কেন এই অযত্ন, অবহেলা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে। সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নানা উদ্যোগ নিয়েছিল। তৈরি করেছিল ওয়াকওয়ে, পুলিশের বাগান, নান্দনিক লাইট পোস্টসহ নানা কিছু। কিন্তু মাত্র বছর দুয়েকের মধ্যে সবই প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। ফুলের বাগান ও গাছ কেটে তৈরি করা হয়েছে দোকান। যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে দোকান তৈরির পাশাপাশি নাগরদোলা থেকে শুরু করে স্ট্রিট ফুডের নানা সরঞ্জামের দখলে পতেঙ্গা সৈকত। বাঁধ রক্ষার পাশাপাশি দর্শনার্থীদের বসার জন্য তৈরি করা অপরূপ ‘ঝিকঝাক ব্লক’ অযত্নের কারণে ঘাসের দখলে চলে যাচ্ছে। অযত্ন আর অবহেলায় এটা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। সৈকতকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সূত্রে জানা যায়, পতেঙ্গা সৈকতকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় এই সৈকত এলাকার জন্য কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করা হয়। এতে সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি চমৎকার করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের পাশে দর্শনার্থীদের বসার জায়গার পাশাপাশি ওয়াকওয়ে গড়ে তোলা হয়। প্রায় ৬ কিলোমিটার সৈকত এলাকা নিয়ে কাজ করা হয়।
সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পর চিরচেনা পতেঙ্গা সৈকত পাল্টে যায়। এটি নগরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। কিন্তু সৈকতের নান্দনিকতা রক্ষা করতে সিডিএকে হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য লোকবল নিয়োগ কঠিন হয়ে ওঠে। সৈকতের দায়িত্ব নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করে সিডিএ। কিন্তু নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি খাতে দেয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে সিডিএ। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এক কিলোমিটার অংশের অপারেটর পুরো সৈকতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। তারা পুরো সৈকতে আলোর ব্যবস্থা করবে, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করবে, পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশরুম ও চেঞ্জিং রুম তৈরি করবে। তবে এক কিলোমিটারের বেশি এলাকা তারা সংরক্ষণ করতে পারবে না। বাকি অংশের ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থও দাবি করতে পারবে না। কিন্তু এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই সিডিএর এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে। এতে করে সিডিএ উক্ত প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে।
সিডিএ বিদ্যুৎ বিল ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে না পারায় সৈকত এলাকা অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে। সাগরপাড়ে যে বাগানগুলো তৈরি করেছিল সবগুলো দখল করে দোকান নির্মাণ করে একটি চক্র। সিডিএ যেসব গাছ লাগিয়েছিল তাও রাতারাতি কেটে ফেলা হয়। দখলে, দূষণে পুরো এলাকা আবর্জনা ভাগাড় হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে সৈকতে গিয়ে ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি দেখা গেছে। বেশ কিছু দোকান উচ্ছেদ করা হলেও দখল থেকে নিস্তার মিলছে না। নান্দনিক সৈকত এলাকা এখন শ্রীহীন।
এ বিষয়ে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় একটি পরিকল্পিত বিচ এবং পর্যটন স্পট করার জন্য প্রচুর কাজ করেছি। সাগর থেকে বিপুল পরিমাণ ভূমি রিক্লেইম করেছি। সিডিএ নির্মিত ছয় কিলোমিটার বিচের মধ্যে এক কিলোমিটারের কিছু বেশি অংশের একটি এলাকা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা বাস্তবায়ন করতে পারছি না।
তিনি বলেন, টানেল ও পতেঙ্গা এলাকার ইন্টারসেকশনের রাস্তাগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ জায়গা চলে যাচ্ছে। তাই বিচের কোনো এলাকা ঘিরে ফেলার সুযোগ থাকবে না। তবে আমরা বিচ ম্যানেজমেন্টের জন্য বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ করতে পারি, যারা পুরো বিচ নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে কোনো এলাকা ঘিরে টিকেট সিস্টেম চালু করতে পারবে না। তারা নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইড বসিয়ে দর্শনার্থীদের কাছে টিকেট বিক্রি করতে পারবে। পর্যটকদের যাদের ইচ্ছে তারা রাইডে চড়বেন, যাদের ইচ্ছে হবে না তারা চড়বেন না। সাগরপাড়ে বেড়াতে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। রাইড স্থাপনের ব্যাপারটি সিডিএ থেকে পরিকল্পিতভাবে করা হবে। ইচ্ছে করলে যেখানে সেখানে রাইড, দোকান করা যাবে না। তারা যাত্রীদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলবে এবং বিচের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করবে। পতেঙ্গা বিচের ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ না নিলে এটির সৌন্দর্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘিরে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পতেঙ্গা সৈকত চট্টগ্রামের অনেক বড় সম্পদ। এর পর্যটনমূল্য অনেক। এই সম্পদ অনাদরে নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আহত ১০
পরবর্তী নিবন্ধ৬ অপহরণকারীকে আটকের পর গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ