কার জোরে ওরা অনাচারের ভিডিও সামাজিক মিডিয়ায় ছড়ানোর সাহস পায়

শামীম ফাতেমা মুন্নী | বৃহস্পতিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ – একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম, এক টুকরো সবুজ শ্যামল মায়া ভরা মাটির লাল সবুজের পতাকার নাম।
এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশ সত্তর বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ছোট্ট ভূখণ্ডটির জনসংখ্যা প্রায় ষোলো কোটি তেরো লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার সাতশত আট জন। যার ৫০.৬% পুরুষ এবং ৪৯.৪% নারী। পুরুষের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজ করে চলেছে নারীরাও।
জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ পুরুষ যেমন প্রাণ দিয়েছেন, তেমনি লক্ষ লক্ষ নারীও প্রাণ দিয়েছেন, সাথে অমানুষিক নির্যাতন সয়ে সম্ভ্রম। এই স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকায় সমান অবদান আছে নারী- পুরুষ- শিশু নির্বিশেষে সকলেরই। বহুকাল আগে হানাদার বাহিনী ধর্ষণের যে বীজ রোপণ করে গিয়েছিলো এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, আজ সেই অপশক্তির সুনিপুণ ধিকৃত উত্থান মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশে।
আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগের অন্ধকার নেমে এসেছে যেন একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে! কোথায় নেই তারা? কোন রূপে নেই? স্কুল শিক্ষক, মাদ্রাসা শিক্ষক, পবিত্র মসজিদের ইমাম, গীর্জার ফাদার, তরুণ কিশোর- ছাত্র, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা- কর্মী, সমাজের বখে যাওয়া শিক্ষিত যুবক সমপ্রদায়, পরিণত বয়সের উচ্চবিত্ত গোষ্ঠী, আইনের রক্ষকরা, এমনকি জন্মদাতা জনক রূপে– পুরুষের প্রতিটা চরিত্রের ভেতরেই কি একজন অমানুষ ধর্ষক ওৎ পেতে লুকিয়ে থাকে? উচ্চ ডিগ্রিধারী থেকে শুরু করে গ্রাম্য চেয়ারম্যানের মূর্খ পুত্র – আত্মীয়অনাত্মীয়, ছাত্র নামধারী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ছাত্রাবাস দখলকারীরা, অনায়াসে লোলুপ জিহ্বা বাড়িয়ে দেয় নারী দেখলেই, বিবেক বোধ লোপ পেয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে মেতে ওঠে বিকৃত যৌনাচারে। সে মুহূর্তে বিস্মৃত হয় নিজেদের মা- বোন – কন্যা- স্ত্রীর কথা! বেগমগঞ্জের সেই নারী ওদের বাবা ডেকেও রেহাই পায়নি ঐ নির্মম মুহূর্তগুলোতে। কার জোরে, কিসের প্রভাব প্রতিপত্তিতে ওরা বড়াই করে ঘটনার এতদিন পরে অনাচারের ভিডিও সামাজিক মিডিয়ায় ছড়ানোর সাহস পায়?
ইদানীং আরো একটি প্রবণতার সয়লাব হয়েছে – একজন নয়, পশ্চিমা পর্ণ সংস্কৃতি দেখে দেখে দলবল নিয়ে গণধর্ষণে মেতে ওঠা নষ্ট প্রজন্মের বেহায়া উল্লাসে আতংকিত দেশ। একজন নারী, একজন শিশু কোথাও নিরাপদ নয় এখন আর — উচ্চবিত্ত সমাজের শাজরীন থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত তনু, রূপা, বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধা, স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে বেরুনো নববধূ, বেগমগঞ্জের অসহায় মহিলাটি, পাহাড়ের প্রতিবন্ধী কিশোরী, বাস যাত্রী গার্মেন্টসকর্মী মেয়েটি, একসাথে ধর্ষিত বিধ্বস্ত মা – মেয়ে, ফুল বিক্রেতা ছোট কন্যা শিশুটি, ধর্ষণের পর সাত বছরের শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, ব্লেড দিয়ে যোনী কাটা তিন বৎসরের শিশু কন্যাটি, কোচিং-এ যাওয়া কিশোরীটি, ফাদারের কাছে তিনদিন ধরে নির্যাতিতা তরুণীটি — এসব তো সমপ্রতি ঘটে যাওয়া কিছু অমানবিক ধর্ষণের প্রকাশিত চিত্র শুধু, অপ্রকাশিত থেকে গেছে এর সহস্র গুণ বেশি! অথচ এখনকার নারী সমাজ কেউ বসে নেই, বেকার নেই। স্বাবলম্বী হয়ে পুরুষের পাশাপাশি সংসারে কম- বেশি অবদান রেখে চলেছে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানুল কারীমে মায়ের জাতিকে সম্মান দিয়েছেন, স্বীকৃতি দিয়েছেন ‘সন্তানের কাছে থাকার অধিকার সর্বাগ্রে মায়ের’ –জনৈক সাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ (স) ‘মা’ ডাকের পর চতুর্থ বারে বাবার স্থান নিশ্চিত করেছেন: মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত, নারী- পুরুষ একে অপরের ভূষণ, পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী, জীবনের এক বিশাল শোককে শক্তিতে পরিণত করে তিনি তাঁর যোগ্যতাবলে বাঙালি জাতির অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনি তাঁর প্রমাণ ও দিয়েছেন অসংখ্যবার। আমরা আজ বাংলাদেশের সমস্ত নারী এদেশের প্রতিটি নারীর নিরাপত্তার ভার নিশ্চিত করতে অনন্যোপায় হয়ে তাঁর কাছেই আবেদন জানাই- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন এভাবেই যত দ্রুত সম্ভব, সামপ্রতিককালে ঘটে যাওয়া সমস্ত লোমহর্ষক ধর্ষণের ঘটনাপ্রবাহ অবলোকন করে সময়ক্ষেপণ না করে প্রতিজন ধর্ষককে অবিলম্বে গ্রেফতারের আদেশ দিয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করুন প্রকাশ্যে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় যেন সময় নষ্ট না হয়, তদন্তের প্রহসনে কালক্ষেপণ করে একজন ধর্ষণকারীও যেন পার না পায় সেদিকে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করুন।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমরা মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল