চট্টগ্রামবাসীকে ভালোবেসে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করেছি

সিআরবিতে বর্ষবরণ উৎসবে সংবর্ধনায় আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী আয়োজনের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে বাংলা বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে চট্টগ্রামবাসী। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বর্ষবরণসহ সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকার পর এবার নগরীর সিআরবি শিরীষতলায় পহেলা বৈশাখের আয়োজনকে ঘিরে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলা বসে। এবার নির্বিঘ্ন বর্ষবরণ উৎসবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণের স্পন্দন। বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখ সকাল থেকে নানা বয়সের লোকজন লাল-সাদা শাড়ি, পাঞ্জাবি পড়ে বর্ষবরণ উৎসবে আসেন। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে চট্টগ্রামে বর্ষবরণের কোনও অনুষ্ঠান হয়নি। তাই এবার বর্ষবরণের আয়োজনে সবার ছিল স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি, যেন জড়তা কাটিয়ে জেগে ওঠার চেষ্টা। সকাল সাড়ে আটটায় বেহালার সুরে সুরে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান। সুরের মূর্ছনায় জেগে উঠে প্রাণ। ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের শিল্পীরা সমবেতভাবে বেহালার মূর্ছনায় রাঙিয়ে দেন নববর্ষের সকালটা। ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুরে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ আবাহন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল-সিআরবি শিরীষতলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠান।
বেলা সাড়ে ১২টায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সংবর্ধনা সভায় সংবর্ধিত অতিথি একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের হাতে সিআরবি শিরীষতলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয় এবং পরিয়ে দেয়া হয় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার স্মারক ‘উত্তরীয় ও শাল’।
সংবর্ধনার জবাবে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক এম এ মালেক বলেন, ‘আমি যা কিছু করেছি সেগুলো আমি আমার নিজের দায়িত্ববোধ থেকে করেছি। চট্টগ্রামবাসীকে ভালোবেসে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করেছি। কোনো পদকের আশায় আমি কোনো কিছু করিনি। আমার বাবা আমাকে একটি কাগজ দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি চেষ্টা করেছি সেই কাগজটাকে চট্টগ্রামবাসীর প্রিয় পত্রিকা হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য।
আমার বাবা চট্টগ্রামের সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য এ কাগজ বের করেছিলেন। তাই আজাদীর মাধ্যমে চট্টগ্রামের সুখ-দুঃখের কথাগুলো জনগণের কাছ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নানান ঘাত প্রতিঘাত এবং বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সেদিনের দৈনিক আজাদী তিল তিল করে গড়ে উঠেছে। দৈনিক আজাদী পরিণত হয় চট্টগ্রামের মানুষের অদ্বিতীয় মুখপত্র হিসেবে। এখনো চট্টগ্রামের কল্যাণে দৈনিক আজাদী সব সময় সোচ্চার ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেটা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তাই আজাদী নিজ গুণে, নিজের জায়গা করে নিয়েছে চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে। আজকে আমি যে পদকটা পেলাম সেই পদকটাও আমি চট্টগ্রামবাসীর জন্য উৎসর্গ করেছি। যতদিন বেঁচে থাকবো-এই প্রিয় চট্টগ্রামের উন্নয়ন এবং চট্টগ্রামের প্রিয় মানুষদের কল্যাণে কাজ করে যাবো।’
সিআরবিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আমি গত ১৪ বছর ধরে সিআরবিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় আমরা সিআরবির শিরীষতলার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করে যাবো। বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত রূপ ফুটে ওঠে বাংলা নববর্ষের দিন। বাংলা নববর্ষ বাঙালির সমগ্র সত্তা, অস্তিত্ব ও অনুভবের সঙ্গে মিশে আছে। এটা বাঙালি সংস্কৃতির উজ্জ্বল দিক। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আমাদের প্রাণের অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। এ জাতি তার দেশকে ভালোবাসে, ভালোবাসে তার সংস্কৃতিকে। অসামপ্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে নববর্ষ বরণ বাঙালি জাতিসত্তাকে উজ্জ্বল করে। সবকিছুর বিনিময়ে হলেও এ জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে, রক্ষা করবে প্রাণের চেয়ে প্রিয় এ ভাষা, হাজার বছরের সংস্কৃতি।
সিআরবির এমন নির্মল পরিবেশ অটুট রাখার আহ্বান জানিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক এম এ মালেক বলেন, সিআরবির মতো এতো সুন্দর একটি পরিবেশে আমরা কোনো হাসপাতাল চাই না। আমরা আমাদের এই নির্মল পরিবেশটাকে ধরে রাখতে চাই। চট্টগ্রাম শহরে অনেক জায়গা আছে। কেন আমরা এখানে হাসপাতাল করে পরিবেশটাকে নষ্ট করবো। আমরা গতকাল এখানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেছিলাম। যে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেছিলাম-সেই বেলুন পর্যন্ত এই প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ ছেড়ে যেত চায়নি। সে এই প্রকৃতির মধ্যেই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। এই সুন্দর পরিবেশ সে ছাড়তে চায় না। তাই আমরাও চাই এই পরিবেশ-এখানে যেভাবে আছে-সেই ভাবে থাকুক। এই পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়। আমরা বলি-এটা চট্টগ্রামের ফুসফুস। সুতরাং ফুসফুসকে রক্ষা করতে হবে। আমরা চাই প্রাকৃতিক এমন নির্মল পরিবেশে যেন প্রতি বছর অনুষ্ঠান করতে পারি।
এ সময় সিআরবি শিরীষতলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ এবং বিশিষ্ট প্রবন্ধিক ও কবি কামরুল হাসান বাদল। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, ব্যবসায়ী ও সাংকৃতিক সংগঠক হাজী সাহাব উদ্দিন, উদিচির ডা. চন্দন দাশ, নাট্যজন শেখ শওকত ইকবাল, সংস্কৃতিজন স্বপন মজুমদার, হাসান মারুফ রুমি প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন কমছে কেন
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা