গীতিকার ও সুরকার সৈয়দ মহিউদ্দিন আর নেই

৪০ বছর পর নিজ গ্রামে এল মরদেহ

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

অজেডা ফইরার বাপ’, ‘মন কাচারা মাঝি তোর সাম্পানত উইটতাম নঅ’, ‘গর্কি তুয়ান বন্যা খরা মহামারি ঘূর্ণিঝড়’ প্রভৃতি গানের গীতিকার ও সুরকার সৈয়দ মহিউদ্দিন প্রকাশ মহি আল ভাণ্ডারী আর নেই। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহিরাজিউন)। তাঁর নামাজে জানাজা বাদ জোহর কাতালগঞ্জ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ২টায় নেওয়া হয় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সৈয়দ মহিউদ্দিন। ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিসি হিলে এক অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেদিন তিনি ক্রেস্ট ও সনদ নিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে বাম হাত ও বাম পা ভেঙে ফেলেন। কাতালগঞ্জে আনিকা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন ভাড়া করা একটি সেমিপাকা গৃহে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। তিনি বিয়ে করেননি।

সৈয়দ মহিউদ্দিন ১৯৪৪ সালে ফটিকছড়ির সুয়াবিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আমির হোসেন এবং মাতা সৈয়দা আনোয়ারা বেগম। সহস্রাধিক মাইজভাণ্ডারী, আঞ্চলিক, আধুনিক ও রাগসংগীতের রচয়িতা তিনি। গানের মাধ্যমে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতেন। গ্রামে বসবাসকালীন অধ্যক্ষ হেম মজুমদারের কাছে সংগীত চর্চা শুরু করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কুমিল্লায় ওস্তাদ সুরেন দাশের কাছে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত তালিম নেন। দেশ হানাদার মুক্ত হলে গান রচনা ও সুর চর্চায় মনোনিবেশ করেন। আাশির দশকে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গীতিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। আধুনিক গান রচনার পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভাণ্ডারী গান রচনায় হাত দেন।

তিনি ১৯৭৮ সালে দৈনিক আমার বাংলা পত্রিকায় কাজ করার জন্য ঢাকায় চলে যান। সেখানে ১ বছর কাজ করেন। এরপর ঢাকায় দেশের প্রথম সংগীত পত্রিকা মাসিক সংগীতের সাথে জড়িত হন। পত্রিকাটির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ৩ বছর।

তাঁর রচিত ও সুরারোপিত জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য চাটগাঁইয়া গান হলো : মেজ্যান দিয়ে মেজ্যান দিয়ে ঐতারত, সাম্পান মাঝি সাম্পান বায় আগর মতো পেসিঞ্জার ন পায়, অউডা কঅছে ভাইপুত ক্যেনে বলে ম্যাট্টিক পাশ গল্লি, আঁরা এই সংসারত মিলিমিশি আছি দুয়া জাল, তালাকনামা পাঠাই দিলাম চিঠির ভিতরে, আইচ কাইল ঢেঁইর ঘরত কম দেখা যায় ধান, আঁই কারে কইলাম কি তুঁই কি হুনিলা কি, আঁর বউয়রে আঁই হাসাইয়ম আঁই কাঁদাইয়ম, আঁর বাপর বাড়ি কধুরখীল হউরু বাড়ি গুজারা, আসকার ডিঁইর পুকপাড়ে আঁর ভাঙাচোরা ঘর, আহ্‌ হায় রে গরু টানের গরু গাড়ি, এই পোয়াছা আঁর বরই গাছত তোরা, কিল্লাই গেলি ঠিক ধুইজ্জ্যা ভাঙিবুল্যাই বোলার বাআ, তুঁই বন্ধু আঁর সুখ পিঞ্জরার ভাগ্যুর লটারি, থগ্যই থগ্যই রে তে আইস্যেল ভালা, পোয়ার মনত শান্তি নাই শান্তি নাই ভাত পানি ন খার, বউ আইনতু যার দুলা মিঞা গদুনাত চড়ি, বন্ধু ঘরর কামরা পুরাই দিলা চালানি পাঠাই প্রভৃতি।

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, সৈয়দ মহিউদ্দিনের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা গতকাল বাদ এশা ফটিকছড়ির পূর্ব সুয়াবিল হযরত সৈয়দ আবদুল সোবহান শাহ (রা.) শাহী জামে মসজিদ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে মাবাবার পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। সুয়াবিল গ্রামের স্থানীয় মো. সোহেল বলেন, সৈয়দ মহিউদ্দিন ৪০ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এত বছর পর তার মৃতদেহ এল বাড়িতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামী বাজেটে অর্থনৈতিক ভারসাম্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে সরকার
পরবর্তী নিবন্ধপিএইচপি কুরআনের আলো প্রতিযোগিতায় সেরাদের সেরা হাফেজ জিসান