কীভাবে তাঁরা হয়ে উঠলেন ব্যান্ড তারকা

শাহরিয়ার আদনান শান্তনু | সোমবার , ১৩ মার্চ, ২০২৩ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

১৯৭২/৭৩ সাল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি পাড়। একটি পেট্রল পাম্পের সামনে দুই কিশোর লাইনে দাঁড়িয়েছে।

উদ্দেশ্য কেরোসিন তেল সংগ্রহ। সেই সময়ে এভাবেই জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতে হতো।

তাদের বয়স প্রায় পিঠাপিঠি। একজনের ১২/১৩ বছর। আরেকজনের ১৫/১৬ বছর হবে। প্রথম জনের নাম দিলাম ‘ত’। দ্বিতীয় জনের নাম দিলাম ‘র’। লাইনে দাঁড়িয়ে কেরোসিনের জন্য অপেক্ষা। পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি বাসকালুরঘাটে যাবার বাস। ঐ সময়ে লালদীঘি পাড় হতে বাস ছাড়তো। যাক, লম্বা লাইন। তেল দিতে দেরি হচ্ছে।

এই বিরক্তিকর অবস্থায় ‘ত’ গান গাইতে শুরু করলো। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। আর লাইনে দাঁড়ানো আরেক কিশোর ‘র’ কালুরঘাটের বাসের গায়ে তাল দিতে থাকলো। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে। পরে, ‘র’ বললো ‘ত’কে, ‘তুমি তো বেশ সুন্দর গান করো। বিকেলে এসো ডিসি হিলে। বাংলাদেশ নার্সারির সামনে আমরা কয়েকজন বন্ধু আড্ডা দিই। গান করি। তুমিও এসো।’

বিকেলে ‘ত’ চলে আসে ডিসি হিল চত্বরে। কথামতো ‘র’ও অন্য বন্ধুদের নিয়ে উপস্থিত। ‘ত’ একের পর এক গান গেয়ে শোনাল। মুগ্ধ হয়ে শুনলো সবাই। এবার ‘র’ প্রস্তাব দিলো ‘ত’কে, ‘এসো, আমরা একসাথে গান করি। একটা গানের দল করি।’ আর এভাবেই শুরু হলো কিশোর দলের যাত্রা। গঠিত হলো একে একে সুরেলা, সৈকতচারী, সোলস।

এবার বলি, সেই দিনের কিশোর ‘ত’ হলেন আজকের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী তপন চৌধুরী। আর ‘র’ হলেন সুব্রত বড়ুয়া রনি, যিনি ড্রামার, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও চারুশিল্পী। দুইজনেই সোলসএর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।

১৯৭২/৭৩ সালের সেই দুই তরুণের একসাথে সংগীতের সুরযাত্রাসমৃদ্ধ করেছে আমাদের সংগীত ভুবনকে। আর ঐ সময়ের সেই দলের অন্যরা হলেন সাজেদ উল আলম, মমতাজুল হক লুলু। ইতিমধ্যে সাজেদ উল আলমের উদ্যোগে ‘সুরেলা’ গড়ে ওঠে। সাথে ছিলেন মমতাজুল হক লুলু, সুব্রত বড়ুয়া রনি। এদের সাথে যুক্ত হলেন তপন চৌধুরী। এভাবেই চারজনের দীর্ঘ সংগীতের ভুবনে পথ চলা। মূলত: এঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ভূমিকায় গড়ে ওঠে সংগীতের দল সৈকতচারী, সোলস। সেই ‘সোলস’ বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করছে।

সোলসএর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে রনিদা ড্রামার ও তপনদা মূল গায়ক হিসেবে সংগীত জীবন শুরু করেন এভাবেই।

এরমধ্যে রনিদা ২০২১ সালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। বড় হৃদয় বিদারক ঘটনা। তপনদা বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। এখনো গানের সাথে যুক্ত আছেন।

পুনশ্চ:

শ্রদ্ধেয় তপন চৌধুরীর সাথে স্মৃতি রোমন্থন অবলম্বনে লেখাটি লিখেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশেদ রউফ – এর অন্ত্যমিল
পরবর্তী নিবন্ধসিটি অফ লন্ডন