গুমাইবিলে সবুজের সমারোহ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১১ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল। এই বিলে এবার সাড়ে ৮ হাজার কৃষক বোরো আবাদ করেছেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে লাগানো চারাগুলো এখন পরিপুষ্ট। এতে বিলজুড়ে এখন সবুজ আকার ধারণ করেছে। ফাল্গুনী হাওয়ায় সবুজ চারার নৃত্য গুমাই বিলের কৃষকের বুকে ভাল ফলনের আশা জাগিয়ে তুলেছে।

জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার একাংশজুড়ে তিন হাজার পাঁচশত হেক্টরের বিশাল এ মাঠের অবস্থান। বিস্তৃত ঊর্বর দুই ফসলি এই জমি থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়। প্রচলিত আছেদেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদন হয় এই বিলে। দেশের বৃহত্তম চলন বিলের পর অন্যতম বৃহত্তম চট্টগ্রামের এই শস্য ভান্ডারের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর থেকে উৎপাদিত ধানের বাম্পার ফলন গেল মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে খাদ্য উৎপাদন করে প্রতি বছর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এই বিলটি। ১৯৪৫ সালে রাঙ্গুনিয়ার কৃতী পুরুষ মরহুম আব্দুল বারী তালুকদার অক্লান্ত পরিশ্রম করে গুমাই বিল সংস্কার করে প্রথমবারের মতো আধুনিক চাষাবাদ শুরু করেন। গুমাই ঝিল থেকে বিলে পরিণত করার প্রবল কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। ১৯৮০৮১ সাল থেকে গুমাই বিলের জমি শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতায় আনা হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার গুমাই বিলসহ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩ শত ৬০ হেক্টর। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গেল আমন মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ার ১৫ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। যেখানে ধানে হেক্টর প্রতি ৫.৭ মেট্রিক টন এবং চাউলে ৩.৭ মেট্টিক টন উৎপাদিত হয়েছে। বাজারে ধান ও চালের ভাল দাম পাওয়াতে এবার বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আবাদ হয়েছে বলে জানা যায়। একইভাবে গুমাইবিলে প্রতিবছর বোরো মৌসুমে দেড় হাজার হেক্টর আবাদ হলেও এবার আবাদ বেড়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। গুমাইবিল পানি ব্যবস্থাপনা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, এখনো পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে পানি সরবরাহেও সমস্যা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পানি সেচের ফলে এবার বোরো ফলন ভালো হবে।

গুমাই বিলের কৃষক মো. মোকাররম বলেন, এ বছর ১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এরমধ্যে সাড়ে ৬ হেক্টর জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে হাইব্রিড ধান এবং বাকীগুলো উপশী জাতের চাষাবাদ করেছি। জমিতে সার থেকে শুরু করে কীটনাশক সবকিছুই ব্যবহার করেছি তাদের পরামর্শে। তাই এবার ভালো ফলনের আশা করছি। গুমাইবিলে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আমন আবাদ শুরু হয়েছিল। জানুয়ারির দিকে এসে তা পরিপূর্ণ হয়। বর্তমানে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আগামী মে মাস থেকে ফলন আসবে বলে আশাকরি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গুমাই বিলে বোরো আবাদ ভালো হয়েছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ হচ্ছে। কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ে তদারকি, সময়মত কীটনাশক প্রয়োগ ও কীট দমনে প্রাকৃতিক পদ্ধতির ব্যবহার, কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম সর্বোপরি আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার বোরোর ফলন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হবে। কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, গুমাই বিল দেশে আড়াই দিনের খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। বোরো চাষাবাদ এবার ভালো হয়েছে। কৃষকদের যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য তাদের প্রয়োজনীয় সহয়তা দেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম পাথরবিহীন রেলপথ, কাজ শেষ এক সপ্তাহের মধ্যে
পরবর্তী নিবন্ধবৈরিতা ভুলে এক হচ্ছে ইরান-সৌদি