কিয়েভ দখলের দ্বারপ্রান্তে রাশিয়া

চূড়ান্ত মুহূর্তের আগে আলোচনার বার্তা ক্রেমলিনের।। ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলের ডাক পুতিনের

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

কিয়েভের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হোসটোমেল বিমানঘাঁটি দখল করে নিয়ে ইউক্রেন সরকারের প্রাণকেন্দ্রের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, ২০০ হেলিকপ্টার এবং ট্রুপার পাঠিয়ে ওই বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পশ্চিম দিক দিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে কিয়েভ। এদিকে কিয়েভ দখলের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার পর ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশে আলোচনায় বসতে তারা প্রস্তুত। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের বরাত দিয়ে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা রিয়া নোভোস্তি গতকাল এ খবর দিয়েছে। এর আগে আগ্রাসন শুরুর পরদিনই ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার ডাক দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। টিভিতে সম্প্রচারিত রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকের ভাষণে পুতিন এই ডাক দেন।
এই অভিযানে ইউক্রেনের স্পেশাল ইউনিটের ২০০ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং রাশিয়ার কেউ মারা যায়নি বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি। বিবিসি লিখেছে, এ বিষয়ে ইউক্রেন সরকারের ভাষ্য এখনও জানা যায়নি। সংবাদমাধ্যমগুলো রাশিয়ার দাবি যাচাইও করতে পারেনি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের সব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অকার্যকর করে দেওয়ায় হোসটোমেল বিমানঘাঁটিতে সৈন্য নামানো সম্ভব হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকেই রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল রাশিয়া। তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে গতকাল রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়ে। বিকেলে এক টুইটে ইউক্রেনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের শত্রুরা পৌঁছে গেছে ওবোলন এলাকায়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট থেকে ওই এলাকার দূরত্ব ৯ কিলোমিটারের মত। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দপ্তর তখনও স্থানীয়দের উৎসাহ দিচ্ছিল, তারা যেন মলোটভ ককটেল বানিয়ে রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধের লড়াইয়ে যোগ দেয়। পাশাপাশি তাদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের টুইটে বলা হয়, শান্তিপ্রিয় বাসিন্দারা, সতর্ক থাকুন, নিজের বাড়ি ছেড়ে যাবেন না!
আলোচনার বার্তা : দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, আলোচনা করতে চাইলে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে তা হতে পারে। তবে শর্ত হল, এই আলোচনা হবে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে, যার মধ্যে দেশটির বেসামরিকীকরণের কথাও থাকবে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ ইউক্রেইন নেটো সামরিক জোটের সদস্য হতে চায়; যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় মিত্ররাও তাতে মোটামুটি রাজি। কিন্তু প্রতিবেশী বড় দেশ রাশিয়ার তাতে ঘোর আপত্তি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানালেও পুতিনের কাছ থেকে কখনও সাড়া মেলেনি।
বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেইন সঙ্কটের এই সময়ে আরেক প্রতিবেশী দেশ বেলারুশের রাজধানী মিনস্ক এখন আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘাত থামানোর জন্য এই মিনস্কেই সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছিল। এখন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে সেই চুক্তি ভঙ্গ করলেন পুতিন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এর আগে বলেছিলেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ না করলে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না রাশিয়া।
সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলের ডাক পুতিনের : আগ্রাসন শুরুর পরদিনই ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার ডাক দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। টিভিতে সম্প্রচারিত রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকের ভাষণে পুতিন এই ডাক দেন।
তিনি বলেন, আমি আরও একবার ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সেনা কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে বলছি, ‘নব্য-নাৎসি’ এবং ‘উগ্র ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদেরকে’ আপনাদের স্ত্রী, সন্তান এবং বৃদ্ধ মানুষদের মানব-ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে দেবেন না। আপনাদের নিজেদের হাতে ক্ষমতা তুলে নিন। তাহলে কিয়েভের মাদকাসক্ত এবং নব্য-নাৎসি চক্রের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে বরং আপনাদের সঙ্গে কথা বললে চুক্তিতে পৌঁছানো সহজ হবে।
ভাষণে ইউক্রেন সরকার এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ব্যঙ্গ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন রুশ-বিরোধী বাহিনী ‘ব্যান্ডেরাইট’ এবং নব্য-নাৎসি আখ্যা দিয়ে পুতিন আরও বলেছেন, কিয়েভ ও খারিকভসহ বহু শহরে তারা রকেট লাঞ্চার সিস্টেমসহ ভারি অস্ত্রশস্ত্র রেখেছে। তারা বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসীদের মত আচরণ করছে। সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে শান্তিকামী মানুষকে হত্যার অভিযোগ তুলছে। এসবই যে বিদেশি পরামর্শদাতা, সর্বোপরি আমেরিকান উপদেষ্টাদের সুপারিশে ঘটছে সেটি নিশ্চিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুলিশের মোবাইল ছিনিয়ে পালানোর সময় ধরা
পরবর্তী নিবন্ধচারদিকে সাইরেনের শব্দ, আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন