খাগড়াছড়ির ৫৮ বন রক্ষা করছে পাড়াবাসী

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২১ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব বন দিবস। বিগত কয়েক দশকে ব্যাপক হারে বন উজাড়ের ফলে বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবনজীবিকা হুমকিতে পড়েছে। জীবিকা, পুনর্বাসন, বাণিজ্যিক বনায়ন, পর্যটন, অবকাঠামো নির্মাণ, অবৈধ দখল, পরিকল্পনার অভাবসহ ইত্যাদি কারণে পাহাড়ে বন উজাড় হচ্ছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বন উজাড় ও ধ্বংসের বিপরীতে সুখবর দিচ্ছে পাড়াবন সংরক্ষণ কর্মসূচি। খাগড়াছড়ির ৭ উপজেলায় ৫৮টি পাড়াবন রক্ষায় কাজ করছে পাহাড়ি জনপদের বাসিন্দারা। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি দেশের বনাঞ্চলের প্রায় ৪৩% এবং দেশের ২৭ লাখ ১৭ হাজার ১৩১ একর সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ বন) মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ১০১ একর। পার্বত্য চট্টগ্রাম বন রক্ষায় ২০২০ সালে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস ওয়াটার শেড কোম্যানেজমেন্ট এ্যাক্টিভিটি (সিএইচটিডব্লিউসিএ) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপির বাস্তবায়নাধীন এসআইডিসিএইচটি প্রকল্পের আওতায় ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) বা গ্রামীণ সাধারণ বন বা পাড়াবন রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ১১টি, দীঘিনালায় ১৮টি, পানছড়িতে ৭টি, মহালছড়িতে ৯টি, লক্ষীছড়িতে ৮টি, মাটিরাঙায় ২টি এবং গুইমারায় ৩টি ভিসিএফসহ ৫৮টি পাড়াবন সংরক্ষণ করছে পাড়াবাসী। প্রতিটি পাড়া বন শত প্রজাতির উদ্ভিদ, লতাগুল্ম, ঝিরিঝরনা, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বন্যপ্রাণী ও প্রাণপ্রকৃতির প্রাচুর্যতায় ভরা।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ির কায়াংঘাট ইউনিয়ন পরিষদের উল্টাছড়ি বিহার পাড়ার ৮০টি পরিবার ১৯৬৫ সালে থেকে বনের রক্ষাবেক্ষণ করছে। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে পাড়ার মানুষের ভালোবাসায় প্রায় ২০০ একরের বনজুড়ে বেড়ে উঠেছে নানা প্রজাতির চিরহরিৎ বৃক্ষ। বনে গর্জন, গামার, সিভিট, লম্বু, তেলসুর, চাপালিশ, বন জলপাই, উড়ি আম, খুদে জাম, হরতকি, বহেরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ দেখা গেছে। এছাড়া মায়া হরিণ, বন মোরগ, শুকর, ময়না, টিয়াসহ নানা প্রজাতির পাখিও দেখা যায়।

উল্টাছড়ি ভিসিএফ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ চন্দ্রা চাকমা বলেন, আমাদের গ্রামে আগে ৬৪টি পরিবার ছিল। এখন প্রায় ৮০ পরিবার। বাসিন্দাদের বয়স অনুযায়ী আমরা ২টি কমিটি করেছি। পাড়ার বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি এবং তুলনামূলক কম বয়সীদের নিয়ে একটা কমিটি গঠন করি। কমিটির মাধ্যমে আমরা বনের রক্ষণাবেক্ষণ করি। বনের কাঠ বা বাঁশ কেউ যাতে কাটতে না পারে সেজন্য কমিটি কাজ করে। বন থেকে গাছবাঁশ কাটলে বা ঝিরি থেকে কাঁকড়া, মাছ ধরলেও অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। বড় গাছ, বাঁশ থাকায় তা পানির উৎস হিসেবে কাজ করছে। পাহাড়ি ঝিরিতে সারা বছরই পানি থাকায় স্থানীয়রা চাষাবাদ করতে পারছে। কমিটির সভাপতি অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, ১৯৬৫ সাল থেকে আমরা বনটি রক্ষা করছি। বনের বিভিন্ন ধরনের গাছপালা আছে, বাঁশ আছে। বানর, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীও আছে। এখান থেকে কেউ গাছ কাটতে পারে না। তিন বছর পর পর ভিসিএফ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে বাঁশ কাটা হয়।

সিএইচটিডব্লিউসিএ’র জেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ফরায়েজী বলেন, আমাদের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছেবন বাঁচলে, থাকবে পানি। প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়িতে আমার ৫৮টি বন সংরক্ষণ করেছি। আমরা পাড়াবাসীর সাথে সভা করি, ওদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে পাড়াবন সংরক্ষণ করি। বন সংরক্ষণের জন্য পাড়াবাসীকে আমরা এককালীন আর্থিক সার্পোটও দিই।

সিএইচটিডব্লিউসিএ’র ফোকাল পার্সন ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) টিটন খীসা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাড়াবনের গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই গুরত্ব আরো বেড়েছে। এখানে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয়। তবে পাড়াবন সৃষ্টি হওয়ার কারণে ছড়া, ঝিরি, ঝরনাসহ পানির উৎসসমূহে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হয়েছে। এখন পাহাড়ের লাগায়ো জমিগুলোতে পানির প্রবাহ সৃষ্টি হওয়ায় চাষাবাদ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় ভিসিএফ সংরক্ষণ খুবই কার্যকরী একটি উদ্যোগ। দুই কোটি ৬৪ লাখ ২৯ হাজার ১৭৪ টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের ৩১ জুলাই শেষ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় ভবনের ছাদে মোবাইল টাওয়ারে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিনিয়ত আমাদের সেবার মান বাড়াতে হবে