শিল্পীদের মিলন কেন্দ্র এবং তার পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ছিলেন আবুল ফজল, কবি ওহীদুল আলম, শুভাশীষ চৌধুরী প্রমুখ। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকাের বিকাশে প্রধান কেন্দ্রস্থলহয়ে উঠে ‘সীমান্ত’।

১৯৫০ সালের দিকে শিল্পী কলিম শরাফী গড়ে তুলেন নাট্য সমপ্রদায় “প্রান্তিক নব নাট্য সংঘ’। কবিয়াল রমেশ শীলকে সভাপতি করা হয়। ১৯৫১ সালে ১৬ই মার্চ মোমিন রোডস্থ হরিখোলার মাঠে সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রখ্যাত পুঁথি গবেষক আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ। উক্ত অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমন্ত্রিত শিল্পী সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক সাহিত্যিক সত্যেন মজুমদার, গীতিকার ও সুরকার ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সলিল চৌধুরী ও তাঁর দল, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী সুখেন্দ গোস্বামী ও শ্রীমতি হেনা দে। স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন কবিয়াল রমেশ শীল ও তাঁর দল।

দেশ বিভাগের পর চট্টগ্রাম শহরে সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে আর্য সঙ্গীত চিল একমাত্র প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ছিলেন সুরকর্তা সুরেন্দ্র লাল। অবশ্য পরবর্তীতে ‘প্রান্তিক’ নবনাট্য সংঘ সংস্কৃতি চর্চায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রান্তিক গণসঙ্গীত ছাড়াও জীবন ঘনিষ্ঠ নাটক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং দেশ বিভাগের পর সর্বপ্রথম স্ত্রী পুরুষের মিলিত অভিনয়ে কলিম শরাফীর পরিচালনায় ১৯৫২ সালের ১৪ই অক্টোবর এনায়েত বাজারস্থ ওয়াজিউল্লাহ রঙ্গ মঞ্চে সাফল্যের সঙ্গে জবানবন্দী নাটক অভিনীত হয়। প্রান্তিক নাট্যকর্মীদের মধ্যে ছিলেন কলিম শরাফী, মাহবুব হাসান, অচিন্তকুমার চক্রবর্তী, মোহাম্মদ ছাদেক আলী, কাজী আলী ইমামসহ আরো অনেকেই। কিন্তু নির্বাচনে মুসলিমলীগের শোচনীয় পরাজয় হলে ৯২ () ধারা জারী হয়। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের জেলে পুরতে থাকে সরকার। ‘প্রান্তিক’ এর কর্মীরা আত্মগোপণে যেতে বাধ্য হন। তাতেও শেষরক্ষা হয় নি। অনেকে কারাবরণ করলেন।

রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকী’ পালন : ১৯৬২ সালে দেশব্যাপী ‘রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকী’ পালনের পরিকল্পনা করা হয়। সরকার ও প্রতিক্রিয়াশীল মহল থেকে বাধার কারণে ঢাকায় ব্যাপক আকারে ‘রবীন্দ্রজন্মশত বার্ষিকী’ পালন করা গেল না। কিন্তু চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড স্কুলের উন্মুক্ত মাঠে সাত দিন ধরে এ জন্মশত বার্ষিকী পালিত হয়েছিল মহাসমারোহে। এই বার্ষিকী পালনে যাদের বিশেষ অবদান ছিল তাঁরা হলেনডাঃ কামালএ খান, কাজী হাসান ইমামএম. . জামাল, পল্টু ভট্টাচার্য, অনিল গুহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জাগৃতি নাট্য গোষ্ঠী ‘শেষ রক্ষা’ এবং ডা. কামালএ খানের প্রযোজনায় মুক্তধারা নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশন করেছিল ‘মুক্তধারা’ নাটক। এই অনুষ্ঠান সেদিন সম্ভব হয়েছিল চট্টগ্রামবাসীর অসম সাহসিকতার কারণে।

সাংস্কৃতিক বিকাশে চট্টগ্রাম : এ দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাস কখনোই চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে পরিপূর্ণতা পাবে না। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের ইতিহাস সমৃদ্ধ। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার গড়ে উঠার মধ্য দিয়ে নাটকের বিকাশ ঘটতে থাকে। বিশেষ করে মঞ্চনাটক ও পথনাটক। এর আগে শহরে বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটি গ্রুপ অনিয়মিতভাবে মাঝে মধ্যে নাটক মঞ্চস্থ করতো মাত্র। চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার গড়ে উঠার পর থেকেই শিল্পকলা একাডেমি ক্যাম্পাস সাংস্কৃতিক কর্মকাের আঁকড়ায় পরিণত হয়। এপর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে বিশটিরও অধিক নাট্যগ্রুপ রয়েছে এবং তারা প্রতি বছরই নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ করছে। প্রতিবছর নাট্যাৎসব হচ্ছে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে। চট্টগ্রাম থেকে অনেক নাট্যগ্রুপ রাজধানী ঢাকা ও কোলকাতায় নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। যে সমস্ত নাট্যগোষ্ঠী অধিকতর সক্রিয় এদের মধ্যে আছে : চট্টগ্রাম থিয়েটার, অরিন্দম, তীর্থক, নান্দীকার, নান্দীমুখ, গণায়ন, মঞ্চমুকুট ইত্যাদি। এ সমস্ত নাট্যগোষ্ঠী চট্টগ্রাম শহরে সৃষ্টি করেছে অনেক নাট্যকর্মী ও দর্শক। জাতীয় ভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক অভিনেতা চট্টগ্রামের এসব নাট্য গোষ্ঠী থেকে উঠে এসেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী চট্টগ্রাম শহরে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, আবৃত্তি সংগঠন ও নৃত্যকলা চর্চা, শিল্পসাহিত্য সংগঠন। সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, চট্টল ইয়ুথ কয়ার, পলগ, ত্রিতরঙ্গ, উদীচী, খেলাঘর, পায়রা, ফুলকুঁড়ি, বন্ধন, অচিরা ইত্যাকার অনেক সংগঠন। আবৃত্তি চর্চার ক্ষেত্রে বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা, অনার্য অন্যস্বর, অঙ্গন নিয়মিত নতুন ধারার আবৃত্তি প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে এবং নিয়মিত আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।

শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, ফুলকি, ললিতকলা একাডেমি, সঙ্গীত পরিষদ, আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমি , আর্যসঙ্গীত, প্রবর্তক সংঘ, সঙ্গীত বিদ্যালয় ইত্যাকার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতিবছর প্রশিক্ষণ নিয়ে বেরিয়ে আসছে অনেক সঙ্গীত শিল্পী ও নৃত্যশিল্পী। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্রছাত্রী জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। চট্টগ্রাম শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকাকে বেগবান করার ক্ষেত্রে ইত্যাকার গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।

একাত্তরের গৌরব উজ্জ্বল স্মৃতিকে ধারণ করে ১৯৯০ সালে ফারুকে আজম বীর প্রতিকএর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরের সার্কিট হাউস ময়দানে (বর্তমান জিয়া শিশু পার্ক) ডিসেম্বর মাসে প্রথম শুরু হয় ঐতিহাসিক বিজয় মেলা। একাত্তরের চেতনায় ইতিহাসে চর্চা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার প্রধান নিয়ামকে পরিণত হয় এই বিজয় মেলা। পরবর্তীতে এই বিজয় মেলা মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চলে যায় আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে। এই বিজয় মেলার শুরু এখান থেকে হলেও এখন সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবছর বিজয়ের মাসে।

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আর এক দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখে দিনব্যাপী নজরুল স্কোয়ারে (ডি.সি.হিল) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশির দশকের দিকে এর আয়োজন ছিল সীমিত মাত্র কয়েকটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ভোরে এসে অনুষ্ঠান শুরু করে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সমাপ্তি টানতো। কিন্তু ইদানিং এর ব্যাপকতা বেড়েছে অনেক গুণ। সময়ের চাহিদাকে সামনে রেখে কয়েক বছর থেকে সি.আর.বিতে পহেলা বৈশাখের নতুন আয়োজন চলছে। ২০১৫ সালে সেখানে একটি স্থায়ী মঞ্চ ও নির্মাণ করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর সেখানে ঐতিহাসিক গ্রাম্যখেলা ‘বলীখেলার’ আয়োজনও করা হয়। এছাড়াও ডি.সি হিলে এখন আরো সংযোজিত হয়েছে রবীন্দ্রনজরুল জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী, হেমন্ত উৎসব, বসন্ত উৎসব।

প্রবহমান চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে ২০০১ সাল থেকে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে চট্টগ্রাম একাডেমির স্বাধীনতার বইমেলা। প্রথম দিকে প্রেস ক্লাব, এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ মাঠ, জেএমসেন হলে অনুষ্ঠিত হলেও কয়েক বছর থেকে বৃহৎ কলেবরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডিসি হিলে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগেও অনুষ্ঠিত হয় বই মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কর্পোরেশনের স্কুলগুলোর কোমল ছাত্রছাত্রীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।

চাটগাঁর সংস্কৃতি কর্মীরা জাতীয় সম্পদ। শেফালি ঘোষ এবং শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবকে বলা হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী । মাইজভান্ডারি গান ও কবিয়াল গান চট্টগ্রামের অ্‌ন্যতম ঐতিহ্য। কবিয়াল রমেশ শীল একজন কিংবদন্তি শিল্পী ।জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস, এল আর বি, রেঁনেসা, নগরবাউল এর জন্ম চট্টগ্রাম থেকেই। আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিত, নাকিব খান, পার্থ বডুয়া, রবি চৌধুরী, সন্দিপন ,নাসিম আলি খান, মিলা চট্টগ্রামের সন্তান । মডেল নোবেল, নায়িকা শাবানা, কবরী, পূর্ণিমার চট্টগ্রামে জন্ম। নৃত্যে চট্টগ্রামের ইতিহাস মনে রখার মত । রুনু বিশ্বাস জাতীয় পর্যায়ে বিখ্যাত নৃত্যগুরু।

সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র শিল্পকলা একাডেমী : চট্টগ্রামে নির্মল শিল্প সংস্কৃতি চর্চার অনন্য প্রাণকেন্দ্র জেলা শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম। শহর চট্টগ্রামের দামপাড়া মোহাম্মদ আলী সড়কস্থ পাহাড়, গাছপালা ঘেরা এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এর অবস্থান। সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি জেলা শহরে শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই জেলা শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম গড়ে তোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিল্পকলা একাডেমি কার্যক্রম জেলা পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি সাংস্কৃতিক কর্মকাে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

মূলত গ্রুপ থিয়েটার চর্চার ও নিরীক্ষাধর্মী নাটক মঞ্চায়নের জন্য শিল্প সাহিত্য পরিষদ, চট্টগ্রামে একটি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে শিল্প সাহিত্য পরিষদের সভাপতি তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাইর পৃষ্ঠপোষকতায় সবুজ বৃক্ষরাজি বেষ্টিত ম্যানোলা পাহাড়ের পাদদেশে একটি অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে সপ্তাহব্যাপী চট্টগ্রাম উৎসব’৭৭ উদযাপন করে। এতে নাটক মঞ্চায়নসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। যার সাফল্য স্থায়ী মঞ্চ নির্মাণে উৎসাহিত করে। এরপর হাসনাত আব্দুল হাই স্থায়ী মঞ্চের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসক জিয়া উদ্দীন এম চৌধুরী এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান আজিজের ওত্ত্বাবধানে মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার কাজ বাস্তবায়িত হয়। এই মিলনায়তন প্রতিষ্ঠায় যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সেই শিল্পসংস্কৃতিসেবিরা হলেন দেবদাস চক্রবর্তী, রশীদ চৌধুরী, এস.এম শফি, জিয়া হায়দার, ডা. কামাল এ খান, ফখরুজ্জামান চৌধুরী, ওবায়দুল হক, মাহবুব হাসান, সুচরিত চৌধুরী, এম.এ মালেক, চৌধুরী জহুরুল হক প্রমুখ। তবে শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম এর যে জায়গা সেটি ১৯৯৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্বয়ংক্রিয় নবায়নযোগ্য লিজ হিসেবে প্রদত্ত। এই মিলনায়তনের মূলমঞ্চের আয়তন চারশত পঞ্চাশ বর্গফুট। আয়তকার প্রসেনিয়াম এই মঞ্চের পাশে নারী ও পুরুষ শিল্পীদের জন্য রয়েছে সাজঘর। সমৃদ্ধ, নিজস্ব আলো ও শব্দ সরঞ্জাম এই মিলনায়তনের আবেদন বৃদ্ধি করেছে।

চট্টগ্রামের নৃত্য, নাট্য, আবৃত্তি ও মূকাভিনয়সহ নানা পরিবেশনা শিল্পের চর্চা ও মহড়া চলে এ ভবনের প্রতিটি কক্ষে । প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের ভীড়ে মুখর ও প্রাণবন্ত থাকে এ ভবনটি। শিল্পকলা একাডেমী অঙ্গনের পূর্ব উত্তর প্রান্তে রয়েছে অসাধারণ শিল্প নৈপুণ্যসমৃদ্ধ প্রশস্ত মুক্তমঞ্চ। এটিও অনিরুদ্ধ বড়ুয়া অনির স্মৃতি স্মারক হিসেবে ‘অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চ’ নামে রাখা হয়েছে। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর আন্তরিক উদ্যোগ এবং কনফিডেন্স সিমেন্ট এর অর্থানুকুল্যে নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান এর উদ্যোগে আধুনিক নির্মাণ শৈলীর অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন সমৃদ্ধ করে এটি পুন:নির্মাণ করা হয়। প্রায় প্রতিদিন নানা সাংস্কৃতিক উৎসব, অনুষ্ঠান এবং মুক্ত নাটক মঞ্চায়নে এই মুক্তমঞ্চ মেতে থাকে, সমৃদ্ধ করে পুরো অঙ্গণকে। শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম এই অঞ্চলের শিল্প, সংস্কৃতি চর্চা, বিকাশ ও সংরক্ষণে যে ভূমিকা রেখে চলেছে তা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয় ও ধন্যবাদার্হ।

চট্টগ্রামের আশা জাগানিয়া থিয়েটার ইনস্টিটিউট : ২০০৪ সালের ৭ অক্টোবর উদ্বোধন হয় আশা জাগানিয়া থিয়েটার কমপ্লেক্সের থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামএর। সবধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অভিনয়োপযোগী মঞ্চ, আর্ট গ্যালারী ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ টিআইসি। বলা যায় নার্ট জন আহমেদ ইকবাল হায়দারের স্বপ্নের প্রতিফলন এটি। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এটি। একদিন তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে জানালেন তার স্বপ্নের কথা। একটা জায়গা যেন সিটি করপোরেশন তাদের দেয়। এই আবদার অনেকদিন ধরেই চলছিলো। একসময় মেয়র মহিাুদ্দিন বললেনজায়গা দিলেইতো হবে না, বিল্ডিংটাও আমার করে দিতে হবে। আহমেদ ইকবাল হায়দার বললেন লাগবে না আমরাই পারবো। উনি বললেনপারবা না, আমি জানি, এটার একটা সাপোর্ট লাগে। যাত্রা ওখান থেকেই শুরু। প্রথমে ছিলো ৮০ জনের একটি ছোট্ট গ্রাউন্ড। পরে সিটি মেয়র এবং নাট্যকমৃীদের আন্তরিক ইচ্ছার বাস্তবায়ন স্বরূপ এটা থিয়েটার কমপ্লেক্স হয়ে দাঁড়ালো। এখানে একটা থিয়েটার আর্ট গ্যালারী আছে, যেখানে প্রদর্শনী হতে পারে আবার ছোটখাট অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। সেমিনার করা যায়, এটাকে নাম দেয়া হয় গ্যালারি। আরেকটি হলো ল্যাবরেটরি থিয়েটার। এটার আসন সংখ্যা ২৫০।

এখানে দুটো ক্লাশরুম আছে, যেখানে মহড়া করা যায় এবং আমরা অন্য কিছু কাজও করতে পারি। এখানে শিক্ষার কিছু কার্যক্রমও রাখা হয়েছে। একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ থিয়েটার কমপ্লেক্স করার জন্য যা যা প্রয়োজন ক্ষুদ্র ক্ষমতার দ্বারা তার সবটুকুই পূরণের চেষ্টা হয়েছে টিআইসিতে।আর তাই এটা এখন সংস্কৃতিকর্মীদের তীর্থস্থান।

চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট হল : চট্টগ্রামের এক সময়কার প্রধান মিলয়নায়তন মুসলিম ইনস্টিটিউট হল। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ১৯২৫ সালে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে মুসলিম ইনস্টিটিউট সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চট্টগ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এটি পরিচালনা করতো। চট্টগ্রামের এক সময়কার শিল্প এবং সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র মুসলিম হলের ওই সময়টাকে স্বর্ণযুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে অবশ্য সে দিন আর নেই। প্রতিষ্ঠানটিকে আবারো চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এনে পরিকল্পিতভাবে একটি কমপ্লেক্সে রূপ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শুরুতে মুসলিম ইনস্টিটিউটের ছোট একটি লাইব্রেরি ছিল। রিডিং রুম ছিল। পরবর্তীতে চট্টগ্রামে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে মুসলিম হলের জায়গায় পাবলিক লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে পাবলিক লাইব্রেরির ভবনসহ অবকাঠামো গড়ে ওঠে।

চট্টগ্রামের সংস্কৃতিসেবীরা বলেছেন, মুসলিম হলের বর্ণাঢ্য ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। নান্দনিকতার ছোঁয়া এখন আর হলে অবশিষ্ট নেই। ১২শ’ মানুষ বসতে পারতেন এক সময়। বর্তমানে তা ৭০০ জনে নেমে এসেছে। তাও অনেকগুলো চেয়ার ভেঙে গেছে। ভালো মানের একটি অনুষ্ঠান করার মতো অবস্থা এখন আর মুসলিম হলে নেই। চারদিকে শুধু নেই নেই অবস্থার মাঝে আছে সংস্কৃতি কর্মীদের হাহাকার এবং হতাশা। গত বছরের শেষদিকে কিছু সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

চেরাগীর আড্ডা : চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারক প্রথম সুফি সাধক হিসাবে পরিচিত বদর শাহ পীর। প্রচলিত আছে, বদর শাহ পীর প্রথম চেরাগ জ্বালিয়ে দৈত্যদানোয় ভরা এই শহর থেকে দূর করেছিলেন অশুভ আত্মা। আর যে পাহাড়ের ওপর তিনি চেরাগ জ্বালিয়ে ছিলেন, পরবর্তিতে তার নামকরণ করা হয়েছিল চেরাগী পাহাড়। চেরাগী পাহাড় চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বদর পীরের স্মৃতি জড়িত জায়গাটিতে একটি স্মারক গড়ে তোলা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ স্মারক আজো ইতিহাসকে সামনে নিয়ে আসে। দীর্ঘদিন থেকে অবহেলায় থাকা এ স্মৃতি স্মারক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। একই সাথে চেরাগী এখন মিল্প সংস্কৃতি সাংবাদিক সুধীজনদের পরম কাঙ্ক্ষিত আড্ডাস্থল। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ও সৃজনশীল চর্চার চারণ ক্ষেত্র হিসেবে ইতোমধ্যে চেরাগি পাহাড় চত্বর পরিচিতি লাভ করেছে।নানা গল্প, কিংবদন্তি আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে চেরাগী। বদর পীরের সাধনা স্থল সংরক্ষণে তৎকালিন সময় থেকে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। মীর নাছির উদ্দিন মেয়র থাকা কালে চেরাগী প্রত্নচিহ্নটি আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গড়ে তোলা হয় দৃষ্টি নন্দন স্মারক। চেরাগীকে দৃষ্টি নন্দন করতে চৌঙ্গার মধ্যে লাগানো হয়েছে ঘড়ি। চেরাগীর চেরাগের দেখা এতোদিন দেখা না মিললেও এবার সেটারও দেখা মিলেছে। স্মারকের উপরে বাসানো হয়েছে ইলেকট্রিক মশাল।

ডিসি হিলের উত্তর পাশে মোমিন রোড এবং জামাল খান রোডের সংযোগ স্থলে চেরাগী পাহাড়ের অবস্থান। এলাকাটি বর্তমানে চেরাগী মোড় নামেই পরিচিত। সময়ের সাথে নানা বয়সের জ্ঞানমনষ্ক মানুষের আনাগোনায় নিত্য সরগরম হয়ে ওঠে এই চেরাগী পাহাড় চত্বর। এখানে কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যজন, শিল্পী, গায়ক, সৃজনশীল বইপত্রের পাঠক, সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিককর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আনাগোনা ও আড্ডায় মুখরিত হয়ে থাকে পুরো এলাকার পরিবেশটি।

চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ : সেই ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত জে.এম.সেন হল ব্রিটিশীয় প্রাচীনত্ব নিয়ে এখনো টিকে আছে। এছাড়া স্টুডিও থিয়েটার, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, আঁলিয়স ফ্রঁসেজ, ইসলামাবাদী মেমোরিয়াল হল অন্যতম। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা কাজ করছে। একটি উপযুক্ত মিলনায়তনের অভাবে স্বাধীনতাত্তোর চট্টগ্রামের গ্রুপ থিয়েটার চর্চার সূত্রপাত হয়েছিল চেরাগি পাহাড় সংলগ্ন আমেরিকান সেন্টারের (বর্তমানে যেখানে সেন্টার পয়েন্ট হাসপাতাল দাঁড়িয়ে) ছোট মিলনায়তন, সেন্ট মেরিজ ও সেন্ট প্লাসিডস স্কুল মিলনায়তনে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, সংস্কৃতি বান্ধব সরকারও বটে। স্বাধীনতার এতো বছর পর প্রথমবারের মতো বর্তমান সরকারই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে উৎসাহিত করতে শত শত কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তাই সংস্কৃতিকর্মীদের প্রত্যাশা সরকারের সদিচ্ছায় চট্টগ্রামে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে উঠবেই। নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি সংস্কৃতি মন্ত্রী থাকাবস্থায় চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিবেচনা করে চট্টগ্রামে একটা পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই কাজ বর্তমানে চলমান।

সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে একটি বড় অডিটোরিয়াম, একটি ছোট অডিটোরিয়াম থাকছে, সেমিনার রুম, গ্যালারি, কফি কর্ণার এগুলো থাকছে। রাস্তাটা যেমন আছে তেমনই থাকবে। ওপরের রাস্তা শহীদ মিনার পর্যন্ত যাবে। ওপর দিয়ে মানুষ হাঁটাচলার একটি রাস্তা যাবে। মানুষজন ওপরের রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করবে। এখানে শহীদ মিনার একটু স’ানান্তরিত হতে পারে।

জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ও সর্বস্তরের ‘সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তোলার। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামের সাবেক ও বর্তমান মেয়র এবং সরকারি নেতারা তাদের বক্তব্যে শহীদ মিনার, মুসলিম হল ও থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম এলাকায় সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে ওঠার প্রস্তাব সম্পর্কে উল্লেখ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দাবি আরো জোরালো হয়ে ওঠে। পাশাপাশি একটি খসড়া নকশাসহ জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে শহীদ মিনারকে ঘিরে শহীদস্মৃতি জাদুঘর, ভাষা শহীদদের আবক্ষমূর্তি নির্মাণ, স্থায়ী মুক্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ নির্মাণ, অডিটরিয়াম, লাইব্রেরি, গ্যালারি, কনফারেন্স রুম নির্মাণসহ আরো অনেক স্থাপনা প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। কিন্তু এরপর ৪৬টি বছর অতিবাহিত হলেও এসব দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে বর্তমান সরকার সেটি নির্মাণ করছে।

লেখক : সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সিনেমা হল ও সিনেমার সেকাল-একাল
পরবর্তী নিবন্ধপেরুতে বাস খাদে, নিহত ২৪