দুই হেভিওয়েট প্রার্থী নিয়ে আ. লীগে দ্বিধা বিভক্তি

শফিউল আজম, পটিয়া | বৃহস্পতিবার , ২৩ মে, ২০২৪ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপের পটিয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেন পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ (আনারস) ও তার চাচা চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার (দোয়াতকলম)। গত ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটারদের মাঝে তাদের প্রতীক ও নিজেদের পরিচয় তুলে ধরে পটিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন। বিভিন্ন নির্বাচনী সভা সমাবেশে চলছে কথার লড়াই ও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার নানা কৌশলও।

এদিকে পটিয়া উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে পটিয়ায় আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম দ্বিধা বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষেবিপক্ষে পুরো পটিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। স্পষ্ট দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে নেতাকর্মী। নির্বাচন নিয়ে কিছু নেতাকর্মী তাদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও অধিকাংশ নেতাকর্মী তাদের অবস্থান নিয়ে এখনো দুটানায় রয়েছে। দলীয় বিভক্তির রেশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক তীর ছুঁড়ছেন। বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা ও সভা সমাবেশে এক প্রার্থী অপর প্রার্থীকে ঘায়েল করার জন্য পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য রেখে মাঠ গরম করছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ (আনারস) প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তার পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরী। অপরদিকে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর আলম দোয়াতকলম প্রতীকের প্রার্থী দিদারুল আলমের পক্ষে মাঠে থাকলেও সাধারণ সম্পাদক কাজ করছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী হারুনের পক্ষে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদির অনুসারীরাও আনারস প্রতীকের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের এ বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় বিভক্তির রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিভক্তি দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগে।

এদিকে এ নির্বাচনকে ঘিরে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে এ দুই নেতার অবস্থানের কথা। তারা নিজেরা স্পষ্ট কিছু না বললেও ভোটের মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী দোয়াতকলম প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী সমর্থন দিচ্ছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থীকে।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী জানান, দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমপি ও মন্ত্রীদের কাউকে সমর্থন দিতে কেন্দ্র থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবুও নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলমকে সমর্থন দিয়ে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি মাঠে গোপনে কাজ করার কথা বেশ জোরেসোরে শোনা যাচ্ছে। তিনি বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতিসাধারণ সম্পাদককে ফোন করে দিদারুল আলমের পক্ষে কাজ করতে চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিপরীতে নির্বাচন নিয়ে এতদিন ধরে সাবেক সংসদ সদস্য হুইপ শামসুল হক চৌধুরী তেমন সক্রিয় না থাকলেও কয়েকদিন আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে ঝুলন দত্ত (চশমা) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরুকে (কলস) সমর্থন দেয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পটিয়ায় দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের দুই বলয় এবার মুখোমুখি হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনেও। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী ও দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় দলের পাঁচ নেতা মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। তবে এরমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। দুই প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। সভাসমাবেশে উত্তপ্ত বক্তব্যে গরম করছেন নির্বাচনী মাঠ।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরী জানান, পটিয়ায় আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি নেই। দলের উপজেলার সাধারণ সম্পাদক যেখানে উপজেলায় প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন সেখানে আমি তার পক্ষে কাজ করছি। আরো অনেক নেতাকর্মী অধ্যাপক হারুনের আনারস প্রতীকের হয়ে কাজ করছেন। তিনি একজন পরীক্ষিত ও যোগ্য লোক। উড়ে এসে জুড়ে বসে টাকার জোরে নির্বাচনী মাঠকে প্রভাবিত করার সুযোগ দেয়া হবে না কাউকে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো নেতাকর্মীকে হুমকি ধমকি দিয়ে এবং ফোনে চাপ প্রয়োগ করলে জনগণ ও নেতাকর্মীরা তা কোনোভাবে মেনে নেবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়ার সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, স্থানীয় কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিধি নিষেধ রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে এ মুহূর্তে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অপারাগত প্রকাশ করছি। তারপরও তো নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে আপনার সম্পৃক্ততার কথা বলছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নো কমেন্টস’।

জানতে চাইলে সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরী বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার পর প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য বলেছেন। কিন্তু পটিয়ায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে চরম দ্বন্দ্ব, অনৈক্য ও বৈরী পরিবেশ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় দলের ঐক্যের স্বার্থে একজন যোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক হারুন রশীদকে আমি সমর্থন দিয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুরোদমে উৎপাদনে খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র
পরবর্তী নিবন্ধনতুন সমীকরণে কার লাভ, কার ক্ষতি