খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে ব্যবসায়ীদের বড় ছাড়

| মঙ্গলবার , ১৯ জুলাই, ২০২২ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে ব্যবসায়ীদের বড় ছাড় দিয়ে নতুন নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যাতে পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো ও নগদ এককালীন জমা দেওয়ার হার কমিয়ে ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পুনঃতফসিলের এ নীতিমালা এমন সময় করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন উচ্চহারের খেলাপি ঋণসহ আর্থিক খাতের সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সফর করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল। দলটি রবি ও সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আজ মঙ্গলবার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠন’ সংক্রান্ত এ ‘মাস্টার সার্কুলার’ জারি করে সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে। নতুন এ নীতিমালায় ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ সময়সীমা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম নগদ ডাউনপেমেন্টের (এককালীন জমা) হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মাকসুদা বেগম স্বাক্ষরিত সার্কুলারে বলা হয়েছে। নীতিমালায় নতুন করে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কোভিড মহামারীর প্রভাব ও যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সার্কুলারে। এর আগে মহামারীকালে সময়ে সময়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধ ও খেলাপি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আব্দুর রউফ তালুকদার নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পুনঃতফসিলিকরণের নীতিমালায় খেলাপিদের ঋণ নিয়মিত করতে বড় ধরনের সুবিধা দেওয়া হল।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব, বহিঃবিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নতুনভাবে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হলো।

নতুন নীতিমালায় তিনবারের পরিবর্তে চারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, খেলাপি ঋণ আদায়ের স্বার্থে বিশেষ বিবেচনায় চতুর্থবার পুনঃতফসিল করা যাবে। এক্ষেত্রে পুনঃতফসিলের আগে ব্যাংকারদের গ্রাহকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, আর্থিক সক্ষমতা ও অনিচ্ছাকৃত কিনা তা দেখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের বিষয়টি ছিল ঐচ্ছিক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঋণ পুনঃতফসিল করতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহক সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, যাতে গ্রাহক সম্পর্কে ব্যাংক পরিপূর্ণ ধারণা পেতে পারে। নতুন নীতিমালটি আরও বিস্তারিতভাবে ‘ইউনিফর্ম ফরম্যাটে’ করা হল, যাতে ব্যাংকগুলো সবাই ঋণ পুনঃতফসিলে একই ধারা অনুসরণ করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এ নীতিমালা ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠনের ন্যূনতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করবে, যা তাদের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করবে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও নীতিমালায় অনুৎপাদনশীল খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা উৎপাদনশীল খাতের অলাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির ৯ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম স্টেশনে প্রবেশে বাধা
পরবর্তী নিবন্ধ৪১৭ হাজী নিয়ে চট্টগ্রামের প্রথম হজ ফ্লাইট আসছে কাল